Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

১৯৫৮ : মনোবিদ ও ফুটবল রাজার গল্প

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপের আগে ব্রাজিল দলের মনোবিদ ডাক্তার হোয়াও কারভালহেস এমন এক মন্তব্য করে বসলেন যা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে গিয়েছিল সবার জন্য। তিনি জানিয়ে দিলেন পেলেকে সুইডেনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ দলে রাখাটা হবে চরম বোকামি। তবে ব্রাজিল কোচ ভিসেন্তে ফিওলা মোটেই প্রভাবিত হননি এই মনোবিদের কথায়। কেবল জানিয়ে দিলেন ফিট থাকলে পেলে অবশ্যই খেলবেন। কোচের আস্থাতেই সেই বিশ্বকাপ খেলেছেন ফুটবলের ‘কালো মানিক’। নক আউট পর্বের প্রতি ম্যাচে গোল করে দলকে করলেন বিশ্বমঞ্চে প্রথমবারের মত চ্যাম্পিয়ন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মনবিদ কারভালহেস আরও একজন ফুটবলারকে স্কোয়াডের বাহিরে রাখতে অনুরোধ করেছিলন। যার নাম মানে গ্যারিঞ্চা। এই উইঙ্গারও চোট থেকে ফিরে বিশাল অবদান রেখেছিলন বিশ্বকাপ জেতাতে।
কারভালহেস বলেছিলেন ‘পেলেকে এখনো শিশুই বলা যায়। কঠিন মুহ‚র্তে লড়াকু মনোভাবের অভাব থাকাটা স্বাভাবিক। এই বয়সে আগ্রাসী হওয়া এবং উপযুক্ত মুহ‚র্তে যথার্ত প্রতিক্রিয়া জানাতে এই বয়সী কেউ প্রস্তুত থাকে না। তা ছাড়া দায়িত্ববোধ এখনো শিখেনি।’ পেলের বয়স তখন মাত্র ১৭ বছর। তাই এমন কথা বলেছিলেন কারভালহেস। তবে এই মনোবিদ চোটের জন্যই গ্যারিঞ্চাকে বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন। পেলে পরবর্তীতে তার আত্মজীবনীতে উল্লেখ করেছেন যে, ১৯৫৮ সালে যা ঘটেছিল, তিনি তার জন্য চির কৃতজ্ঞ। ‘আমার এবং গ্যারিঞ্চার সোউভাগ্যই বলতে হবে। ফিওলা সবসময় বিশেষজ্ঞদের চেয়ে তার নিজের বোধের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতেন। সেইদিন তিনি মনোবিজ্ঞানীর দিকে গম্ভীরভাবে মাথা নেড়ে বললেন, ‘আপনি হয়তো ঠিক বলেছেন। তবে ঘটনা হচ্ছে, আপনি ফুটবল সম্পর্কে কিছুই জানেন না। পেলের হাঁটুর চোট থেকে সেরে উঠলে অবশ্যই খেলবে।’
হাঁটুর চোটটি পেলে পেয়েছিলেন বিশ্বকাপের আগে একটি অনুশীলন ম্যাচে। এই কারণটি কারভালহেসের মনে সংশয় তৈরী করেছিল। কিন্তু ফিওলা বিশাল বাজিটা খেলেন, এবং দারুণ ভাবে জিতে যান। এই সিধান্তই ব্রাজিলের বিশ্বকাপের ইতিহাসেকে নতুনভাবে লিখেছিল। পেলে ও গ্যারিঞ্চা দুই জনই গ্রæপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচে অস্ট্রিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বেঞ্চে ছিলেন। গ্রæপ পর্বের শেষ ম্যাচে সোভিয়েত ইউনিয়নের (অখন্ড রাশিয়া) বিপক্ষে তাদের দুইজনকে প্রথমবারের মত সুদেডেন বিশ্বকাপে মাঠে নামান মাঠে নামান ফিওলা। সেই ম্যাচে পেলে একটি এসিস্ত করেন।
পেলে কোয়ার্টার ফাইনালে (নক আউটের প্রথম ম্যাচ) ওয়েলসের বিপক্ষে জালের সন্ধান পান। আর তাতেই তিনি বিশ্বকাপের ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হয়েছিলেন। মেক্সিকোর ম্যানুয়েল রোসাসোর ১৯৩০ সালের প্রথম আসরে করা রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যান ব্রাজিলিয়ান তরুণ। কয়েক দশক পরে পেলে সেই নির্দিষ্ট গোলের ব্যাপারে বলেন ‘আমার করা সবচেয়ে গুরুত্বপ‚র্ণ গোল ছিল সেটি। গোলটি আমার আত্মবিশ্বাসকে পুরোপুরি বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্ব এখন পেলে সম্পর্কে জানে। সেই গোলেইত সব শুরু।’
এরপর সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে ১৭ বছর বয়সী পেলে দুর্দান্ত একটি হ্যাটট্রিক করে বসেন। ম্যাচ জুরে সাম্বার ছন্দে খেলেন পেলে। প্রতিটা গোলেই ছিল নিজের স্বতন্ত্রতা। ম্যাচটি ৫-২ গলে জিতে ব্রাজিল পৌঁছে যায় আসরের ফাইনালে। সেখানে স্বাগতিক সুইডেনের বিপক্ষে সেই ৫-২ ব্যবধানেই ম্যাচ জেতে ব্রাজিল। প্রথমবারের মত বিশ্বসেরার শিরোপা ওঠে তাদের হাতে। ম্যাচে জোরা গোল করেন পেলে। ফ্রান্স ও সুইডেনের বিপক্ষে ৩টি এসিস্ট করেন গ্যারিঞ্চা।
সুইডেন বিশ্বকাপে সর্বমোট ৬টি গোল করেন পেলে। সেই আসরের স্মৃতিরোমন্থন করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপে আমার অভিষেক ছিল ১৯৫৮ সালে, এবং সেই আসরের মাধ্যমেই আমি বিশ্ব ফুটবলে যেন প্রবেশ করলাম। সারা বিশ্বের সংবাদপত্র এবং ম্যাগাজিনের প্রথম পাতায় আমার ছবি আসতে শুরু করল। প্যারিস ম্যাচ জয়ের পরপরই একটি কভার স্টোরি করে জানায় যে একজন নতুন রাজা এসেছে। খুব শীঘ্রই আমাকে “কিং পেলে” বলে ডাকা শুরু হলো। অথবা, আরও সহজভাবে, “রাজা”।’

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ