Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

২০১০ : ইনিয়েস্তার ভলিতেই ইতিহাস

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আফ্রিকা মহাদেশে একবারই ফুটবল বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দক্ষিন আফ্রিকায় সেই আসর বসেছিল ২০১০ সালে। শিরোপার শেষ লড়াইয়ে পূর্বের দুইবারের রানার্স-আপ নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হয়েছিল প্রথমবারের মত ফাইনালে উঠা স্পেন। নির্ধারিত সময়ের খেলা গোলশূন্য ড্র থাকার পরে, ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। যখন সবাই মনে হচ্ছিল পূর্বের আসরের মত ফাইনাল টাই-ব্রেকারে গড়াবে তখনই চমক। আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা ১১৬ মিনিতের সময় গোল করে বসেন স্পেনের পক্ষে। তখন ধারাভাষ্যকার বলে উঠেন, ‘এখন নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, প্রথম্বারের মত স্পেন বিশ্বকাপ শিরোপা জিত্তে যাচ্ছে!’
প্রতিপক্ষের ডি-বক্স থেকে ক্ষীপ্রতার সঙ্গে নাভাসের টেনে আনা বল যখন তোরসে ও ফ্যাব্রিগাস হয়ে ইনিয়েস্তার পায়ে যায়, তখন এই বার্সা কিংবদন্তীর মাথায় কি চলছিল? ইনিয়েস্তার ক্লান্ত শরীরের উপর সেটি কি চরম মানসিক চাপ সৃষ্টি করেনি? পরে এক সাক্ষাৎকারে ইনিয়েস্তা বলেন, ‘বলটি যখন আমার কাছে এসেছিল, আমি জানতাম যে এটি এখন বা কখনই নয় মুহুর্ত। আমরা এই মুহূর্তে হয় বিশ্বকাপ জিতব, তথবা আমরা কখনই তা পারব না।’ সেই ম্যাচে মূল্যবান যে কয়েকটি সুযোগ এসেছিল তার মাঝে সেটি ছিল একটি। তবে ইনিয়েস্তা স্পেনের ফুটবলের ইতিহাসের সেরা উপহারটি দেয়, সেই আকস্মিক সুযোগ থেকে। ফ্যাব্রেগাস বলটি দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় পাস দেওয়ার পর, তাৎক্ষণিক ভাবে প্রথম টাচে সেটি নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি ইনিয়েস্তা। লা রোজাদের যদি প্রথমবারের মতো ট্রফি জিততে হয়, সেটিও টাইব্রেকের যন্ত্রণা এড়িয়ে, তাহলে ইনিয়েস্তাকে গোল করতেই হতো। প্রথম টাচে বল বাউন্স করে, নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার আগেই ভ্যান ডার ভার্ট মার্কিং করতে হাজির। তবে ভার্ট ভেবেছিলেন বলটি গড়িয়ে মারবেন স্পেনিশ তারকা। তাই সøাইড ট্যাকেল করে বসেন। আর ইনিয়েস্তা বল মাটি কামড়ানো শটের কথা না ভেবে সরাসরি ভলই করেন। বার্সালোনা তারকা স্মৃতি রোমোন্থন করেন এভাবে, ‘বল আমার পায়ের সাথে লাগার সাথে সাথেই, আমি জানতাম গোলরক্ষকের কোন সুযোগ নেই। সেই মুহূর্তটি নিখুঁত ছিল।’
সাম্প্রতিক সময়ে ফিফাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইনিয়েস্তা জানান, ‘বিশ্বকাপ জিতা এবং বিজয়ী গোল করার সুযোগ পাওয়াটাই বিশাল ব্যাপার। এটি কথায় বর্ণনা করার কোন উপায় নেই। আমি যেভাবে কাজ সম্পাদন করেছিলাম, তা এক কথায় স্বপ্নের মত। এটা একই সঙ্গে ইতিহাস।’ স্প্যানিশ মিডফিল্ডারের ভলি, ডাচ গোলরক্ষক মার্টেন স্টেকেলেনবার্গ হাত ছড়িয়ে দেওয়ার আগেই অরিক্রম করে। তবে ডাচ কিপারের রিফ্লেক্ট কিছুটা ধীরগতীর ছিল। তাছাড়া বলটা ডাচ কিপারের হাতও খানিকটা স্পর্ষ করে। ইনিয়েস্তা সেই গোলের অবদানের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিনয়ীভাবে বলেন, ‘আমি খুব বড় ও কঠিন ম্যাচে একটি ছোট অবদান রেখেছিলাম।’
তার ক্যারিয়ারের সর্বশ্রেষ্ঠ সেই মুহুর্তে, বিশ্বকাপ জয়ী গোল করার পরে, ইনিয়েস্তার দেশের বা নিজের কথা আর চিন্তা করছিলেন না। তখন তিনি তার জার্সি খুলে আন্ডার শার্টে একটি লেখা উন্মুক্ত করেছিলেন। সেখানে লেখা ছিল, ‘দানি জার্ক সর্বদা আমাদের সাথে’। এই দানি ছিল ইনিয়েস্তার খুব কাছের বন্ধু। যিনি এস্পানিওলের হয়ে খেলতেন। ইনিয়েস্তা পরে ব্যাখ্যা করেছিলেন এভাবে, ‘আমরা তার শক্তি অনুভব করতে চেয়েছিলাম। আমরা গোটা ফুটবল বিশ্বের সামনে তাকে শ্রদ্ধা জানাতে চেয়েছিলাম এবং গোল করে সেই সেরা সুযোগ পেয়ে যাই।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ