Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশা আম্বিয়ায়ে কেরামের জীবন থেকে

মাওলানা হুজ্জাতুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আল্লাহ তা’আলা নবীগণের হৃদয়ে অসীম ইয়াকীন ও বিশ্বাসের সম্পদ দান করেন। নবীগণের সীরাতের প্রতি লক্ষ্য করলে আমরা আল্লাহ তা’আলার রহমতের প্রতি গভীর ও অটুট বিশ্বাসের অনন্য দৃষ্টান্ত দেখতে পাই, আদম (আ.) ইবলিসের চক্রান্তে জান্নাত থেকে হঠাৎ অজানা-অচেনা পৃথিবীতে নেমে এলেন। কিন্তু তিনি একমনে আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে থাকেন এবং আপন দায়িত্ব পালনে রত থাকেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁকে রহমতের চাদরে আচ্ছাদিত করে নেন। (সূরা বাকারা : ৩৫-৩৭; সূরা আরাফ : ১১-২৫)।

ইউনুস (আ.) মাছের পেটে কী গভীর বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহকে ডাকতে থাকলেন। আল্লাহর রহমতে শেষ পর্যন্ত তিনি মাছের পেট থেকে জীবন নিয়েই বেরিয়ে আসেন। (সূরা আম্বিয়া : ৮৭-৮৮)। ইবরাহিম (আ.) কে আগুনে ফেলে দেয়া হল। অদ্ভুত অবিচলতার পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীনও যথাযোগ্য পুরস্কারে ভূষিত করেছিলেন তাঁকে সর্বসমক্ষে। চরম বিস্ময় নিয়ে নমরুদ ও নমরুদের গোষ্ঠী সেদিন দেখেছিল, আগুন ইবরাহিমের লেশমাত্র ক্ষতি করছে না। (সূরা আম্বিয়া : ৬৮-৭০)।

ফেরাউনের জুলুম থেকে বাঁচাতে মূসা (আ.) বনি ইসরাইল সম্প্রদায়কে নিয়ে রাতের অন্ধকারে মিসর থেকে বেরিয়ে এলেন। ফিলিস্তিন যাওয়ার রাস্তা ছিল দুটি । স্থলপথ ও সমুদ্রপথ। স্থলপথে দূরত্ব কম, সমুদ্রপথে দূরত্ব বেশি। কিন্তু মূসা (আ.) সমুদ্রপথ অতিক্রম করে যাওয়ার ইচ্ছা করেন। কিন্তু ফেরাউনগোষ্ঠী তাদের গতিবিধি টের পেয়ে যায়। পিছনে ধাওয়া করে এসে সমুদ্র অতিক্রমের আগেই তাদের নাগাল পেয়ে যায়।

বেগতিক অবস্থা দাঁড়ায় তখন, সামনে বিশাল সমুদ্র আর পেছনে শত্রুর বহর! জুলুমের আশ্রয় নিয়ে বছরের পর বছর গোলামির জিঞ্জিরে আটকে রেখেছিল মিসরীয়রা বনি ইসরাইলকে। মূসার বদৌলতে গোলামির লাঞ্ছনা থেকে মুক্তির যে আশাটুকু জেগেছিল তা-ও শেষ হয়ে গেল। হতাশার আওয়াজ শোনা গেলÑ ‘আমরা তো ধরা পড়ে গেলাম’। কিন্তু মূসা (আ.) লোহিত সাগরের তীরে তাঁর প্রত্যয়দীপ্ত কণ্ঠ ধ্বনিত হল কিছুতেই নয়, আমার রব আমার সঙ্গে আছেন। তিনি অবশ্যই আমাকে পথ দেখাবেন। (সূরা শুআরা : ৬২)।

মূসার রব সত্যিই মূসাকে পথ দেখিয়েছিলেন। সেদিন পৃথিবী অবাক হয়ে দেখেছিল, লোহিত সাগরের পানি দু’পাশে সরে গিয়ে মাঝখানে পথ তৈরি হয়ে গেছে। (সূরা শুআরা : ৬২)। আইয়ূব (আ.) দীর্ঘ অসুস্থতা সহ্য করে যাচ্ছিলেন। এত দীর্ঘ অসুস্থতায় সাধারণ কারো পক্ষে নিরাশ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি অনড় বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করে যাচ্ছিলেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন একসময় তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে তাঁকে পূর্ণ সুস্থতা দান করেন। (সূরা আম্বিয়া : ৮৩-৮৪)।

যাকারিয়া (আ.) বার্ধক্যে পৌঁছে গিয়েছিলেন। সন্তান জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না তাঁর স্ত্রীর। একদিন মারইয়াম আলাইহাস সালামের কাছে গিয়ে দেখেন অসময়ের ফল। মৌসুম ছাড়া মৌসুমী ফল দেখে তার মনে জেগে ওঠে- আল্লাহ তো আপন রহমতে আমাকে এই অসময়েও সন্তান দান করতে পারেন। আল্লাহর দরবারে তিনি সন্তান প্রার্থনার জন্য হাত বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সকল সীমাবদ্ধতা দূর করে তাঁকে সন্তান দান করেন। (সূরা আলে ইমরান : ৩৭-৪১)।

মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করে যাওয়ার সময় কাফেরেরা ছাওর গুহার কাছাকাছি পৌঁছে গেলে আবু বকর (রা.) কিছুটা চিন্তিত হন। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন শান্ত সমাহিত। পূর্ণ ইয়াকীনের সঙ্গে তিনি অভয় জানালেন : উদ্বিগ্ন হয়ো না। আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন। (সূরা তাওবা : ৪০)।

ইয়াকুব (আ.)-এর নববী প্রজ্ঞাময় উপদেশ ও কর্মনীতি এবং উপরিউক্ত অন্যান্য নবীগণের ঘটনাবলি থেকে আমরা শিক্ষা পাই, মুমিনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো, আল্লাহর রহমতের আশা ও একনিষ্ঠ প্রচেষ্টা। বরং প্রত্যাশা ও একনিষ্ঠ প্রচেষ্টাই মোমিন জীবনের একমাত্র অবলম্বনীয় ও করণীয়।

জীবনে আমরা নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হই। শত আকাক্সক্ষা ও প্রচেষ্টা সত্ত্বেও অপ্রাপ্তির বেদনা আমাদের আশাহত করে। দীর্ঘ অসুস্থতা ও জটিল রোগ-ব্যাধিতে আমরা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ি। সমাজের অন্যায়, অনাচার ও অবিচার আমাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটায়। কখনো বিপদের প্রবল ঝড় আমাদের স্বপ্নের পৃথিবী তছনছ করে দিয়ে যায়। প্রত্যাশার শেষ রশ্মিটুকু মুছে গিয়ে জীবনে নেমে আসে হতাশার ঘন কালো অন্ধকার।

কোরআনে কারিম তখন প্রত্যাশার আলোকবর্তিকা হয়ে আমাদের পথের দিশা দেয়। নিরাশার সব অন্ধকার বিদীর্ণ করে জ্বলে উঠে কোরআনের দীপ্ত মশাল : আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় কেবল সেই লোকেরাই, যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখে না। (সূরা ইউসুফ : ৮৭)।



 

Show all comments
  • salman ১৩ নভেম্বর, ২০২২, ৪:২২ এএম says : 0
    Allah hu Akbar. Allah is GREAT
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন