বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভূক্ত নিবেদিত প্রাণ মুসলমানের ঐক্য সত্য-সম্ভূত বিশ^াস হচ্ছে এই যে, বিশ^ নবী হযরত মুহাম্মাদ মোস্তাফা আহমাদ মুজতাবা (সা.)-এর পর এই পৃথিবীতে আর কোনো নবী ও রাসূলের আগমন ঘটবে না। যারা এই ধারণায় বিশ^াসী নয়, তাদের সম্পর্কে আল্কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : মুহাম্মাদ তোমাদের কোনো ব্যক্তির পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী, আল্লাহ সকল বিষয়ে পরিজ্ঞাত। (সূরা আহযাব : আয়াত-৪০)।
এতে সুস্পষ্টই বুঝা যায় যে, যারা এই ঘোষণার বিরোধী তারা মুসলমান নয়। কিন্তু রিসালাত ও নবুওতের কর্ম প্রবাহকে জীবন্ত ও অব্যাহত রাখার জন্য যুগে যুগে বিভিন্ন স্থানে, এলাকা ভিত্তিক অথবা সমগ্র বিশ^ মানবের জন্য সংস্কারক আসবেন। এতদপ্রসঙ্গে বিশ^নবী (সা.) বলেছেন : প্রত্যেক শতাব্দীর প্রারম্ভে আল্লাহপাক এমন একজন মুজাদ্দেদ (সংস্কারক) পাঠাবেন, যিনি দ্বীনে (ইসলামে) সংস্কার সাধন করবেন।
গভীর দৃষ্টিতে তাকালে দেখা যায় যে, বিশ^ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ও তাঁর প্রকৃত প্রতিনিধি চারজন রাশেদীন খলীফার যুগে আদর্শ ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু শেষ তিন রাশেদীন খলীফার আমলেই স্বার্থের কারণে মুনাফেকদের চক্রান্ত মাথা চাড়া দিয়ে উঠে এবং তার পরিণতিতে রাশেদীন দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর ফারুক (রা.), তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান গণি (রা.) ও প্রজ্ঞাবান চতুর্থ খলীফা হযরত আলী (রা.) শাহাদাত বরণ করেন।
তারপর কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা প্রবাহ গোটা মুসলিম উম্মাহ্র ঐক্য ও সংহতিতে মর্মান্তিক ও ভয়ানক আঘাত হানে। ফলে, ইসলামে প্রবেশ করে পারসিক, পৌত্তলিক, ইহুদি ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ধর্মের অনুষ্ঠানাদি। একই সাথে ইসলামকে পৃথিবীর বুক থেকে উৎখাত করতে তৎপর হয় রোমক সাম্রাজ্য। এমনই দুর্দিনে উমাইয়্যা খলীফা হযরত উমর বিন আবদুল আজীজ (রহ.) প্রকৃত মুজাদ্দিদের ভূমিকায় আবির্ভূত হন। এরপর সময়ে সময়ে বহু মুজাদ্দেদ ও সংস্কারক আল্লাহ পাকের মেহেরবাণীতে ইসলামের খেদমতে দিক নির্দেশক হিসেবে আবির্ভূত হন।
গ্রীক দর্শন ও অধিবিদ্যার প্রবঞ্চনাকর ছোবলের বিরুদ্ধে আল্লাহর রহমত পুষ্ট আধ্যাত্ম দার্শনিক সাফল্য নিয়ে আবির্র্ভূত হন ইমাম গাজ্জালী (রহ.)। তিনি হচ্ছেন একজন শ্রেষ্ঠ প্রজ্ঞাবান মুজাদ্দিদ। এরই ধারাবাহিকতায় তৌহিদী আন্দোলনের দৃঢ়চেতা প্রবক্তা ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) ইসলামকে সহীহভাবে অনুসরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ইসলামের একান্ত দুর্দিনে সমগ্র মুসলিম মিল্লাতের সংস্কারকের ভূমিকায় আবির্ভূত হন হযরত আহমাদ সেরহিন্দী মুজাদ্দিদ আলফে সানী (রহ.)। মুজাদ্দিদ নামটি যার নামের সাথে একাকার হয়ে গেছে, তিনি বিশ^ময় ইসলামের প্রাণসঞ্জিবনী সুধা বিতরণ করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।