বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আল্লাহ রাব্বুল মুত্তাকীদের জন্য এবং আল্লাহ অভিমুখীদের জন্য ও আল্লাহর দেয়া জীবন ব্যবস্থার হেফাজতকারীদের জন্য জান্নাত লাভের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে ইরশাদ করেছেন : আর জান্নাতকে মুত্তাকীদের নিকটস্থ করা হবেÑ কোনো দূরত্বে থাকবে না। প্রত্যেক আল্লাহ অভিমুখী (আউয়্যাব) ও হেফাজতকারীদের জন্য এই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। (সূরা ক্কাফ : ৩১-৩২)।
এখানে তিন শ্রেণীর বান্দাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক জান্নাত লাভের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যথা : (ক) মুত্তাকীদের জন্য। এদের পরিচয় প্রদান করে আল্লাহ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেছেন : যারা গায়েব অবস্থায় দয়াময় আল্লাহকে ভয় করেছে এবং বিনীত চিত্তে (আল্লাহর হুকুম পালনে) উপস্থিত হয়েছে। (সূরা ক্কাফ :-৩৩)। (খ) ‘আউয়্যাব’ অর্থাৎ আল্লাহ অভিমুখীদের জন্য।
মোটকথা, জান্নাতের প্রতিশ্রুতি প্রত্যেক আউয়্যাব (আল্লাহ অভিমুখী)-এর জন্যে রয়েছে। এই আউয়্যাব শব্দের অর্থ অনুরাগী, অভিমুখী এবং এমন ব্যক্তি যে নাফরমানী ও প্রবৃত্তির আকাক্সক্ষা চরিতার্থ করার পথ পরিহার করে আনুগত্য এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পথ অবলম্বন করেছে। আল্লাহর পছন্দ নয় এমন প্রতিটি জিনিস পরিত্যাগ করে এবং আল্লাহ যা পছন্দ করেন তা গ্রহণ করেছে।
বন্দেগীর পথ থেকে পা সামান্য বিচ্যুত হলেই যে বিচলিত বোধ করে এবং তাওবাহ করে বন্দেগীর পথে ফিরে আসে। যে অধিক মাত্রায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের সমস্ত ব্যাপারে তাঁর স্মরণাপন্ন হয়। সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা’য়ালার প্রতি অনুরক্ত হয়। মুফাস্সেরীনদের অনেকেই বলেছেন ; যে ব্যক্তি নির্জনতায় গোনাহ স্মরণ করে ও ক্ষমা প্রার্থনা করে সেই আউয়্যাব বা আল্লাহ অভিমুখী। (তাফসীরে ইবনে কাসির, ফাতহুল ক্বারীর)।
(গ) আর হেফাযতকারীদের জন্য। বস্তুত: হেফাযতকারী তারাই, যারা নিজেদের দেহ ও মনকে গায়রুল্লাহর সংস্পর্শ হতে বিমুক্ত রাখে। আল্লাহর দেয়া সীমারেখা মেনে চলে। আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তু হতে দূরে থাকে। পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন বিধানকে কায়মনে অনুসরণ করে চলেছে। এই তিন শ্রেণীর বান্দাদের খোশ খবরী প্রদান করা হয়েছে। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : তাদেরকে বলা হবে, শান্তির সাথে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর, এটা অনন্ত জীবনের দিন। এখানে তারা যা কামনা করবে তা-ই থাকবে এবং আমার কাছে রয়েছে আরো বেশি। (সূরা ক্কাফ :৩৪-৩৫)।
এতে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, জান্নাতীরা জান্নাতে যা চাইবে, তাই পাবে। চাওয়া মাত্রই তা’ সামনে উপস্থিত দেখতে পাবে। বিলম্ব ও অপেক্ষার বিড়ম্বনা সইতে হবে না। পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেনÑ জান্নাতে কারো সন্তানের বাসনা হলে গর্ভধারণ, প্রসব ও সন্তানের কায়িক বৃদ্ধি এগুলো সব এক মুহূর্তের মধ্যেই নিষ্পন্ন হয়ে যাবে। (মুসনাদে আহমাদ : ৩/৯; জামে তিরমিজী : ২৫৬৩; সুনানু ইবনে মাজাহ : ৪৩৩৮)।
শুধু তাই নয়, আল্লাহপাক এই প্রতিশ্রুতিও প্রদান করেছেন যে, আমার কাছে তার ও বেশি রয়েছে। অর্থাৎ তারা যা চাইবে তাতো পাবেই। কিন্তু আমি তাদের আরো এমন কিছু দেব, যা পাওয়ার আকাক্সক্ষা করাত দূরের কথা, তাদের মন-মগজে তার কল্পনা পর্যন্ত উদিত হয়নি। কারণ, আমার কাছে এমন নেয়ামত আছে, যার কল্পনাও মানুষ করতে পারে না। ফলে তারা এগুলোর আকাক্সক্ষা ও করতে পারবে না।
হাদীসে কুদসীতে উক্ত হয়েছে, পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আল্লাহ পাক বলেন, আমি আমার বান্দাদের জন্য এমন কিছু নেয়ামত রেখেছি, যা কোনো চক্ষু কোনো দিনে দেখেনি, কোনো কান কোনোদিন শুনেনি, এমন কি কোনো মানুষের অন্তরে ও তা’ উদিত হয়নি। (সহীহ মুসলিম : ২৮২৪)।
এতদ¦প্রসঙ্গে হযরত আনাস বিন মালেক (রা.) ও হযরত জাবের বিন আবদুল্লাহ (রা.) বলেন : এই বাড়তি নেয়ামত হচ্ছে আল্লাহ তা’য়ালার দীদার, দর্শন ও সাক্ষাৎ, যা জান্নাতীরা লাভ করবে। হাদীসে কুদসীতে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যখন জান্নাতীরা জান্নাতের প্রবেশ করবে, তখন মহান আল্লাহপাক বলবেন : তোমরা কি বর্ধিত কিছু চাও? তারা বলবে, আপনি কি আমাদের চেহারা শুভ্র করে দেননি? আপনি কি আমাদের জান্নাতে প্রবেশ করাননি? এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেননি? রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : তখন পর্দা খুলে দেয়া হবে। তখন তারা বুঝতে পারবে, তাদের তাদের প্রতিপালক আল্লাহর দিকে তাকানোর নেয়ামতের চেয়ে বড় কোনো নেয়ামত দেয়া হয়নি। আর এটাই হলো, বর্ধিত বা বাড়তি নেয়ামত। (সহীহ মুসলিম : ১৮১)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।