বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
‘বরকত’ অর্থ হলো- কল্যাণ ও প্রাচুর্য। কোনো জিনিসে বরকত হওয়ার অর্থ হলো, সে জিনিসের মঙ্গলময়তা ও কল্যাণময়তায় প্রাচুর্য সাধন ও তার স্থায়িত্ব লাভ। অর্থাৎ কোনো জিনিসের ইতিবাচক দিকের গুণগত মান বৃদ্ধি পাওয়াই হচ্ছে সেই জিনিসের বরকত। যেমনÑ টাকা-পয়সার বরকত হওয়ার অর্থ, টাকা-পয়সা মঙ্গল ও কল্যাণের পথে ব্যবহৃত হওয়া। যে কাজে টাকা-পয়সা ব্যয়িত হবে, সে কাজের মঙ্গলময়তা ও কল্যাণময়তায় প্রাচুর্য সাধিত হওয়া এবং তার মঙ্গলময়তা ও কল্যাণময়তা স্থায়িত্ব লাভ করা।
টাকা-পয়সায় বরকত হওয়ার অর্থ পরিমাণে টাকা-পয়সা বেড়ে যাওয়া নয়। তবে কখনো সেভাবেও বরকত সাধিত হতে পারে। খাদ্য-খাবারে বরকত হওয়ার অর্থ খাদ্য-খাবার দ্বারা কাক্সিক্ষত মঙ্গলময়তা ও কল্যাণময়তা অর্জিত হওয়া এবং সেই মঙ্গলময়তা ও কল্যাণময়তার স্থায়িত্ব লাভ করা। জীবনের বয়সে বরকত হওয়ার অর্থ মঙ্গলময় ও কল্যাণময় কাজে জীবনের সময় ব্যয়িত হওয়া এবং অল্প সময়ে অনেক ভালো কাজ করতে পারা।
এভাবে জীবনের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে এবং প্রত্যেকটা কাজের মধ্যে বরকত সাধিত হতে পারে, বরকতময় জীবন গড়ে উঠতে পারে যদি আমরা বরকতময় জীবন গড়ে তোলার লক্ষ্যে নির্দেশিত কোরআন-হাদীসের পন্থাসমূহ অবলম্বন করি। নিম্নে জীবনের বেশ কিছু দিকের বরকত অর্জন করার কোরআন-হাদীস নির্দেশিত পন্থাসমূহ উল্লেখ করা হল।
জীবনের সময়ে বরকত অর্জিত হয় নেক আমলের দ্বারা। যে যত বেশি নেক আমল করবে, তার জীবনে তত বেশি বরকত হবে।
হযরত ছাওবান (রা.) কতৃর্ক বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : নেককাজ ব্যতীত অন্য কিছু বয়সকে বাড়াতে পারে না। দোয়া ব্যতীত অন্য কিছু ভাগ্যকে ফেরাতে পারে না, আর মানুষ তার কৃতপাপের কারণে রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৯০)। দোয়া দ্বারা ভাগ্য পরিবর্তন হয়, তা ভাগ্যকে পর্যন্ত পরিবর্তন করে- এ কথার অর্থ হলো, যে ভাগ্য সম্পর্কে লেখা আছে যে, দোয়া করা হলে তা পরিবর্তন হবে, সেগুলোরই পরিবর্তন হয়, নতুবা ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না।
তদ্রƒপ বয়স বাড়ার ক্ষেত্রেও ব্যাখ্যা এই যে, যদি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এরূপ লেখা থাকে যে, অমুক নেক আমল করলে বয়স বৃদ্ধি পাবে, সেক্ষেত্রে সেই নেক আমল দ্বারা তার বয়স বৃদ্ধি পাবে কিংবা এখানে বয়স বৃদ্ধি পাওয়ার দ্বারা বয়সের মধ্যে বরকত হওয়ার কথা বুঝানো হয়েছে। নেক আমল দ্বারা জিন্দেগির সময়ে বরকত হয়ে থাকে। মুস্তাদরাকে হাকিমের এক রেওয়ায়াতে আছে, যারা পিতা-মাতার খেদমত করে তাদের বয়সেও আল্লাহতায়ালা বরকত দান করেন।
সম্পদে বরকত অর্জিত হয় দান-সদকা দ্বারা। আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী সম্পদ ব্যয় করলে, আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয় করলে, দ্বীনের কাজে সম্পদ ব্যয় করলে সম্পদে বরকত হয়। এতে সম্পদ কমে না; বরং বাড়ে। এর বিপরীতে অবৈধভাবে সম্পদ উপার্জন করলে সে সম্পদে আল্লাহ পাক বরকত দেন না। কোরআনে কারিমে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন : সুদকে আল্লাহ মোচন করে দেন, আর দান-সদকাকে বৃদ্ধি করে দেন। (সূরা বাকারা : ২৭৬)।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) কতৃর্ক বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন : সদকা সম্পদকে হ্রাস করে না। ক্ষমা করার দ্বারা আল্লাহ বান্দার ইজ্জত বৃদ্ধি করেন। আর কেউ আল্লাহর উদ্দেশে তাওয়াযু বা বিনয় অবলম্বন করলে আল্লাহ তার মর্যাদা উঁচু করে দেন।’ (সহীহ মুসলিম : ১৫৮৮)।
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস থেকে বুঝা যায় আল্লাহর রাস্তায় দান ও সদকা করা হলে, আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করা হলে, ফরজ ব্যয় হোক বা নফল ব্যয় হোক, যে পর্যায়ের ব্যয়ই হোক না কেন, তার কারণে সম্পদ কমে না; বরং আল্লাহ পাক সম্পদ বৃদ্ধি করে দেন। কখনো সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি করে দেন, কখনো সম্পদের বরকত বৃদ্ধি করে দেন। যখন যেভাবে বৃদ্ধি করা আল্লাহ পাক মোনাসিব মনে করেন, সেভাবেই বৃদ্ধি করে দেন। এর বিপরীতে যারা সুদ বা অবৈধ উপায়ে সম্পদ উপার্জন করে, তাদের সম্পদকে আল্লাহ বরকতহীন করে দেন। তাদের সম্পদে বরকত হয় না। সম্পদ দ্বারা যে উদ্দেশ্য- সুখ-শান্তি অর্জন করা, তা তাদের ভাগ্যে জোটে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।