Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জান্নাতীরা জান্নাতে যা চাইবে তাই পাবে

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আল্লাহ রাব্বুল মুত্তাকীদের জন্য এবং আল্লাহ অভিমুখীদের জন্য ও আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থার হেফাজতকারীদের জন্য জান্নাত লাভের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে ইরশাদ করেছেন : আর জান্নাতকে মুত্তাকীদের নিকটস্থ করা হবেÑ কোনো দূরত্বে থাকবে না। প্রত্যেক আল্লাহ অভিমুখী (আউয়্যাব) ও হেফাজতকারীদের জন্য এই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। (সূরা ক্কাফ : ৩১-৩২)।

এখানে তিন শ্রেণীর বান্দাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক জান্নাত লাভের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যথা : (ক) মুত্তাকীদের জন্য। এদের পরিচয় প্রদান করে আল্লাহ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেছেন : যারা গায়েব অবস্থায় দয়াময় আল্লাহকে ভয় করেছে এবং বিনীত চিত্তে (আল্লাহর হুকুম পালনে) উপস্থিত হয়েছে। (সূরা ক্কাফ :-৩৩)। (খ) ‘আউয়্যাব’ অর্থাৎ আল্লাহ অভিমুখীদের জন্য।

মোটকথা, জান্নাতের প্রতিশ্রুতি প্রত্যেক আউয়্যাব (আল্লাহ অভিমুখী)-এর জন্যে রয়েছে। এই আউয়্যাব শব্দের অর্থ অনুরাগী, অভিমুখী এবং এমন ব্যক্তি যে নাফরমানী ও প্রবৃত্তির আকাক্সক্ষা চরিতার্থ করার পথ পরিহার করে আনুগত্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পথ অবলম্বন করেছে। আল্লাহর পছন্দ নয় এমন প্রতিটি জিনিস পরিত্যাগ করে এবং আল্লাহ যা পছন্দ করেন তা গ্রহণ করেছে।

বন্দেগীর পথ থেকে পা সামান্য বিচ্যুত হলেই যে বিচলিত বোধ করে এবং তাওবাহ করে বন্দেগীর পথে ফিরে আসে। যে অধিক মাত্রায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের সমস্ত ব্যাপারে তাঁর স্মরণাপন্ন হয়। সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা’য়ালার প্রতি অনুরক্ত হয়। মুফাস্সেরীনদের অনেকেই বলেছেন ; যে ব্যক্তি নির্জনতায় গোনাহ স্মরণ করে ও ক্ষমা প্রার্থনা করে সেই আউয়্যাব বা আল্লাহ অভিমুখী। (তাফসীরে ইবনে কাসির, ফাতহুল ক্বারীর)।

(গ) আর হেফাযতকারীদের জন্য। বস্তুত: হেফাযতকারী তারাই, যারা নিজেদের দেহ ও মনকে গায়রুল্লাহর সংস্পর্শ হতে বিমুক্ত রাখে। আল্লাহর দেয়া সীমারেখা মেনে চলে। আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তু হতে দূরে থাকে। পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন বিধানকে কায়মনে অনুসরণ করে চলেছে। এই তিন শ্রেণীর বান্দাদের খোশ খবরী প্রদান করা হয়েছে। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : তাদেরকে বলা হবে, শান্তির সাথে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর, এটা অনন্ত জীবনের দিন। এখানে তারা যা কামনা করবে তা-ই থাকবে এবং আমার কাছে রয়েছে আরো বেশি। (সূরা ক্কাফ :৩৪-৩৫)।

এতে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, জান্নাতীরা জান্নাতে যা চাইবে, তাই পাবে। চাওয়া মাত্রই তা’ সামনে উপস্থিত দেখতে পাবে। বিলম্ব ও অপেক্ষার বিড়ম্বনা সইতে হবে না। পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেনÑ জান্নাতে কারো সন্তানের বাসনা হলে গর্ভধারণ, প্রসব ও সন্তানের কায়িক বৃদ্ধি এগুলো সব এক মুহূর্তের মধ্যেই নিষ্পন্ন হয়ে যাবে। (মুসনাদে আহমাদ : ৩/৯; জামে তিরমিজী : ২৫৬৩; সুনানু ইবনে মাজাহ : ৪৩৩৮)।

শুধু তাই নয়, আল্লাহপাক এই প্রতিশ্রুতিও প্রদান করেছেন যে, আমার কাছে তার ও বেশি রয়েছে। অর্থাৎ তারা যা চাইবে তাতো পাবেই। কিন্তু আমি তাদের আরো এমন কিছু দেব, যা পাওয়ার আকাক্সক্ষা করাত দূরের কথা, তাদের মন-মগজে তার কল্পনা পর্যন্ত উদিত হয়নি। কারণ, আমার কাছে এমন নেয়ামত আছে, যার কল্পনাও মানুষ করতে পারে না। ফলে তারা এগুলোর আকাক্সক্ষা ও করতে পারবে না।
হাদীসে কুদসীতে উক্ত হয়েছে, পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আল্লাহ পাক বলেন, আমি আমার বান্দাদের জন্য এমন কিছু নেয়ামত রেখেছি, যা কোনো চক্ষু কোনো দিনে দেখেনি, কোনো কান কোনোদিন শুনেনি, এমন কি কোনো মানুষের অন্তরে ও তা’ উদিত হয়নি। (সহীহ মুসলিম : ২৮২৪)।

এতদ¦প্রসঙ্গে হযরত আনাস বিন মালেক (রা.) ও হযরত জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা.) বলেন : এই বাড়তি নেয়ামত হচ্ছে আল্লাহ তা’য়ালার দীদার, দর্শন ও সাক্ষাৎ, যা জান্নাতীরা লাভ করবে। হাদীসে কুদসীতে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যখন জান্নাতীরা জান্নাতের প্রবেশ করবে, তখন মহান আল্লাহপাক বলবেন : তোমরা কি বর্ধিত কিছু চাও? তারা বলবে, আপনি কি আমাদের চেহারা শুভ্র করে দেননি? আপনি কি আমাদের জান্নাতে প্রবেশ করাননি? এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেননি? রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : তখন পর্দা খুলে দেয়া হবে। তখন তারা বুঝতে পারবে, তাদের তাদের প্রতিপালক আল্লাহর দিকে তাকানোর নেয়ামতের চেয়ে বড় কোনো নেয়ামত দেয়া হয়নি। আর এটাই হলো, বর্ধিত বা বাড়তি নেয়ামত। (সহীহ মুসলিম : ১৮১)।



 

Show all comments
  • ম নাছিরউদ্দীন শাহ ১২ নভেম্বর, ২০২২, ১২:৪৪ পিএম says : 0
    পৃথিবীতে আল্লাহ্ তার রাসুস(সাঃ) ভালোবাসা পাওয়ার জন্যে নির্জনে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। চুখের পানি পেলেন সেজদায় পড়ে ঈমান ইজ্জত রক্ষা করার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে প্রতিনিয়ত যাহার করুনা দয়াই জীবন মৃত্যু যার করুনা দয়া প্রতিটি শ্বাস প্রশ্বাস জীবন মৃত্যুর মালিক আল্লাহর শোকরিয়া শেষ করা যাবেনা। পরাক্রমশালী আল্লাহর দুনিয়ার ক্ষুদ্র জীবন দেখতে দেখতে জীবনের অর্ধশতাদ্বী পার করিয়া দিয়েছি। জীবনের সামন‍্য কয়টি দিন বাকী।জান্নাতের নিয়ামত প্রাপ্তদের আল্লাহর মকবুল বান্দাদের পবিত্র কোরানের পবিত্র হাদীসের বর্ণনা প্রাপ্তদের তালিকা সুসংবাদ পড়ে অত্যন্ত খুশী হলাম। বতর্মান যুগে আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগের অন্ধকার যুগের চায়তে বেশী মনে হচ্ছে। চারিদিকে জঘন্যতম অপরাধ হচ্ছে। হারাম হালাল পার্থক্য হচ্ছে না। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব‍্যাক্তি থেকে মসজিদের ঈমাম পযর্ন্ত চরম গোমরাহীতে লিপ্ত। ঈমান আকিদা বাচানোর রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রাষ্ট্র সুদের উপর ভাসছে। শহর বন্দর গ্রাম সুদের উপর ভাসছে। সুদের গবেষণায় মুসলমানদের একজন কে শান্তি পরুস্কার দিয়েছেন। বিধর্মীরা। কঠিন কঠোর পরিস্থিতি হক কথা মুসলমানদের এক শ্রেণির কাছে খারাপ লাগবে। শেষ জমানার বেহালা উলঙ্গপনা চরমশিমা অতিক্রান্ত করছে। জান্নাতের নাজ নিয়ামত পাওয়ার আশা মোমেনের জন্যে। জাহান্নামের ভয়ানক ভয়াবহ শাস্তির পরিবেশ পরিস্থিতি প্রতি নিয়ত দেখছি।মানুষ শয়তানের নিকট পরাজিত হয়ে গেছে। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে পেলেছে। মৃত্যুর মত চরম সত্য ভুলে গেছে। কবরের জন্যে আখেরাতের জন্যে হাসরের জন্যে নিজের জন্যে কি করেছি কোন হিসাব নেই?? জ্ঞানীদের জন্যে নিদর্শনের মধ্যে একটি মাত্র উদাহরণস্বরূপ মাথার উপর ১৪কোটি ৭০লক্ষ মাইল দুরে এই ক্ষুদ্র পৃথিবীর থেকে ১৩লক্ষ গুন বড় বিশালাকার এই সূর্য সৃষ্টির শুরু থেকে অদ‍্যবধি আলোকিত করে রেখেছেন পৃথিবী কে। মহান আল্লাহর শোকরিয়া একটু এদিন সেদিক হলে পৃথিবী জ্বলে পুড়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন পবিত্র কোরানে আমার সৃষ্টির কোথাও ভুল খুজে পাবেনা। এইসব জ্ঞানীদের নিদর্শন স্বরুপ। আলহামদুলিল্লাহ্।আল্লাহর পবিত্র নাম মোবারকের মধ্যে একটি নাম রহমানের রাহিম। এই পবিত্র নামের বরকতপূর্ণ নামের উছিলায় আমরা বেচে আছি। আল্লাহ্ আমরাই মহান আল্লাহর দরবারে অত্যন্ত মর্যাদাবান সম্মানিতহিসাবে আখেরাত বিচার দিসবে সম্মান পাব। একটি মাত্র কারণে আমরাই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাহিস সালামের উম্মেমতে মোহাম্মদী। একটি মাত্র আশা বাচার। আমাদের কাছে এলেম জ্ঞান কিছুই নেই। আল্লাহর জমিনে নিকৃষ্ট গুনাহের মাঝে ডুপে গেছি। আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ আল্লাহ আমাদের কে হেদায়াত করুন দয়া করুন। রহম করুন। আল্লাহ্ ক্ষুদ্র জ্ঞান আপনার প্রশংসা করা জ্বীন ইনশান পৃথিবীতে কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আপনি শুধু আপনি বিশ্ব জাহানের মহাপরাক্রমশালী মহাবিজ্ঞানী আল্লাহ। আমাদের ক্ষমা করুন দয়া করুন। আমিন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন