সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শেষ ম্যাচে পেনাল্টি মিস করায় স্বপ্নভঙ্গ হলো স্বাগতিক বাংলাদেশের কিশোরীদের। ড্র করে টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হলো নেপাল। শুক্রবার বিকালে কমলাপুরস্থ বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে ফিরতি ম্যাচে বাংলাদেশ ১-১ ব্যবধানে ড্র করে নেপালের সঙ্গে। ফলে তিন দলের টুর্নামেন্টে ডাবল লিগ পদ্ধতির খেলায় ১০ পয়েন্ট পেয়ে শিরোপা ঘরে তোলে নেপাল। চ্যাম্পিয়ন হয়ে দশরথে সিনিয়রদের শিরোপা হারানোর প্রতিশোধ নিলো নেপালের কিশোরীরা ।

শুক্রবার ম্যাচের শুরু থেকেই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে লড়ে স্বাগতিক দলের মেয়েরা। তবে সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে না পারায় শেষ পর্যন্ত জয়ের মুখ দেখা হয়নি তাদের। বিশেষ করে ম্যাচের শেষ দিকে জয়নব বিবির নেপাল্টি মিস। নেপালের তিন ডিফেন্ডারের ব্লকে ভুটানের বিপক্ষে ডাবল হ্যাটট্রিক করা সুরভী আকন্দ প্রীতির নিষ্প্রভতা আর উহমেলা মারমার গোল করার ব্যর্থতায় পুরো তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেনি বাংলাদেশ।

টুর্নামেন্টে ডাবল লিগ পদ্ধতিতে এক দল চারটি করে ম্যাচ খেলেছে। চার ম্যাচে নেপাল সর্বোচ্চ ১০ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন ও বাংলাদেশ ৭ পয়েন্ট নিয়ে রানার্স আপ হয়। ভুটান কোন পয়েন্ট পায়নি। শেষ ম্যাচে নেপালকে হারাতে পারলে দুই দলের সমান ৯ পয়েন্ট করে হতো। এক্ষেত্রে গোল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে চ্যাম্পিয়ন হতো বাংলাদেশ।

এর আগে নেপালের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ১-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে বল পজিশনে এগিয়ে থেকেও গোল পায়নি স্বাগতিকরা। তবে কাল লিগের শেষ ম্যাচে দু’দলই সমানভাবে লড়েছে। ম্যাচের ১৪ মিনিটে গোল করে নেপাল এগিয়ে যায়। এসময় সমীক্ষা মাগার ডিফেন্ডার অনন্যা মুর্মু বিথিকে কাটিয়ে বাই লাইনের একটু উপর থেকে কাট ব্যক বাড়ান। কানন রানী বাহাদুর তা ক্লিয়ার করতে গিয়ে তুলে দেন সুশিলার পায়ে। নেপালের এই ফরোয়ার্ডের দূরপাল্লার শটে লাফিয়ে ওঠা বল বাংলাদেশ গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে জালে আশ্রয় নেয় (১-০)। ম্যাচের ৫৪ মিনিটে সমতায় ফেরে বাংলাদেশ। জয়নব বিবি রিতার কর্নারে লাফিয়ে উঠে রুমা আক্তার হেড নিলে বল নেপালের জাল কাঁপায় (১-১)। এরপরেই যেন খেই হারিয়ে ফেলে লাল-সবুজের কিশোরীরা। ভুল পাস আর বল পায়ে না রাখতে পারার খেসারত শেষ পর্যন্ত দিতে হয় পুরো দলকেই। টুর্নামেন্টের শিরোপা আর পুনরুদ্ধার করা হয়নি বাংলাদেশের।

ম্যাচের বয়স তখন ৮৯ মিনিট। স্কোরলাইন ১-১। ঠিক এসময় বাঁ প্রান্ত দিয়ে বাংলাদেশের তৃষ্ণার করা ক্রস নেপালের ডিফেন্ডার বিপানার হাত স্পর্শ করলে রেফারি বর্মন কনিকা পেনাল্টির বাঁশি বাজান। আগেভাগেই উৎসবে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরেন রুমা আক্তার, নুসরাত জাহানরা। মনে হল জয় ধরা দিতে বেশি বাকি নেই। কিন্তু সেই উল্লাসে জল ঢেলে দেন জয়নব বিবি রিতা। তার নেওয়া পেনাল্টি শট নেপালের গোলরক্ষক সুজাতা তামাং শুয়ে পড়ে রুখে দেন। এতেই শিরোপা খুইয়ে ফেলেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা। নারীদের সাফে এটিই নেপালের প্রথম শিরোপা জয়।

রানার্সআপ হওয়া ছাড়াও টুর্নামেন্টে ফেয়ার প্লে ট্রফি জেতে বাংলাদেশ। ৯ গোল করে গোল্ডেন বুট জেতেন বাংলাদেশের সুরভী আকন্দ প্রীতি এবং টুর্নামেন্ট সেরা হন তিনিই। সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার জিতে নেন নেপালের সুজাতা তামাং। খেলা শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। এ সময় যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দিন, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ও সাফের সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন এবং সাফ সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলাল উপস্থিত ছিলেন।