পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিগত কয়েকবছরে দেশে তথ্য-প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটেছে। মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে কয়েকগুণ। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে গেছে মোবাইল। টুজি, থ্রিজি’র পর ফোরজি সেবার যুগেও ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। যদিও মোবাইল ফোন অপারেটরদের সার্ভিস নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে তাদের মধ্যে। তবে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো বলছে তারা ৩৮ হাজারের বেশি ফোরজি সাইট স্থাপন করেছে, স্পেকট্রামসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ ব্যয় করলেও ভুগছেন ফোরজি গ্রাহক সঙ্কটে। যেখানে ৯৫ শতাংশ অঞ্চল ফোরজি কাভারেজ করেছেন তারা সেখানে গ্রাহক সংখ্যা মাত্র ২৮ শতাংশ। এর পেছনে মোবাইল হ্যান্ডসেটের উচ্চমূল্য, গ্রামাঞ্চলের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা না থাকাকেই মূল কারণ হিসেবে দেখছে তারা। ফোরজি গ্রাহক সংখ্যা বাড়াতে ভারতের জিও মোবাইল ফোন অপারেটরের আদলে বাংলাদেশেও নেটওয়ার্ক লকড, (যে অপারেটর থেকে কেনা হবে সেই অপারেটরের সিমই ব্যবহার করতে হবে) কিস্তিতে কিংবা অপারেটরগুলোর নিজস্ব নামে মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রির প্রস্তাব টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি’র কাছে দিতে চায় মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সংগঠন এসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (এমটব)।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফোরজি সেবা চালুর পর স্পেকট্রাম ও সাইট স্থাপনে বিনিয়োগ বাড়ায় প্রতিটি অপারেটর। তাদের প্রত্যাশা ছিল চলতি বছরে ৪০ শতাংম, ২০২২ সালে ৬০ শতাংশ, ২০২৩ সালে ৭৫ শতাংশ, ২০২৪ সালে ৮৫ শতাংশ এবং ২০২৫-২৭ সালের মধ্যে শতভাগ গ্রাহক ফোরজি সেবা গ্রহণ করবে। বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ি, এখন ১৭ কোটি ৩০ লাখ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১০ কোটি ৩০ লাখের বেশি। যার মাত্র ২৮ শতাংশ ফোরজি সেবা গ্রহণ করছেন। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে এখনো সিংহভাগই টুজি সেবা গ্রহণকারী। টুজি মোবাইল গ্রাহক ৪৭ শতাংশ, আর থ্রিজি গ্রাহক ২৫ শতাংশ। ফোরজি ব্যবহারকারীর ব্যবধান দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি। ৯৫ ভাগ কাভারেজ নিয়ে দেশে যেখানে গ্রাহক ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এখনো ফোরজির বাইরে আছেন ৬৭ দশমিক ৫ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে ভুটানে এই ব্যবধান ২৫ দশমিক ৭ শতাংশ, ভারতে ৪৯ দশমিক ১ শতাংশ, পাকিস্তানে ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ, নেপালে ৫০ দশমিক ৬ শতাংশ, আফগানিস্তানে ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ, মালদ্বীপে ৬৪ দশমিক ৪ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ৬৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
ফোরজি কাভারেজের পরও গ্রাহক সংখ্যা কম থাকার কারণ হিসেবে ফোরজি ডিভাইসের উচ্চমূল্যকেই দায়ী করছে অপারেটরদের সংগঠন এমটব। সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ফোরজি স্মার্টফোনের উচ্চমূল্যের কারণে দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষ এই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কারণ ফোরজি চালু হওয়ার তিন বছর পরও এখনো ৮ কোটির বেশি গ্রাহক বাটন ফোন (ফিচার ফোন) ব্যবহার করছেন। এসব গ্রাহকের হাতে যদি বাটন ফোনের মূল্যে স্মার্টফোন তুলে দেয়া যায় তাহলেও তারাও ফোরজি সেবার আওতায় আসবে। যদিও স্মার্টফোনের বিদ্যমান দাম কমানো সম্ভব না বলে ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে উৎপাদনকারী ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ হিসেবে তারা বলছে উচ্চ কর।
এজন্য এমটব বিটিআরসির কাছে মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানি করার অনুমতি, অপারেটরদের নিজস্ব নামের ব্র্যান্ডে হ্যান্ডসেট বিক্রির প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তারা বিষয়টি নিয়ে হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে আলোচনাও করেছে। তারা এবিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে। তাই এটি সম্ভব না হলে ডিভাইস উৎপাদনকারী ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো সাথে যৌথভাবে কিস্তুতে মোবাইল বিক্রির বিকল্পও দিয়েছে তারা। তবে এক্ষেত্রে তাদের প্রস্তাব হচ্ছে যে অপারেটরের কাছ থেকে হ্যান্ডসেট কেনা হবে সেই অপারেটরের সিম (নেটওয়ার্ক লকড) অন্ততপক্ষে ১২ থেকে ২৪ মাস ব্যবহার করতে হবে। এই সময়ে ওই হ্যান্ডসেটে অন্য কোন অপারেটরের সিম কার্যকর হবে না এমন প্রযুক্তি চালু করতে হবে। না হলে অপারেটররা যে ভুর্তুকি দিবেন সেই পরিমাণ রাজস্ব তাদের আসবে না।
বিটিআরসির কাছে দেয়ার জন্য তৈরি করা প্রস্তাবনা থেকে দেখা যায়, ভারতের ফোরজি পেনিট্রেশনের চিত্র তুলে ধরে এমটব জিও মোবাইল ফোন অপারেটরের আদলে বাংলাদেশেও মোবাইল ফোন বিক্রি করতে চায়। সেখানে দেখানো হয় জিও ফোরজি মোবাইল ফোন চালু করে ২০১৭ সালে। সে সময় দেশটিতে ফোরজি গ্রাহক ছিল ২০ দশমিক ০২ শতাংশ। এর পরের বছর ৩১ দশমিক ৮১ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৪৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং গতবছর ৪৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে জিও ভারতে একবছরের সার্ভিসের নিশ্চয়তা দিয়ে স্মার্টফোন দিচ্ছে এক হাজার ৪৯৯ রুপিতে, আর দুই বছরের সার্ভিসে এক হাজার ৯৯৯ রুপিতে। এছাড়াও প্রতিমাসে কিস্তি সুবিধা, পুরোনো ফোন ফেরত দেয়া, পুরনো ফোন পরিবর্তন করে নতুন ফোন নেয়ার সুবিধা দিচ্ছে জিও।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ইম্পোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিএমপিআইএ) এর সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া শহিদ বলেন, মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো অন্য কোম্পানির উৎপাদিতে হ্যান্ডসেট তাদের নিজেদের নামে ব্র্যান্ডিং করতে চায় এটি কখনো সম্ভব নয়। আমরা এর সাথে একমত নয়। তারা বিদ্যমান ব্র্যান্ডগুলোর হ্যান্ডসেট বিক্রি করতে পারে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা ও গাইডলাইন অনুযায়ী হ্যান্ডসেট উৎপাদন ও মোবাইল নেটওয়ার্ক পরিচালনা দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।
হ্যান্ডসেটের দাম কমানোর বিষয়ে তিনি বলেন, দাম কমানোর ক্ষেত্রে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছুই করার নেই। কারণ এখানে ট্যাক্সসহ অনেক ইস্যু আছে।
জাকারিয়া বলেন, একজন গ্রাহক তিন থেকে চার বছরে একবার ফোন কেনে। কিন্তু তারা এই ফোন ব্যবহার করে প্রতিদিনই কল করছে, ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। এ কারণে অপারেটররা চাইলে গ্রাহকদের হ্যান্ডসেট কেনার ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় অফার দিতে পারে সেটি নেটওয়ার্ক লকড করে কিংবা লকড ছাড়াই।
এমটবের সাধারণ সম্পাদক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম ফরহাদ হোসেন বলেন, মোবাইল অপারেটরগুলো সারাদেশে ফোরজি নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছে। কিন্তু ফোরজি হ্যান্ডসেটের উচ্চমূল্যের কারণে ব্যবহারকারীর সংখ্যা অনেক কম (৩০ শতাংশের নিচে)। আমরা হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারীদের সাথে সাথে আলোচনা করেছি কিভাবে এই সমস্যা সমাধান করা যায় যাতে করে দেশের মানুষ স্বল্পমূল্যে মোবাইল হ্যান্ডসেট কিনতে পারে।
এ বিষয়ে বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, এমটব থেকে এখনো এ ধরনের আনুষ্ঠানিকভাবে কোন প্রস্তাব পায়নি। তবে ফোরজি প্যানিট্রেশন এবং অপারেটদের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে এ সব বিষয়ে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এমটব এবং মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদনকারি পক্ষ থেকে যৌথভাবে প্রস্তাব আসলে পরবর্তীতে এ বিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করতে পারবো।
তিনি বলেন, গ্রাহকের জন্য যে পদক্ষেপ নিলে গ্রাহকরা উপকৃত সেই ধরনের পদক্ষেপ নিবে বিটিআরসি। সবার আগে গ্রাহক স্বার্থকেই বিবেচনা করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।