নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
হুট করেই সেমিফাইনাল থেকে এক ম্যাচের দ‚রত্বে নিজেদের আবিষ্কার করল বাংলাদেশ। গুরুত্বপ‚র্ণ টসটা জিতে ব্যবহৃত উইকেটে স্বাভাবিকভাবেই ব্যাটিং নিলেন সাকিব আল হাসান, ১০.৩ ওভারে ৭৩ রানে ১ উইকেট ছিল বাংলাদেশের। পাকিস্তানের শরীরী ভাষায় তখন বলছিল, চাপ তারা অনুভব করছে ভালোভাবেই। সে ওভারে সৌম্য সরকার রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুললেন, সাকিবকে ফিরতে হলো আম্পায়ারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে।
সাকিবের ওই ভুল আউটের পরই যেন বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সুরটা কেটে যায়। ১ উইকেটে ৭৩ রান থেকে মুহূর্তেই বাংলাদেশের স্কোর ৩ উইকেটে ৭৩! অন্যায় সিদ্ধান্তের শিকার হয়ে অধিনায়কের ফিরে যাওয়ার পর আর ঘুরে দাঁড়ানো হয়নি বাংলাদেশের। এরপর মাত্র ৫৩ রানে পড়েছে আরও ৫ উইকেট। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ১২৭ রান করে শেষ হয়েছে বাংলাদেশের ইনিংস। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও ম্যাচশেষে আক্ষেপ করে বলেছেন, ১৪৫-১৫০ রানের স্কোর এ উইকেটে ভালো হতো।
ওই ধসে ফিরে গেছেন ফিফটি করা নাজমুল হোসেন, পাঁচে নামা আফিফ হোসেনও ২০ বলে ২৪ রানের বেশি করতে পারেননি। এ ছাড়া বলার মতো কিছুও সেভাবে করতে পারেননি কেউ। ম্যাচশেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ড্যানি মরিসনের প্রশ্নের জবাবে সাকিব আক্ষেপ করেছেন থিতু কারও শেষ না করে আসা নিয়ে, ‘অবশ্যই। ইনিংসের মাঝপথে ৭০ রানে ১ বা ২ উইকেট ছিল আমাদের। ১৪৫-১৫০ রানের মতো করতে চেয়েছিলাম। এ পিচে সেটি ভালো একটি স্কোর হতো। প্রথম ম্যাচ দেখেছি দক্ষিণ আফ্রিকা ও নেদারল্যান্ডসের। ইনিংসের পরের ১০ ওভারে রান করা কঠিন। সব সময়ই জানতাম, নতুন ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন হবে আমাদের। ফলে থিতু ব্যাটসম্যানদের কাউকে শেষ পর্যন্ত থাকাটা দরকার ছিল। সেটি হয়নি।’
ভারতকে বেশ চেপে ধরার পর ৫ রানে হার, এরপর সেমিফাইনালের হাতছানি থাকা ম্যাচে আবার চাপে ভেঙে পড়া। সুপার টুয়েলভে তাই বাংলাদেশকে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে নেদারল্যান্ডস ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুটি জয় নিয়েই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে এর আগে একবারই একটি ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ, সেটিও ২০০৭ সালে প্রথম আসরে। সাকিবও বলছেন, ফলের দিক দিয়ে এটিই সেরা বিশ্বকাপ তাদের। তবে সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে যে সেটি আরও অনেক ভালো হতে পারত, সাকিব নিজেও বলেছেন সেটি, ‘ফল হিসেবে আমাদের সেরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তবে আমরা সুযোগ পেয়েছিলাম, আরও ভালো করতে পারতাম। তবে নতুন খেলোয়াড় এসেছে, অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এর চেয়ে বেশি আশা করতে পারি না।’
সাকিব সুযোগ বলতে হয়তো ভারতের বিপক্ষে রান তাড়ায় শক্ত অবস্থান থেকে ম্যাচ হারার কথা বুঝিয়েছেন। ফিল্ডিংয়ের কথা আলাদা করে বলেননি তিনি, তবে সেটির কথা মাথায় না থেকে পারে না বাংলাদেশ অধিনায়কেরও। এদিনও যেমন প্রথম ওভারেই মোহাম্মদ রিজওয়ানের ক্যাচ ফেলেন উইকেটকিপার নুরুল হাসান। সরাসরি থ্রোয়ে রানআউটের সুযোগ মিস করেন নাজমুল। এ ছাড়া মিসফিল্ড, ওভারথ্রো থেকে বাউন্ডারি, বোলারদের নো বল তো আছেই! এর বাইরে সাকিব আক্ষেপ করেছেন নিজের পারফরম্যান্স নিয়েও। ত্রিদেশীয় সিরিজে ব্যাটিংয়ে ফর্মটা ভালোই ছিল তার, তবে বিশ্বকাপে ৫ ম্যাচে ৪৪ রানের বেশি করতে পারেননি। বোলিংয়েও বাংলাদেশ অধিনায়ক ৫ ম্যাচে নিয়েছেন ৬ উইকেট, ২৭.৮৩ গড় ও ৮.৭৮ ইকোনমি রেটে বোলিং করে। এখন পর্যন্ত সব কটি বিশ্বকাপেই খেলা সাকিবকে ২০২৪ সালেও দেখা যাবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘আমি জানি না আসলে। বাংলাদেশের হয়ে যত দিন সম্ভব খেলে যেতে চাই। তবে আমাকে ফিট থাকতে হবে, পারফর্ম করতে হবে। অবশ্যই নিজের পারফরম্যান্সের দিক দিয়েও এটি আদর্শ কিছু ছিল না। আরও ভালো করতে পারতাম। তবে হ্যাঁ, ফিট থাকতে পারলে, দলের জন্য অবদান রাখতে পারলে খেলতে ভালো লাগবে।’
অভিজ্ঞ, পরিণত সাকিব যেখানে ক্ষোভ লুকালেন ‘সেরা’ বিশ্বকাপের মোড়কে তরুন দলটির বাকি সদস্যরা ঠিকই উগড়ে দিয়েছেন অসন্তোষ। পেসার ইবাদত হোসেন অফিশিয়াল ব্রডকাস্টার চ্যানেল জিটিভিতে, ওপেনার নাজমুল হোসেন সংবাদ সম্মেলনে আর মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান আফিফ হোসেন বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন মিক্সড জোনে।
সাকিবের আউট নিয়ে ইবাদতের কথা, ‘দেখেন, এ রকম একটা আউট মেনে নেওয়ার মতো নয়। শেষ ম্যাচেও ভুল সিদ্ধান্ত হয়েছে, অনেকগুলোই আমাদের বিপক্ষে গেছে। এমন সিদ্ধান্ত যদি প্রতি ম্যাচে হয়, তাহলে আমাদের মতো দলের পক্ষে ফিরে আসা কঠিন। সাকিব ভাই আমাদের অন্যতম অভিজ্ঞ খেলোয়াড়, ওনার আউট এমন হলে আমাদের জন্য বড় ক্ষতি।’ ইবাদত এখানেই থামেননি। সাকিবের আউটে কী ক্ষতি হয়েছে, সেটাও বলেছেন সরাসরিই, ‘সাকিব ভাই যদি উইকেটে থাকতেন, তাহলে আমাদের বাকি উইকেটগুলোও পড়ত না। ওনার উইকেট আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপ‚র্ণ ছিল। ওনার উইকেটের পরই কিন্তু আরও দুটি উইকেট পড়ে গেছে। উনি যদি উইকেটে থাকতেন, সিদ্ধান্তটা আমাদের পক্ষে এলে তো বাকি উইকেটগুলো পড়ত না।’ এরপর তো বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সব ম্যাচের আম্পায়ারিং নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন ইবাদত, ‘দেখেন, আম্পায়ার দেখেও দেখছেন না। দেখেও ভুল করছেন। এগুলো তো আমাদের বিপক্ষে যাচ্ছে সবকিছু। সব সিদ্ধান্ত আপনাকে মেনে নিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে এসে শান্তর কথার সুর ছিল এ রকম, ‘এটাতে (সাকিবের আউট) সবারই সংশয় ছিল। কিন্তু আমরা ওই উইকেটে নজর দিইনি। আমরা পরে আরও ভালো ক্রিকেট খেলতে পারতাম।’ সাকিবের ওই আউটের পরই দলের মনোযোগটা নড়ে গেছে কি না, প্রশ্নের উত্তরে নাজমুল বলেছেন, ‘আমার কাছে, আমাদের সবার কাছে মনে হয়েছে, আউটটা হয়নি। আমরা নিশ্চিত ছিলাম, আউট হয়নি। সিদ্ধান্ত আম্পায়ারের, এর ওপরে কিছু বলার নেই। আমার কাছে মনে হয়নি মনোযোগ নড়ে গেছে। আমরা ভালো খেলিনি শেষে, মিডল ওভারগুলোতে।’ সাকিবের আউটের পর মাঠে নামেন আফিফ। তাই ওই আউট নিয়ে খুব একটা ভাবার সময় পাননি। ম্যাচ শেষে মিক্সড জোনে তিনি বিষয়টি যেন এড়িয়েই যেতে চাইলেন, ‘যখন ওই আউট দেয়, আমাদেরও সন্দেহ ছিল। তবে এরপর আমি ব্যাটিংয়ে চলে গেছি। তখন ড্রেসিংরুমে কী হয়েছে, আমার জানা নেই।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।