Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকারের পকেট ভারী গ্রাহকের শূন্য

তরঙ্গ নিলামে আয় ৭ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

মোবাইল অপারেটরদের কাছে ৭ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকায় তরঙ্গ বিক্রি করেছে সরকার। গত সোমবার বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নিলামে এই টাকায় ২৭ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বিক্রি হয়। তবে তরঙ্গ নিলামে সরকারের পকেট ভারী হলেও গ্রাহকের পকেট শূণ্য হবে বলে মনে করে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন। সংগঠনটির সভাপতি দাবী করে বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ আমরা তরঙ্গ বরাদ্দ দিতেও অপারেটরদেরকে নিতে সব পক্ষের সাথে আলোচনা করেছি। কারণ যাতে করে অধিক তরঙ্গ দিয়ে গ্রাহকসেবার মানোন্নয়ন করা হয়। এমনকি প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয় সম্পদের দাম কমিয়েও জনগণের সেবার মান বাড়াতে সরকারের সব পক্ষের সাথে আমরা আলোচনা ও আবেদন করেছিলাম। কিন্তু বর্তমানে দেশে ১৭ কোটি ১৮ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে নিলামে ওঠা ২৭ দশমিক ৪ মেগাহার্জ তরঙ্গ অপর্যাপ্ত। এই তরঙ্গ নিলামের মাধ্যমে সরকার ৭ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা ঘরে তুলতে পারছে। বিনিময় গ্রাহকদের যে কাক্সিক্ষত সেবা পাবার কথা তা খুব একটা অর্জিত হবে বলে মনে হয় না, ফলশ্রæতিতে গ্রাহকদের পকেট শূন্য এ কথা বলা যায়।

এদিকে এবারের নিলামে অংশ নিয়ে মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন (জিপি) ১০ দশমিক ৪, রবি আজিয়াটা ৭ দশমিক ৬ ও বাংলালিংক ৯ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কেনে। তবে সরকারি অপারেটর টেলিটক কোনো তরঙ্গ কিনতে পারেনি। সব মিলিয়ে নিলাম শেষে গ্রামীণফোনের তরঙ্গ ৪৭ দশমিক ৪, রবির ৪৪, বাংলালিংকের ৪০ ও টেলিটকের ২৫ দশমিক ২ মেগাহার্টজ দাঁড়িয়েছে।

মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রাহকরা চাহিদা অনুযায়ী সেবা পেতে পর্যাপ্ত অর্থ ব্যয় করলেও কাক্সিক্ষত সেবা পাবার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, গ্রামীণফোন নিলামে কিনেছে ১০ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। পূর্বের মিলিয়ে ৯০০, ১৮০০ ও ২১০০ ব্র্যান্ড মিলিয়ে সর্বমোট তরঙ্গ দাঁড়ালো ৪৭ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। অর্থাৎ তাদের মোট গ্রাহক ৭ কোটি ৮১ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে তারা ব্যবহার করতে পারবে যে তরঙ্গ তা গ্রাহক অনুপাতে দাঁড়ায় ২০ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে ১ মেগাহার্টজ তরঙ্গ, অথচ জিপির কোম্পানি টেলিনর অন্য দেশে এক লাখ গ্রাহকের বিপরীতে ব্যবহার করছে এক মেগাহার্জ তরঙ্গ। রবি আজিয়াটা ৯০০, ১৮০০ ও ২১০০ ব্র্যান্ড মিলিয়ে সর্বমোট কালকের কেনা তরঙ্গসহ দাঁড়ালো ৪৪ মেগাহার্জ। তাদের বর্তমান গ্রাহক সংখ্যা ৫ কোটি ১৫ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে হিসাব করলে দাঁড়ায় প্রায় ১৩ লাখ গ্রাহকের জন্য এক মেগাহার্জ তরঙ্গ। বাংলালিংকের ৯০০,১৮০০ ও ২১০০ মিলিয়ে দাঁড়ায় ৪০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। তাদের বর্তমানে গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ। অর্থাৎ প্রায় ১০ লাখ ৬০ হাজার গ্রাহকের বিপরীতে এক মেগাহার্টজ তরঙ্গ। আর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টেলিটক নতুন করে তরঙ্গ না কেন তাদের অবস্থান পূর্বের মতোই। টেলিটকের প্রায় ৫৫ লাখ গ্রাহকের বিপরীতে তাদের ব্যবহৃত ২৫ দশমিক ২ মেগাহার্জ তরঙ্গ। অর্থাৎ ২ লাখ ১৫ গ্রাহকের বিপরীতে ১ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। গতকাল নিলামের তরঙ্গ ও পূর্বে ব্যবহৃত তরঙ্গ মিলিয়ে বর্তমানে ৪টি অপারেটর এর মোট ব্যবহৃত তরঙ্গের পরিমাণ দাঁড়াবে ১৫৬ মেগাহার্জ তরঙ্গ। অথচ অন্যান্য দেশে একটি অপারেটরের এর চাইতে বেশি পরিমাণ তরঙ্গ ব্যবহার করে। প্রতিদিনই নিয়ন্ত্রক কমিশনসহ আমাদের কাছেও বিপুল সংখ্যক গ্রাহক সেবার মান সঠিক না পাবার অভিযোগ করে আসছে। আমরা সহ সরকার ও বেসরকারিভাবে দাবি করা হচ্ছিল এতদিন যাবৎ যে স্বল্প পরিমাণ তরঙ্গ ব্যবহার করার কারণেই সেবার মানোন্নয়ন করা যাচ্ছে না। আমরা আশা করেছিলাম সরকার পর্যাপ্ত পরিমাণে তরঙ্গ ব্যবহার যাতে অপারেটররা করে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কিন্তু নিলামে স্বল্প তরঙ্গ বরাদ্দ করা এবং উচ্চমূল্যের ফুলে রাষ্ট্রীয় অপারেটর টেলিটক তরঙ্গ ক্রয় করতে ব্যর্থ হয়েছে। এতেই অনুমেয় যে এই তরঙ্গ নিলামের ফলে এবং স্বল্প পরিমাণ তরঙ্গ বরাদ্দের ফলে গ্রাহক সেবার মান কতটুকু উন্নয়ন হবে সেটি আজ প্রশ্ন দায়ক। তাই আমরা মনে করি এই তরঙ্গ বরাদ্দের ফলে সরকারের পকেট ভারী হবে সত্যি কিন্তু গ্রাহকদের পকেট শূন্য হতে থাকবে, কাঙ্খিত সেবা প্রাপ্তি অপ্রাপ্তিই থেকে যাবে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রক্রিয়া শেষে এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এই তরঙ্গ ব্যবহার শুরু করা যাবে। তখন সেবার মানে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়।
এদিকে তরঙ্গ নিলামের শেষ দিকে ৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ নিয়ে গ্রামীণফোন, রবি ও টেলিটক লড়াই শুরু করে। একসময় টেলিটক ক্ষান্ত দেয়। কিন্তু গ্রামীণফোন ও রবি থামেনি। ৮১ রাউন্ড নিলাম শেষে এই তরঙ্গ গ্রামীণফোন মেগাহার্টজপ্রতি ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার ডলারে কিনে নেয়। শেষ দিকে তরঙ্গের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া নিয়ে বিটিআরসি দুই অপারেটরকে সতর্ক করেছিল। বিটিআরসির কমিশনার এ কে এম শহীদুজ্জামান দুই অপারেটরের উদ্দেশে বলেন, অনেক চড়া দাম অপারেটর ও জাতির জন্য ভালো হবে না। চড়া দামের তরঙ্গ গ্রাহক পর্যায়ে সেবার বাড়তি দামের একটি কারণ।

গ্রামীণফোনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়েন্স বেকার বলেন, অতিরিক্ত এ স্পেক্ট্রামের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগে আরও বেশি অবদান রাখতে এবং শহর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রাহকদের ক্রমবর্ধমান উচ্চগতির ইন্টারনেট চাহিদা মেটাতে গ্রামীণফোনকে আরও বেশি সমর্থ করে তুলবে। সর্বোচ্চ সংখ্যক ফোরজি সাইটের মাধ্যমে বিস্তৃত ফোরজি কাভারেজ নিশ্চিতে অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছে গ্রামীনফোন।

রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, নিলামে যে পরিমাণ তরঙ্গ বরাদ্দ হয়, তা কারও জন্যই যথেষ্ট ছিল না। তিনি বলেন, রবির হাতে যে পরিমাণ তরঙ্গ রয়েছে, তা দিয়ে গ্রাহকদের উন্নতমানের সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ