Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১৯৮৬ : যে আসরের মাধ্যমে অবিনশ্বর ম্যারাডোনা

নাভিদ হাসান | প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

মেক্সিকোর অ্যাজটেকা স্টেডিয়াম ফুটবলের সব স্মরণীয় ঘটনার সাক্ষী। শতাব্দীর সেরা ম্যাচটি (পশ্চিম জার্মানি-ইতালি) এখানেই হয়েছিল ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে। ১৬ বছর পর বিশ্বকাপ যখন আবারও মেক্সিকোতে ফেরে। বিশ্ব এক কিংবদন্তি পায় সেই আসরে। যার নাম ডিয়াগো ম্যারাডোনা। বাঁ পায়ের এই জাদুকর আরও ৪-৫ বছর আগ থেকে বিশ্বসেরা ছিলেনই, তবে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ তার খ্যাতিকে অমরত্ব এনে দেয়। আর সেবার আর্জেন্টিনাকে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বসেরা বানান ম্যারাডোনা। তবে এই ফুটবলার কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাজটেকাতে করেন দুই গোল। যার একটির জন্য তিনি নন্দিত ও আরেক্টির জন্য নিন্দিত।
কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড-আর্জেন্টিনা মধ্যকার ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের খেলা চলছে। ম্যাচের ৫১তম মিনিটের সময় মধ্যমাঠ থেকে ম্যারাডোনা বল নিয়ে যান ইংল্যান্ডের ডি-বক্সের দিকে। তার পাশে ও সামনে গোলকিপার ছাড়াও মোট ৮ জন ইংলিশ ফুটবলার। ম্যারাডোনা বলটা পাস দেন স্ট্রাইকার ভালদানোকে। কিন্তু এই স্ট্রাইকার বলটাকে আয়ত্তে আনতে পারলেন না ঠিকঠাক। জটলার মাঝে বল ক্লিয়ার করতে এগিয়ে এলেন ইংলিশ মিডফিল্ডার স্টিভ হজ। তবে সমস্যা আরো বাড়ে হজের ক্লিয়ারেন্সে ইংল্যান্ডকে বিপদমুক্ত করার বিপরীতে, বাতাসে ভেসে বল চলে যায় বক্সের ভেতরে থাকা ম্যারাডোনার মাথার ওপর। ম্যারাডোনা যেন কোনোভাবেই বলের দখল না পান, নিশ্চিত করতে পাঞ্চ করার জন্য হাত বাড়ালেন ইংল্যান্ডের গোলকিপার পিটার শিলটন। এরপর ‘হ্যান্ড অব গড’র মাধ্যমে ম্যারাডনার সেই আলোচিত গোল যা কালের পরিক্রমায় বিশ্বময় হয়ে আছে বিখ্যাত। এই ব্যাপারে ফুটবল জাদুকর ম্যারাডনা বলেন, ‘একটুখানি আমার মাথা দিয়ে আর একটু ঈশ্বরের হাত দিয়ে গোল্টি হয়েছিল।’
বেঁচে থাকাকালীন তিনি কখনই হাত দিয়ে গোল করাটা স্বীকার করেননি। আর ইংলিশরাও তাকে কখনোই ক্ষমা করেনি। তবে এখনো সকল বয়সের মানুষ ইন্টারনেটে এই গোলটির ভিডিও সবচেয়ে বেশি দেখে। আরো একটা গোলও ফুটবলপ্রেমীরা খুব করে দেখে। যা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচেই মিনিট চারেক পরে করেছিলেন ম্যারাডোনা। যে গোলটি শুধু ফুটবলার থেকে তাকে আলাদা করেছিল।
মেক্সিকো বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কুখ্যাত প্রথম গোলটি নিয়ে ম্যারাডোনার সারাজীবনই রহস্যময় বর্ণনা দিয়েছেন। যদিও ভিডিও রিপ্লে স্পষ্ট ছিল যে, আর্জেন্টাইন নাম্বার টেন সেই গোল হাত দিয়েই করেছিলেন। এই ব্যাপারে ইংল্যান্ডের ডিফেন্ডার তেরি বুচার বলেন, ‘এটি সম্ভবত পৃথিবীর সবচাইতে সূক্ষ্ম প্রতারণার ছিল যা আপনি কখনও দেখতে পাবেন এবং ম্যারাডোনা এটি করেও উতরে গিয়েছিলেন।’
ম্যাচ যখন দুই গোলে শেষ হবে মনে হচ্ছিল তখন গ্যারি লিনেকার, থ্রি লায়ন্সদের হয়ে ৮১তম মিনিটে একটি গোল শোধ করেন। যা তাকে সেই আসরে গোল্ডেন বুট (৬ গোল নিয়ে) পেতে সাহায্য করেছিল। লিনেকার ফিফার সঙ্গে এক আলাপচারিতায় বলেন, ‘আমার মধ্যে রাগ নেই। আমি ডিয়েগোকে পছন্দ করি, আমাকে স্বীকার করতে হবে। সে আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে; কিন্তু আমি তাকে ক্ষমা করেছি। ম্যারাডোনা আমাদের যুগের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন। মাঠে সে যা করেছে তা জাদুকরই করতে পারেন।’ তবে লিনেকারের মতো উদার বাকি ইংলিশ খেলোয়াড়রা নন। গোলরক্ষক পিটার শিলটন সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এই গোলরক্ষক বলেন, ‘আমার কাছে সবসময় মানুষজন বলে সে তোমাকে টপকে গিয়েছিল। আমি বলই সে আমাকে লাফিয়ে টপকাতে পারেনি। সে প্রতারণা করেছিল।’
মজার ব্যাপার হচ্ছে ম্যারাডোনা এই ব্যাপারে আরও একটি মতামত দিয়ে গিয়েছিলেন, ‘এমন নয় যে আমি এইরকম একটি গোল করতে পেরে গর্বিত, তবে আমার খুব মজা লাগে যখন দেখি তারা (ইংলিশরা) আমার এই হাত দিয়ে করা গোলের কারণে পাগল হয়ে যায়। আমি ব্যাপারটা খুব উপভোগ করি।’ একই মানুষের দুই ধরনের মন্তব্য। একবার বলছেন সেটা ইশ্বরের হাত; কিন্তু আরেকবার বলছেন তার হাত! এরপরই ফুটবল জাদুকর ইংল্যান্ডের ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ জয়ের সামগ্রীক বির্তক টেনে বলেন, ‘ইংল্যান্ড এমন একটি গোল দিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছে (ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে) যা আসলে হয়নি। সুতরাং, তাদের আমার সম্পর্কে কিছু বলা উচিত নয়। তারা তো আমার আগে প্রতারণা করেছে!’
এতকিছুর পরও বলতে হয় ম্যারাডোনা মানেই স্বাধীনচেতা মানুষের ফুটবল। আর এই ম্যারাডোনাকে অবিনশ্বর করেছিল ১৯৮৬ সালের বিশ্ব কাপটাই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ