Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

২০১৪ : অতিআবেগই কাল হয়েছিল আত্মবিশ্বাসী ব্রাজিলের

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ভাবতে গেলে সবার আগে চলে আসে সেমিফাইনাল। যেখানে জার্মানির কাছে স্বাগতিকরা ৭-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল। ঘরের মাঠে যেকোন টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে কোনো দল যদি ৭টি গোল হজম করে, সেটা একটা হতশ্রী ব্যাপার। তবে আসরটা যদি বিশ্বকাপ হয় আর দলটা ব্রাজিল, তাহলে এক হাতের আঙুলের চেয়ে বেশি গোল হজম করাটা লজ্জার ইতিহাসই। মিনেইরাও স্টেডিয়াম সেদিন সেই দুঃস্বপ্নের সাক্ষী হয়েছিল। ফুটবল বিশেষজ্ঞদের ধারণা সেই আসরের শুরুর আগ থেকেই ব্রাজিলিয়ানদের অতি আবেগ কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিশ্বকাপের সবচেয়ে সফল দলটির জন্য।
টমাস মুলারের সেই ঐতিহাসিক ম্যাচে প্রথম গোলটি ছিল আন্তর্জাতিক ফুটবলে জার্মানদের ২০০০তম গোল। সেই মাইলফলকটি যখন জার্মানি স্পর্ষ করেছিল ২০১৪ সালের সেমিফাইনালে, তখন সেটাকে খুব একটা গুরুত্বের সঙ্গে গণনা করা হয়নি। ম্যাচ শেষে বহু রেকর্ড জমা হলো, দুই দেশের বহু গুরুত্বপূর্ন খেলোয়াড়ের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেল এবং কোনো স্বাগতিক দেশ বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধাক্কার খেল।
ব্রাজিলের উপর ফিলিপ লামের দল যখন ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছিল তখন মনে হচ্ছিল এই বিত্রিত খুনে চিত্রনাট্য বাস্তবায়নের জন্যই মাঠে নেমেছিল ১১ জন জার্মান। মুলারের ১১তম মিনিটে গোল করার পরও ম্যাচ থেকে ঠিক ছিটকে যায়নি স্বাগতিকরা। তবে ২৩ মিনিটে মিরোসøাভ ক্লোসা দ্বিতীয় গোল করে বিশ্বকাপের স্কোরারের তালিকায় শীর্ষে উঠে যান, ব্রাজিল সুপারস্টার রোনালদোর ১৫ গোলে টপকে। ক্লোজার সেই গোলের পরে, ৬ মিনিটের মধ্যে স্কোরলাইন ৫-০ শ‚ন্য হয়ে যায়। গোটা স্টেডিয়ামই নীরব। ফাইনালের যাওয়ার নিশ্চয়তা বা প্রতিপক্ষকে গোলবন্যায় ভাসানোর আনন্দ যেন জার্মানদেরও স্পর্ষ করছিল না। করবে কি করে? গোটা মাঠটাই যেন গোরস্তানে রূপান্তরিত হয়েছিল। সেদিন জার্মানি তাদের আন্তর্জাতিক গোল শেষ পর্যন্ত ২০০৬ পর্যন্ত টেনে নেয়। স্বাগতিক একষট্টি হাজার দর্শক যেন মাঠে থেকেও নেই, ব্রাজিলের ফুটবলাদের দেখে মনে হচ্ছিল তারা দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। খেলার অন্তিম মুহ‚র্তে অস্কার একটি গোল শোধ দেয় বটে তবে তা ক্ষতে আরও যন্ত্রণাই বাড়িয়েছিল কেবল।
টুর্নামেন্টের শুরুতে স্বাগতিক ব্রাজিলের জনগণের বিশ্বাস ছিল তারা বিশ্বকাপ যেভাবেই হোক জিতবে। পুনরুদ্ধার করবে বিশ্বসেরার শিরোপা। গোটা দেশে একটা পর্তুগীজ বাক্য উচ্চারিত হচ্ছিল যার বাংলা হচ্ছে, দনিজের উপর বিশ্বাস রাখো, ৬ নাম্বার আসছে।দ নেইমার-হাল্করা ক্রোয়েশিয়াকে উদ্বোধনী ম্যাচে ৩-১ ব্যবধানে পরাজিত করার পর সেই বিশ্বাস আরও জোরদার হয়। স্বাগতিকদের শুরুটা বেশ দাপুটে হওয়ার কারণেই সেই বিশ্বাস। গ্রæপ পর্বের বাকি অংশটি মোটামুটি স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে পারকরে সেলেসাওরা। তবে তাদের আবেগটা যতটা খেলার আগে বা বাহিরে দেখা যেত ঠক ততটা মাঠের ফুতবলে প্রতিফলিত হচ্ছিল না। ম্যাচের আগে জাতীয় সঙ্গীতের সময় সেলেসাও ফুটবলারদের অশ্রু বিসর্জিত হতে দেখে কিছু পর্যবেক্ষক শংকায় পরে যায়। তাদের দাবি ছিল এই আবেগটার ম‚ল্য লুইজ ফেলিপ স্কোলারির দলকে খুব বাজেভাবে দিতে হতে পারে।
শেষ ষোলতে চিলিকে পরাস্ত করতে যখন ব্রাজিলের টাইব্রেক পর্যন্ত যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে তখন বিশেষজ্ঞদের সেই কণ্ঠস্বর আরও জোরদার হয়। কলম্বিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে জয়টাও খুব দাপ্টের সাথে আসেনি ব্রাজিলের। তাছাড়া নেইমার সেই ম্যাচে ইঞ্জুরিতে পড়ে এবং এই উইঙ্গারের প্রতিযোগিতা সেখানেই শেষ হয়ে যায়। একই সঙ্গে ব্রাজিলের সেরা ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভা সেই ম্যাচে হলুদ কার্ড দেখাতে, সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা হারান কার্ড নিয়মে।
নেইমার ও থিয়াগোর পরিবর্তে জার্মানির বিপক্ষে খেলেছিলেন বার্নার্ড ও দান্তে। এই দুই বদলি ফুটবলারকে মেনেইরাও স্টেডিয়ামের সেই হতশ্রী রাতের পর দেশের জন্য আর বিবেচনা করেনি কোনো ম্যানেজার। ব্রাজিলায়নদের মতে তারা ইতিমধ্যেই ৫টি বিশ্বকাপ জয়ী, সামনে আরও জিতবে। কিন্তু কোনদিনই তারা সেই রাতের দুঃস্মৃতি ভুলতে পারবে না।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্রাজিল


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ