Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চীনের আঙিনায় শক্তি বাড়াতে মরিয়া যুক্তরাষ্ট্র

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

চীনের আঙিনা হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। চলতি সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কম্বোডিয়ায় অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশনস বা আসিয়ানের বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন। ২০১৭ সালের পর থেকে এমন সফরে আসা তিনিই প্রথম কোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। গত বছরও তিনি ভাচুয়ালি সেখানে যোগ দিয়েছিলেন। খবর বিবিসির। তারপরে তিনি ইন্দোনেশিয়ায় যাবেন। এই দেশটি এই অঞ্চলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে তিনি জি-২০ বৈঠকে যোগ দেওয়ার আগে চীনা নেতা শি জিনপিংয়ের সাথে দেখা করবেন বলে কথা রয়েছে। কিন্তু এখন অতীতের চেয়ে আরো বেশি প্রতিকূল কূটনৈতিক পরিবেশে কাজ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এক সময় এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কূটনীতির জন্য অপরিহার্য বলে বিবেচিত আসিয়ান। কিন্তু বর্তমানে একটি ক্রমবর্ধমান মেরুকৃত বিশ্বে কার্যকর থাকতে এটি হিমশিম খাচ্ছে। সংস্থাটি নিজেকে শান্তি ও নিরপেক্ষতার একটি অঞ্চল হিসাবে গড়ে তুলেছে। এর ১০টি সদস্য রাষ্ট্র রয়েছে যারা ঐকমত্য চায়, একে অপরের সমালোচনা এড়ায় এবং বিভিন্ন শক্তিকে জড়িত করতে দ্বিধা করে না। সংস্থাটির ছোট এবং দুর্বল সচিবালয় এবং সদস্যদের উপর সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য প্রক্রিয়ার অভাব এই মানসিকতার প্রতিফলন করে। সংস্থাটি সবচেয়ে ভাল কাজ করেছিল যখন সেটি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বৈশ্বিক ঐকমত্য ছিল এবং সেটি বাণিজ্য ও প্রবৃদ্ধিকে বাড়িয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববাজারে চীনের আগমন এবং ২০০০ সালের গোড়ার দিকে চীনের প্রভাব যখন বাড়তে শুরু করে, তখন একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ কমতে থাকে। কারণ ওই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে নজর সরিয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই অঞ্চলে চীন দেশটির প্রাক্তন নেতা দেং জিয়াওপিংয়ের একটি মন্ত্র মাথায় নিয়ে আগানো শুরু করে। আর তা হচ্ছে, নিজের শক্তি লুকাও, নিজের সময় কাটাও। কিন্তু টানা ১০ বছর ধরে শি ক্ষমতায় থাকার কারণে চীনের শক্তি আসলে আর লুকানো যায়নি। গত দশকে দক্ষিণ চীন সাগরে রিফ দ্বীপপুঞ্জে চীনের দখলদারিত্ব এবং সামরিক উন্নয়ন ওই অঞ্চলে অন্যান্য দাবিদার বিশেষ করে ভিয়েতনাম এবং ফিলিপাইনের সাথে চীনকে সরাসরি সংঘর্ষে নিয়ে এসেছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র জাপান, ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার সাথে যে কোয়াড জোটের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে, সেটিও আসিয়ানকে দুর্বল করেছে। পাশাপাশি এই জোটভুক্ত দেশগুলোকে যেন দুটি শক্তিশালী পক্ষের মধ্যে আটকে ফেলেছে। এশিয়ায় চীনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ওয়াশিংটনের যে ইচ্ছা, সেটি তাদের ভয়ের কারণ। পরাশক্তির দ্বন্দ্ব থেকে তাদের অনেক কিছু হারানোর ভয় রয়েছে। আর এ সমস্ত উদ্যোগের জন্য কোনও মার্কিন প্রশাসন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি মানতে ইচ্ছুক নয়- এবং এটি অবশ্যই বিশ্বের সবচেয়ে বাণিজ্য-নির্ভর অঞ্চলের জন্য এই চুক্তিটিকে আরো খারাপ অবস্থায় ফেলেছে। অন্যদিকে চীনের সাথে একটি সম্পর্ক ইতিমধ্যে বিশ্বের বৃহত্তম বাণিজ্য ব্লকের দিকে নিয়ে গেছে যা আসিয়ান, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডকে সংযুক্ত করেছে। এমনকি আসিয়ানের বৃহত্তম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া এই অঞ্চলের সবচেয়ে চীন-সন্দেহজনক বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করে, তারাও প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর অধীনে সাগ্রহে চীনা বিনিয়োগ, ঋণ এবং প্রযুক্তি চাইছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এইকথা জেনে স্বস্তি পেতে পারে যে আসিয়ান এখনও যতটা সম্ভব অন্যান্য শক্তিকে যুক্ত করবে- চীনের প্রতি পাল্টা প্রতিপক্ষ হিসেবে। আমেরিকা জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ায় যেভাবে সামরিক মিত্রতা গড়ে তুলেছে, চীনের এখানে সেভাবে ঘনিষ্ঠ সামরিক মিত্র হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে কম-বেশি সমস্ত আসিয়ান দেশগুলো এখন স্বীকার করে যে চীন এই অঞ্চলে প্রভাবশালী শক্তি হবে এবং যেখানে তার নিজস্ব স্বার্থ ঝুঁকিতে রয়েছে সেখানে ছাড় দিতে নারাজ তারা। বিবিসি বাংলা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ