বিজয় দিবসের কবিতা
তুমি বাংলা ছাড়ো আবদুল হাই শিকদাররক্তচোখের আগুন মেখে ঝলসে যাওয়া আমার বছরগুলোআজকে যখন হাতের মুঠোয়কণ্ঠনালীর খুনপিয়াসী
জোবায়ের আলী জুয়েল : বাংলার ইতিহাসে বাঙ্গালীর সবচেয়ে উল্লেখ যোগ্য দু’টি গৌরবজ্জ্বোল ঘটনা হলো বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও একাত্তরের স্বাধীনতা। ১৬ ডিসেম্বর আমাদের গৌরবজ্জ্বোল দীপ্ত বিজয়ের মাস।
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে বীর বাঙ্গালী জনতার সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। ২৬৭ দিন স্থায়ী হয়েছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধ। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের স্বপ্নের স্বাধীনতা। ২ লাখ নারী ও শিশু ধর্ষিত হয় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে। ১,১১১ জন বুদ্ধিজীবীকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে। ১১টি সেক্টরে বাংলা দেশকে বিভক্ত করে মুক্তিবাহিনী স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনা করে।
১৬ ডিসেম্বর লক্ষ প্রাণের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় মুক্তিযুদ্ধের বিজয়। আমাদের বহু আকাক্সিক্ষত স্বপ্নের স্বাধীনতা।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের ৪ ধরণের পদকে ভূষিত করা হয়।
(১) বীরশ্রেষ্ঠ ৭ জন। (২) বীর উত্তম ৬৮ জন (৩) বীর বিক্রমঃ- ১৭৫ জন (৪) বীর প্রতীক ৪২৬ জন।
বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত ২ জন মহিলারা হলেন যথাক্রমে তারামন বিবি এবং সেতারা বেগম।
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সংগ্রামী চেতনার বিকাশ ঘটেছিল আমাদের মহান বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরের মধ্য দিয়ে। সেদিন সংগ্রামী চেতনার লালনে জনগণ ছিলেন প্রচ- প্রতিবাদী ও আশাবাদী দীপ্ত আলোর মুক্ত আযাদী সংগ্রামের অতন্দ্র প্রহরী। আমাদের স্বাধীনতার গর্বিত বীরশ্রেষ্ঠরা হলেনÑ
(১) সিপাহী মোহাম্মদ হামিদুর রহমানঃ-
জন্ম- ২রা ফেব্রুয়ারী ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দ
পিতার নাম- আাব্বাস আলী
মাতার নাম- কায়দুন নেসা
মৃত্যু- ২৮ অক্টোবর ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ
গ্রাম : খোরদা খালিশপুর
ইউনিয়ন : সুন্দরপুর, বজরাপুর, খলিশপুর
উপজেলা : মহেশপুর
জেলা : ঝিনাইদহ।
স্মৃতি স্তম্ভের স্থানঃ ধলই, বিওপ, কমলগঞ্জ, মৌলভী বাজার। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য তাঁকে বীর শ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৮ বছর বয়সে শহীদ হওয়া হামিদুর রহমান সাতজন বীর শ্রেষ্ঠের মধ্যে দ্বিতীয় সর্ব কনিষ্ঠ। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন।
(২) ল্যান্স নায়ক মুন্সি আব্দুর রউফঃ-
জন্ম ঃ ১লা মে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ
পিতার নাম- মুন্সী মেহেদী হাসান
মাতার নাম- মোছাঃ মুকিদূন্নেসা
মৃত্যু- ২০ এপ্রিল ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ
গ্রাম : সালামতপুর
ইউনিয়ন : কামারখালী
উপজেলা : মধূখালী
জেলা: ফরিদপুর।
স্মৃতি স্তম্ভের স্থানঃ বুড়িরহাট, ননিয়ারচর, রাঙামাটি।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ২০ এপ্রিল ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে রাঙামাটি বুড়িঘাট এলাকায় শহীদ হন। তাঁর সমাধী চট্টগ্রামের কালুরঘাট চিংড়ি খালী নদীর তীরে। তিনি বাংলাদেশ রাইফেল্সের সদস্য ছিলেন।
(৩) সিপাহী মোস্তফা কামাল
জন্ম- ১৬ ডিসেম্বর ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ
পিতার নাম- হাবিবুর রহমান
মৃত্যু- ৮ এপ্রিল ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ
গ্রাম : পশ্চিম হাজীপুর
ইউনিয়ন : আলীনগর
উপজেলা : ভোলা সদর
জেলা : ভোলা
স্মৃতি স্তম্ভের স্থান মোগরা, আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
৮ এপ্রিল ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে আখাউড়ার দক্ষিণে উত্তর দারুইন গ্রামে বর্বর পাকিস্তানী বাহিনীর হামলায় নিহত হন। তিনি সোনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন।
(৪) ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখঃ-
জন্ম- ২৬ এপ্রিল ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ
পিতার নাম- মোহাম্মদ আমানত শেখ
মাতার নাম- মোছাঃ জান্নাত বেগম
মৃত্যু- ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ
গ্রাম : মহেশ খোলা
ইউনিয়ন : চন্ডিবারপুর
উপজেলা : নড়াইল সদর, জেলা : নড়াইল
স্মৃতি স্তম্ভের স্থান ঃ কাশিরপুর, শার্ষা, যশোর।
৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক শহীদ হন। তিনি
বাংলাদেশ রাইফেল্সের সদস্য ছিলেন।
(৫) ক্যপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর
জন্ম- ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ
মৃত্যু- ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ
গ্রাম : রহিমগঞ্জ
ইউনিয়ন : আগরপুর
উপজেলা : বাবুগঞ্জ
জেলা : বরিশাল
স্মৃতি স্তম্ভের স্থান : সোনা মসজিদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে পাকবাহিনীর সাথে যুদ্ধ চলাকালে কপালে বুলেট বিদ্ধ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর সমাধীস্থল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে অবস্থিত।
বীর শ্রেষ্ঠদের মধ্যে প্রথম শহীদ হন সিপাহী মোস্তফা কামাল এবং সর্বশেষ শহীদ হন ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর। ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর বাংলাদেশ রাইফেল্সের সদস্য ছিলেন।
(৬) স্কোয়াড্রন লিডার রুহুল আমিনঃ
জন্ম- ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দ
পিতার নাম- মোহাম্মদ আজহার মিয়া
মাতার নাম- জুলেখা খাতুন
মৃত্যু- ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ
গ্রাম : বাঘচাপড়া
ইউনিয়ন : দেউটি
উপজেলা : বেগমগঞ্জ
জেলা : নোয়াখালী
স্মৃতি স্তম্ভের স্থান : লাকপুর সি’ফুড রুপসা খুলনা।
১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে জাহাজে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় হানাদার বাহিনীর বিমান হামলায় তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পোড়াদেহ বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে তাঁর লাশ উদ্ধার করে খুলনার রুপসা নদী সংলগ্ন স্থানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। তিনি নৌবাহিনীর সদস্য ছিলেন।
(৭) ফ্লাইট লেফ্টেন্যান্ট মতিউর রহমান
জন্ম- ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ
পিতার নাম- আব্দুস সামাদ
মৃত্যু- ২০ আগস্ট, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ
গ্রাম : রামনগর
ইউনিয়নঃ মুসাপুর
উপজেলা : রায়পুর
জেলা : নরসিংদী
স্মৃতি স্তম্ভের স্থান বিএএফ শাহীন কলেজ ক্যাম্পাস, কুর্মিটোলা, ঢাকা। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর মসরুর ঘাঁটি থেকে একটি টি ৩৩ জঙ্গি বিমান তিনি ছিনিয়ে নেন এবং বাংলাদেশের পথে রওনা হন। কিন্তু সিন্ধু প্রদেশের মরু অঞ্চলে বিমানটি বিধ্বস্ত হলে তিনি শহীদ হন। বাংলাদেশের যে সাতজন বীরকে সর্বোচ্চ সম্মান বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হয় লেফ্টেন্যান্ট মতিউর রহমান ছিলেন তাঁদের মধ্যে সর্ব কণিষ্ঠ।
লেখকঃ সাহিত্যিক, গবেষক, ইতিহাসবিদ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।