পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সক্রিয় হয়ে উঠেছে সরকারবিরোধী রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পুরোনো মামলা। টান পড়েছে রেকর্ডরুমে, দীর্ঘদিন পড়ে থাকা ধুলোমলিন ফাইলগুলোতে। দুদকই শুধু নয়- জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সিআইডি, থানাসহ বিভিন্ন সংস্থায় তদন্তাধীন এবং অর্থঋণ আদালত, বিভিন্ন বিচারিক আদালত, ট্রাইব্যুনাল হাইকোর্ট, আপিল বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ে বিচারাধীন রয়েছে এসব মামলা। রাজনৈতিক মাঠ যতই তেঁতে হয়ে উঠছে, ততই নতুন করে সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে পুরোনো মামলা। সরকারবিরোধীদের ওপর চাপ সৃষ্টির সরকারদলীয় কৌশল হলেও- বিষয়টিকে ‘উদ্বেগজনক’ মনে করছেন আইনজ্ঞরা।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন মামলা দায়ের, হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন লাভÑ গত দেড় দশকের নৈমিত্তিক বিষয়। কিন্তু এর সঙ্গে অতিসম্প্রতি যুক্ত হয়েছে পুরোনো মামলায় নতুন গতি সঞ্চার। অন্তত: গত দুই সপ্তাহের আদালত অঙ্গন পর্যালোচনায় এমনটিই পরিলক্ষিত হয়। তবে রাজপথে উত্তাপ যতো বাড়বেÑ রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া পুরোনো মামলাগুলো আরো গতিশীল হবেÑ মর্মে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন আইনজ্ঞরা। সরকারের তরফ থেকেও এমন ইঙ্গিতও মিলেছে ‘সরকারি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলা পরিচালনা কার্যক্রম পরিবীক্ষণ’ সভা থেকে। এ বিষয়ক প্রথম মামলা অনুষ্ঠিত হয় গত মাসে। আগামী ১০ নভেম্বর এ বিষয়ে ডাকা হয়েছে দ্বিতীয় সভা। সরকারি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মামলা কার্যক্রম পরিবীক্ষণে গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সভা থেকেই মামলাগুলোর বিষয়ে দিক-নির্দেশনা আসছে বলে মনে করছেন তারা।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, রাজপথের বিরোধীদল হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সরকার গত ১৪ বছরে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১ লাখেরও বেশি মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৩৫ লাখ নেতাকর্মীকে। মামলাগুলোর বেশিরভাগই ‘গায়েবী’। যেগুলোর বাদী হচ্ছে পুলিশ। লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে যে, এতদিন ‘রাজপথের বিরোধীদল’ বিএনপি-জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও নতুনমাত্রা যুক্ত হয়েছে ‘জাতীয় সংসদের বিরোধীদল’ জাতীয় পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা। বলাবাহুল্য, প্রকাশ্যে সরকারবিরোধী অবস্থান গ্রহণের পরপরই জাপা নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। গতি আসছে পুরোনো মামলায়ও।
মামলাটি দায়ের হয় ১৫ বছর আগে, ওয়ান-ইলেভন-পরবর্তী সরকার আমলে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এ মামলা দায়ের করে। চার্জশিট আমলে নিয়ে গত ২ নভেম্বর হঠাৎ করেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন বিচারিক আদালত। আসামিÑ বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার স্ত্রী ডা: জোবায়দা রহমান। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো: আছাদুজ্জামানের আদালত চার্জশিট আমলে নিয়ে জারি করেন এ গ্রেফতারি পরোয়ানা। আগামী ৫ জানুয়ারি মামলাটির পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে।
২০০৭ সালে দায়েরকৃত দুদকের এ মামলায় গত ২৬ জুন তারেক রহমান ও ডা: জোবায়দা রহমানকে ‘পলাতক’ দেখিয়ে এ বিষয়ক একটি রিট খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। মামলায় উভয়ের বিরুদ্ধে ৪ কোটি ৮২ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। ওইদিন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানিয়েছিলেন, রিট খারিজ করে দেয়ায় মামলাটির বিচারে আইনগত অন্তরায় অপসারিত হলো। বিচারিক আদালতে আবারও মামলাটির কার্যক্রম শুরু হয়। এ প্রক্রিয়ায় সর্বশেষ জারি হয় গ্রেফতারি পরোয়ানা। এ মামলায় তারেক রহমান শাশুড়ি ইকবালমান্দ বানুকে আসামি করা হয়। কিন্তু তিনি হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করলে দুদক পৃথক সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারি করে আলাদা মামলা করে। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার আসামি তারেক রহমান বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হলে তার স্ত্রী ডা: জোবায়দা রহমান রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন।
তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরদিনই গত ৩ নভেম্বর বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের পক্ষে দেয়া রুল খারিজ করে দেন হাইকোর্ট। আদেশের পর দুদকের অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের জানান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার বিচার চলতে আইনগত কোনো বাধা নেই।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ৫ জানুয়ারি মামলা করে দুদক। ৬ মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে একই বছর ৫ জুলাই চার্জশিট দাখিল করে। চার্জশিটে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৮৬ লাখ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। চার্জশিট আমলে নিয়ে বিচার শুরু হলে গয়েশ্বর ২০১০ সালের ৬ আগস্ট মামলা বাতিলের আবেদন করেন। শুনানি শেষে হাইকোর্টের তৎকালিন ডিভিশন বেঞ্চ বিচার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। একই সঙ্গে রুল জারি করেন। চূড়ান্ত শুনানির পর রুলটি খারিজ হয়ে যায়। এতে ফের চালু হয় মামলার বিচার।
আগের মাসে ২৬ অক্টোবর বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাসের মামলা বাতিলের আবেদন খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্ট। ২০০৭ সালে মির্জা আব্বাস ও তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাসের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিল দুদক। এজাহারে তাদের বিরুদ্ধে ৭ কোটি ৫৪ লাখ ৩২ হাজার ২৯০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। ১ বছরের মাথায় ২০০৮ সালের ১৪ মে মামলাটির চার্জশিট দেয় দুদক। একই বছর ১৬ জুন অভিযোগ গঠন হয়। আয়কর আইনে বিচার হওয়ার পরও কেন দুদক আইনে মামলা হবেÑ এ অভিযোগে হাইকোর্টে এসেছিলেন মির্জা আব্বাস। ২০১৮ সালে আবেদনটি খারিজ করেন হাইকোর্ট। এ আদেশের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করলে শুনানি শেষে সেটিও খারিজ হয়ে যায়। এর ফলে বিচারিক আদালতে দুদকের এই মামলার কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়। মামলাটিতে এরই মধ্যে ৪৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
এদিকে পুরোনো মামলার পাশাপাশি সংস্থাটি সরকারবিরোধী রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে নতুন মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুদক। সংস্থাটির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, শিগগিরই সরকারবিরোধী অবস্থানে থাকা বেশ কিছু রাজনীতিকের বিরুদ্ধে নতুন মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মাহমুদের বিরুদ্ধে অবৈধ লেনদেন, মুদ্রা পাচার, অবৈধ সম্পদের অভিযোগ সম্পদ অর্জন অভিযোগের অনুসন্ধান শেষ পর্যায়ে। অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় গত বছর ২৮ আগস্ট তাকে তলব করা হয়। হাইকোর্টে রিট চলমান রয়েছেÑ এই যুক্তিতে আমীর খসরু মাহমুদ জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হননি। তবে রাজধানীর বনানীতে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে প্লট কিনে ‘হোটেল সেরিনা’ প্রতিষ্ঠা, ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা অবৈধ লেনদেনসহ বিভিন্ন দেশে অর্থপাচার এবং নিজ, স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যের নামে শেয়ার ক্রয়সহ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান প্রতিবেদন এখন চূড়ান্ত। কমিশনের অনুমোদন পেলে যেকোনো দিন দায়ের হতে পারে মামলা। অভিযোগটি অনুসন্ধান করছেন সংস্থার উপ-পরিচালক সেলিনা আখতার।
শুধু রাজপথের বিরোধী দল-বিএনপি নয়। জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)র শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধেও দায়ের হচ্ছে মামলা। কারও লেজুড়বৃত্তি করবে নাÑ মর্মে ঘোষণা দেয়ার পরপরই জাপার চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের বিষয়ে অভিব্যক্তির পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে দুদকসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর। সরকারের সঙ্গে থাকা না থাকা বিতর্কে এর মধ্যেই দলটি স্পষ্টতই দু’টি ধারায় বিভক্ত। মশিউর রহমান রাঙ্গাসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। অব্যাহতিপ্রাপ্তদের একজন উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা। অব্যাহতি আদেশ অবৈধ দাবি করে তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। শুনানি শেষে গত ৩১ অক্টোবর ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।
এ দিকে হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে ওটা মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রেক্ষিতে গত ২ নভেম্বর দুদক হাইকোর্টের নির্দেশা অনুযায়ী সংস্থার একজন কমিশনার জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের ঘোষণা দেন। সংরক্ষিত নারী আসনে অর্থের বিনিময়ে মনোনয়ন বিক্রির মাধ্যমে ১৮ কোটি ১০ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়েছেনÑ মর্মে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এদিকে আইনমন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামী ১০ নভেম্বর ‘সরকারি স্বার্থসংশ্লিষ্ট মামলা পরিচালনার কার্যক্রম পরিবীক্ষণের লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডেকেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ সংক্রান্ত দ্বিতীয় সভা এটি। গত ১ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শফিউল আজিম স্বাক্ষরিত সভার নোটিশে সংশ্লিষ্টদের উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানানো হয়। সভায় অ্যাটর্নি জেনারেল, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব, আইনমন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব, সলিসিটরসহ সংশ্লিষ্ট ১১ জনকে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ওই সভা থেকে ‘রাজনৈতিক মামলা’র বিষয়ে নতুন কোনো নির্দেশনা আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে নতুন মামলা দায়ের, পুরোনো মামলার চার্জশিট দাখিল, বিচারাধীন মামলার দ্রুত বিচার নিষ্পত্তির বার্তাও থাকতে পারে। বিষয়টিকে ‘উদ্বেগজনক’ আখ্যা দিয়ে সিনিয়র অ্যাডভোকেট মাহবুবু রহমান বলেন, রাজনৈতিক মাঠ যতই উতপ্ত হচ্ছেÑ পুরোনো মামলাগুলো একের পর এক সচল হয়ে উঠছে। এর মধ্যে নতুন মামলার বিষয়ে সরকারি কোনো নির্দেশনা এলে সেটি রাজনৈতিক মাঠের উত্তাপ আরও বাড়িয়ে দেবেÑ সন্দেহ নেই। আইন এবং আদালত কখনও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হওয়া উচিত নয়। সে ক্ষেত্রে আইন ও বিচার বিভাগ মানুষের আস্থা হারাবে বলেও মন্তব্য করেন সিনিয়র এই আইনজীবী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।