বিজয় দিবসের কবিতা
তুমি বাংলা ছাড়ো আবদুল হাই শিকদাররক্তচোখের আগুন মেখে ঝলসে যাওয়া আমার বছরগুলোআজকে যখন হাতের মুঠোয়কণ্ঠনালীর খুনপিয়াসী
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও জাতীয় ইতিহাসে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরবের দিন হলো ১৬ ডিসেম্বর। ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর সদস্য এবং আরও অতিরিক্ত কয়েক হাজার সহযোগী সদস্যকে পরাজিত করে, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জিত হয়েছিল। এই ১৬ ডিসেম্বর আমাদের মহান বিজয় দিবস। আমি রণাঙ্গনের একজন মুক্তিযোদ্ধা। এই মুক্তিযুদ্ধ, এই বিজয় দিবস নিয়ে আমরা রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধাগণ যদি কিছু না লিখি, কিছু না বলি, তাহলে আমাদের কোনো ক্ষতি হবে না কিন্তু আজকের প্রজন্ম, অনেক কিছু জানা থেকে বঞ্চিত থাকবে। এই মুক্তিযুদ্ধ হঠাৎ করে শুরু হয়নি। ২৩ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের চূড়ান্ত অধ্যায় ছিল মুক্তিযুদ্ধ এবং যার ফলাফল বিজয় অর্জনের মাধ্যমে হয়েছিল। কিন্তু এত সহজে এই বিজয় আসেনি। অনেক রক্ত গিয়েছে, অনেক সম্ভ্রম গিয়েছে, অনেক প্রাণ গিয়েছে। একটা দেশ স্বাধীন হওয়ার জন্য যখন প্রত্যক্ষ যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, তখন সেটার জন্য অনেক মূল্য দিতে হয়।
অস্ত্র নিয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন তথা রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাগণই একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা, একথাটি আমি কখনও বলি না। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা সম্প্রদায়ের মধ্যে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাগণ ছিলেন বর্শা-ফলকের আগার মতো, তরবারির ধারের মতো, বন্দুকের নলের মতো। কারণ, তারাই ছিল যুদ্ধের ময়দানে প্রথম সারিতে। রণাঙ্গন শুধু দেশের সীমান্ত অঞ্চলে সীমিত ছিল না, দেশব্যাপী বিস্তৃত ছিল। তাই মুক্তিযুদ্ধে কৃতিত্বের দাবিদার এ দেশের লক্ষ লক্ষ পরিবার।
মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ বা কোটি কোটি বাঙালি প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে। প্রথম থেকে নিয়ে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত, মুক্তিযোদ্ধারাই পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের ব্যস্ত রাখে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় ভারতের মাটিতে। মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করে করে পাকিস্তানিদের কাছ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে এটা সত্য, তবে শুধুমাত্র ঐরূপ অস্ত্র দিয়েই সর্বাঙ্গীন যুদ্ধ পরিচালিত হয়নি। বিশেষত বিভিন্ন সেক্টরে এবং ফোর্সগুলোতে মুক্তিযোদ্ধাদের পোশাক, অস্ত্র, যানবাহন ইত্যাদি সরবরাহ করে ভারত সরকার। ঐ সহযোগিতার জন্য আমরা ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ। তবে, ভারতের নিজস্ব কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত স্বার্থ অবশ্যই জড়িত ছিল। অর্থাৎ বাংলাদেশকে পাকিস্তান বাহিনীর দখল থেকে মুক্ত করার নিমিত্তেই ভারত প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা শুরু করে। যদি ভারত প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করতো তাহলে মুক্তিযুদ্ধ কতদিন চলতো, এর উপকার এবং অপকার কী হতো, এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর পেতে গেলেও দীর্ঘ আলোচনা প্রয়োজন। সেই আলোচনা এখানে করছি না। আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধকালে সহায়তা করার জন্য আমরা ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ, কিন্তু কৃতজ্ঞতার সীমারেখা অনালোচিত এবং অচিহ্নিত হওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশের নামে বাংলাদেশের স্বার্থহানী করা হচ্ছে। এর সংশোধন প্রয়োজন।
আমাদের স্বাধীনতা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা একটি দীর্ঘমেয়াদী কাজ। বিখ্যাত কবিতার দুইটি চরণ হলো: ‘ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল।’ তেমনই মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকগণের বক্তব্য, মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গণের সৈনিকগণের বক্তব্য, মুক্তিযুদ্ধের পর্যবেক্ষকগণের বক্তব্য, মুক্তিযুদ্ধের সাংবাদিকগণের বক্তব্য ইত্যাদি লিখিত হতেই থাকবে এবং ক্রমান্বয়ে আকার এবং আকৃতিতে এগুলো বৃদ্ধি পাবে। আর এরই মধ্য দিয়ে প্রকৃত গবেষক ও ইতিহাসবিদগণের জন্য চিন্তার খোরাক রেডি হতে থাকবে। আমরা যারা এখনও জীবিত, আমরা বর্ণনা করতে পারবো। বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন বছরে মুক্তিযুদ্ধের বর্ণনা ভিত্তিক বা উপলব্ধি ভিত্তিক অনেক বই লেখা হয়েছে। কিন্তু ১৯৭২ থেকে নিয়ে এ পর্যন্ত যতগুলো বই বের হয়েছে, এর কোনো হালনাগাদ ক্যাটালগ কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই। কিন্তু এরকম একটি ক্যাটালগ প্রয়োজন। আমি যখন বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি ভাটিয়ারিতে কমান্ডান্ট ছিলাম, তখন ওই একাডেমির ডাইরেক্টর অফ স্টাডিজ তথা শিক্ষা বিভাগের প্রধান ছিলেন বর্তমানে মরহুম তৎকালীন কর্নেল শফিকউল্লাহ বীর প্রতীক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার শুরুতে শফিকউল্লাহ ছিলেন ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের বাংলার প্রভাষক। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে, তিনি রণাঙ্গনের যুদ্ধে যোগ দেন এবং কমিশন পান। পরবর্তীতে তিনি আর্মি এডুকেশন কোর-এ পদোন্নতি পেতে পেতে কর্নেল হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ-অন্তপ্রাণ, যেমন বীরত্বের প্রতীক, তেমনই সততার প্রতীক, তেমনই ন্যায্যতার প্রতীক। আমি তাঁকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও অন্যান্য বড় বড় শহরে পাঠিয়েছিলাম গবেষণা করার জন্য, খোঁজ নেওয়ার জন্য, তদন্ত করার জন্য, যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কী কী বই প্রকাশ হয়েছে? তিনি অনেকগুলো বই সংগ্রহ করে এনেছিলেন। বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি লাইব্রেরিতে একটা আলাদা কর্নার স্থাপন করি যেখানে শুধু মুক্তিযুদ্ধের বইগুলো রাখার বন্দোবস্ত করা হয়। ভাটিয়ারি থেকে ট্রান্সফার হয়ে এবং পদোন্নতি পেয়ে আমি যোগদান করি যশোরের জিওসি হিসেবে ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে। সেখানেও লাইব্রেরিতে একই কাজ করি। এতটুকু কথা বলে রাখার উদ্দেশ্য হলো, আগামী প্রজন্মের জন্য কাজটিকে সহজ করা। লিখিত ডকুমেন্ট থাকলে অনেক কিছু সহজ হয়ে যায়।
আমাদের যুদ্ধ কি শুধু কোনোরকমে বেঁচে থাকার জন্য করেছিলাম? না। এটা শুধু কোনোরকমে বেঁচে থাকার সংগ্রাম ছিল না। আমরা ভালোভাবে বেঁচে থাকতে যুদ্ধে গিয়েছিলাম। আমরা স্বাধীনতা চেয়েছিলাম, মুক্তি চেয়েছিলাম, মর্যাদা চেয়েছিলাম, সাম্য চেয়েছিলাম, ন্যায়বিচার চেয়েছিলাম। সেই যুদ্ধে আমরা বিজয় পেয়েছি। সেই বিজয়ের বয়সও ৫০ বছর! অর্ধ শতাব্দির স্বাধীন হওয়া একটি দেশ হিসেবে আমাদের অর্জন কতটুকু সেই প্রশ্ন ঘুরেফিরেই তো আসে। ১৯৭১ নিয়ে আমাদের গৌরব আছে, আমাদের গল্প আছে, কিন্তু ৭১ পরবর্তী গল্পগুলো খুব বেশি এগুতে পারছে না। আমাদের দেশের নাম, পতাকা, শাসক ও শাসন পদ্ধতি বদলেছে। আমারা নিজেদের স্বাধীন দেশের নাগরিক বলতে পারছি কিন্তু যে পরিমাণ ত্যাগ, ক্ষত আর রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, সেই আনুপাতিক হারে আমাদের অর্জন হয়নি। রাজনৈতিক বিভেদ, ধর্মীয় কাদা ছোড়াছুড়ির মাধ্যমে সৃষ্ট অনৈক্য এর অন্যতম বড় কারণ। তাই নিজের মাতৃভূমিকে ভালোবাসে এমন মানুষগুলোর মধ্যে ঐক্য দরকার।
মুক্তিযোদ্ধার চেতনা বুকে ধারণ করি কিন্তু এই চেতনা ব্যবহার করে নতুন প্রজন্মকে যদি মুক্তিযুদ্ধের বাইরে থাকা সকল শক্তির বিরুদ্ধে শুধু বিষোদগারই শেখানো হয়, তাহলে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক অঙ্গীকার অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। কারণ, এতে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নতুন প্রজন্ম অনেক কিছুই জানে না। তারা না মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের না বিপক্ষের। মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, দেশকে ভালোবাসে- এমন তরুণ বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ। তাদের সামনে দেশপ্রেমের উদাহরণ আরও বেশি করে তুলে ধরতে হবে। সেটা না করে যদি কারো ওপর কোনো মিথ্যা, কোনো অপবাদ চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তাদের মন বিক্ষুব্ধ হবে। তারাও এ দেশের নাগরিক। তারাও সচেতন। তারাও ভালোমন্দ ন্যায়-অন্যায় বোঝে। সুতরাং একজন মানুষকে আমি তার অপরাধের ততটুকুই চাপাতে পারি, যতটুকু সে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হয়ে করেছে। কিন্তু অন্য একজন দোষী মানুষের দায় একজন নিরপরাধ মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলে নেতৃত্ব দেওয়া পর্যায়ের ব্যক্তিদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। সে তখন অবাক হবে, হতাশ হবে, বিক্ষুদ্ধ হবে এবং এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের ওপর। এটা সামাজিক বিপর্যয়েরও সৃষ্টি করবে। কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা কিছু বিভেদ আমাদের জাতিকে কুরে কুরে খাচ্ছে। এটাকে দূর করতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় যে সমস্ত কারণের জন্য আমরা যুদ্ধ করেছিলাম সে কারণগুলো মোটেই অর্জিত হয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের যতটুকু করার ছিল করেছে, জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। আমরা একটা নেতৃত্বের অধীনে যুদ্ধ করেছি, সে নেতৃত্ব আবার তারা নিয়ে নিয়েছে দেশ পরিচালনার জন্য, কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আমল থেকেই ব্যর্থ হয়েছে। তা না হলে উনি কেন বাকশাল করলেন? এরপর জিয়াউর রহমান আসলেন, তিনি আর্মিকে নিয়ে সামরিক বাহিনীকে নিয়ে চালালেন, তারপর এরশাদ সাহেব এসে জাতীয় পার্টি করলেন, এরপর হাসিনা উনার সাথে সহযোগিতা করলেন, নির্বাচন করলেন, এই যে জগাখিচুড়ি অবস্থা, এ জন্য সকলেই একযোগে দায়ী। এমন একটা পরিস্থিতি থেকে বের হওয়াটা কঠিন। তারপরেও আমি মনে করি শুধু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নয়, ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে, যারা বিবেকবান, স্পষ্টবাদী, চিন্তাশীল তাদেরকে দাঁড়াতে হবে। বলতে হবে, হে জাতি, আসো, একতাবদ্ধ হও। তা না হলে সামনে অনেক বড়ো সমস্যা।
আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ দেওয়া শহীদদের কথা বলি, তাঁদের স্মরণ করি। সেই শহীদদের একটি তালিকা তৈরি হওয়া প্রয়োজন ছিল। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও সেটা হয়নি। তাহলে নতুন প্রজন্মের কাছে আমরা কী রেখে যাচ্ছি? স্বাধীনতার ৫০ বছর পর রাজাকারদের কোনো তালিকা তৈরি হয়নি! উদ্যোগ নিয়েও হযবরল অবস্থা হয়েছে। অথচ, জন্ম থেকে কবর পর্যন্ত বিভাজন তৈরি করা হয়েছে। সকল প্রকারের বিভাজন সৃষ্টি বন্ধ করা প্রয়োজন। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাটিও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হতে পারেনি। সুযোগসন্ধানী স্বার্থপরদের প্রভাবমুক্ত হতে পারেনি। ভুয়া সনদ বিতরণ হয়েছে।
স্বাধীনতার সুফল একেবারেই নেই, সেটা কিন্তু বলছি না। তবে এটা বলতে হচ্ছে, ৫০ বছরে আমরা যতদূর যেতে পারতাম, তার থেকে কম যেতে পেরেছি। বিষয়টা হলো, আপনি যে দেশেই থাকতেন না কেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কিছু না কিছু হতো। শুধু বাংলাদেশেই কি হয়েছে? কম্বোডিয়াতে হয়নি? লাউসে হয়নি? ভিয়েতনামে হয়নি? (ওরাও মুক্তিযুদ্ধ বা সমমানের যুদ্ধ করেছে) থাইল্যান্ডে হয়নি? ইন্ডিয়ায় হয়নি? ওরা তো মুক্তিযুদ্ধ করেনি। তাহলে? মুক্তিযুদ্ধের কারণে স্পেসিফিক যেটা পেয়েছি সেটা হলো একটা স্বাধীন দেশ, একটা পতাকা, কিছু লোক ক্ষমতায় যেতে পেরেছে, কিছু লোক কিছু না কিছু বেনিফিট পেয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য ও শিক্ষার প্রধান আঙ্গিক হলো জনগণের মতামতকে সম্মান করা, জনগণের সম্পদকে রক্ষা করা। জনগণের প্রতি ন্যায়বিচার ও ন্যায় আচরণ করা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আঙ্গিক হলো যে, যেকোনো বিষয়ে সীমা লঙ্ঘন না করা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর একজন সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যখন সেটা মূল্যায়ন করতে বসি তখন অনুভব করি যে, আমরা মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্যের সঙ্গে মোনাফেকি করেছি। জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পারিনি। সমাজে, রাজনীতিতে, অর্থনীতিতে কোথাও ন্যায়পরায়ণতা, সততা ও নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। কিছু সংখ্যক ব্যক্তি বা গুটিকয়েক গোষ্ঠি জনগণের সম্পদ লুট করে তাদের স্বার্থ উদ্ধার করেছে। বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে সম্মানজনক অবস্থায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। সামগ্রিকভাবে সৎ না থাকতে পারার কারণে, দুর্বল দেশপ্রেমের কারণে, সুশাসন কায়েমে ব্যর্থতার কারণে, সৃষ্টিকর্তার অনুশাসন মেনে চলার ব্যর্থতার কারণে, জনগণের প্রতি শাসকদের ক্রমশ অকৃতজ্ঞ হয়ে ওঠার কারণে আমাদের আজ যে অবস্থানে উঠে যাওয়ার কথা ছিল, আমরা তার ধারে কাছেও যেতে পারিনি এটাই সত্য।
দেশের একজন নাগরিক হিসেবে বা সাধারণ জনগণ হিসেবে আমাদের নিজেদেরও একটু আত্মসমালোচনা করার প্রয়োজন আছে। আমাদের সমস্যা হলো, আমরা আড্ডাবাজ। আমরা কোনো শৃঙ্খলা মানি না। গাড়ি চালাতে গেলে যে হলুদ রেখা টপকানো যায় না, সেটা মানা তো দূরের কথা, কংক্রিটের দেয়াল পর্যন্ত রাখা যায় না। সবার মধ্যে একটা ধারণা, অন্যজন সব নিয়ে যাচ্ছে আমি কেন পাবো না? তবে সেখানেও নেতৃত্বের গুণাবলীর বিষয়টি চলে আসে। কোনো জাতিকে নিয়ম মানাতে, আইনশৃংখলা মেনে চলাতে, সঠিকভাবে পরিচালনা করাতে সরকারেরই সেইরকম পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। কারণ, রাষ্ট্রীয়ভাবে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে সে দেশের মানুষের মধ্যে অনেক রকম খারাপ অভ্যাস গড়ে উঠতে পারে, যেটা বাস্তবে হয়েছে।
সার্বিক বিবেচনায় এটা বলা যায়, আমরা যেরূপ বাংলাদেশ চেয়েছি তার আংশিক পেয়েছি। যেই অংশটুকু বা যেই মর্মটুকু পাইনি, সেই অংশ পাওয়ার জন্য বা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমাদের সংগ্রাম করে যেতে হবে। কিছু সংগ্রাম একা করা যায় না, সম্মিলিতভাবে করতে হয়। দেশপ্রেমিক প্রতিটি নাগরিকের কাছে সেই আহবান থাকবে, আপনারা যার যার জায়গা থেকে দেশের জন্য এগিয়ে আসুন। বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা খুব বেশি নয়। যেটুকু প্রত্যাশা পূরণ করলে এ দেশের একজন নাগরিক খুশি হবেন, সেইটুকু প্রত্যাশা পূরণ করা অসম্ভব নয়। এ জন্য দরকার সৎ পরিকল্পনা, দক্ষতা এবং যোগ্যতা।
লেখক: চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।