নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
জিরো থেকে হিরো! ফুটবলে এই কথাটার সবচেয়ে বড় উদাহরণ ৮২ সালের পাওলো রসি। এই ইতালিয়ান এমন একজন স্ট্রাইকার ছিলেন, যার ক্লাব বা জাতীয় দলের ক্যারিয়ার কখনোই সেভাবে সমৃদ্ধ ছিল না। কিন্তু এরপরও বিশ্ব ফুটবল ও ইতালিয়ানদের কাছে রসি বিশাল এক আবেগের নাম। অথছ স্পেনে অনুষ্ঠিত ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপে রসির খেলারই কথা ছিল না নিষেধাজ্ঞার কারণে। তবে সেই সময়কার ইতালিয়ান কোচ এনজো বেয়ারজটের একক প্রচেষ্টায় বিশ্বকাপ দলে জায়গা পান রসি। গ্রæপ পর্বের ৩ ম্যাচ ও শেষ ষোলোতে রসি হয়ে ছিলেন নিজের ছায়া। একবারের জন্যও জালের ঠিকানা খুঁজে পাননি। এই স্ট্রাইকারকে ঠিক সেই সময়টাতে, ইতালিয়ান গণমাধ্যম ‘ভ‚ত’ বলে আখ্যায়িত করে। তবে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই দেখা মিললো এক অন্যরকম রসির। সেই ধারা অব্যাহত থাকলো ফাইনাল পর্যন্ত।
ম্যাচ গড়াপেটায় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯৮০ সালে, ‘টোটোনেরো কেলেঙ্কারি’তে অভিযুক্ত হয় সাতটি ইতালিয়ান ক্লাব। আর এই কেলেঙ্কারিতে রসির তখনকার ক্লাব পেরুগিয়াও জড়িত ছিল। ম্যাচ গড়াপেটার দায়ে শুধু ক্লাব না, ক্লাবের খেলোয়াড় ও ম্যানেজাররাও বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি পান, যার মধ্যে পাওলো রসির নামও ছিল। যদিও রসি সবসময়ই এই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন, কিন্তু ইতালির ফুটবল ফেডারেশন তাকে তিন বছরের জন্য সবধরনের ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করে। পরে যা দুই বছরে নেমে আসে। রসি স্পেন বিশ্বকাপের আগে ফুটবল থেকে দূরে ছিলেন। তাই এই স্ট্রাইকারকে ‘আনফিট’ আখ্যা দিয়ে, ইতালিয়ান দলের বাহিরে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন ফুটবল বোদ্ধারা। তবে বেয়ারজটের অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস ছিল রসির উপর।
ইতালি গ্রæপ পর্বে পোল্যান্ড, পেরু ও ক্যামেরুনের বিপক্ষে ড্র করেও নক-আউটে উঠে। সেকেন্ড রাউন্ডে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে বিশ্বয় জাগিয়ে ২-১ গোলের ব্যবধানে জিতে যায় আজ্জুরিরা। এরপরই শেষ আটে ব্রাজিলের ইতিহাসের সেরা দলের বিপক্ষে মুখোমুখি ইতালি। জিকো, স্ক্রেটিসদের নিয়ে গড়া ব্রাজিলের সামনে উড়ে যাবে বেয়ারজটের দল, এমনটাই ধারণা ছিল সারা বিশ্বের। তবে কেবল রসিই এই মতবাদের বিপক্ষে ছিলেন। ইতালিয়ান কোচের একটা পরামর্শেই সেলেসাওদের বিধ্বস্ত করেছিলেন ইতালিয়ান স্ট্রাইকার, ‘খেলার আগে, বেয়ারজোট আমাকে ব্রাজিলের দুই ধীরগতির সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার অস্কার এবং লুইজিনহোকে চাপ দিতে বলেছিলেন, তারা ডিফেন্সিভ অ্যাওয়ারনেসে দারুণ থাকলেও খুবই ধীর গতির ছিল। বেয়ারজোটের ধারনা ছিল, ক্রমাগত চাপে রাখলে সেলেসাও দুই ডিফেন্ডার ভুল করবেই।’
রসি সেই ট্যাকটিস অনুযায়ী খেলে তার কোচকে সঠিক প্রমাণ করলেন। ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচের ৫ মিনিটের সময় ক্ষিপ্রতার সঙ্গে এগিয়ে গিয়ে ক্যাবরিনির ক্রস থেকে হেডে গোল পান রসি। সক্রেটিস ৬ মিনিট পরেই অসাধারণ একক নৈপুণ্যে সমতায় ফেরান ব্রাজিলকে। ম্যাচের ২৫ মিনিটে আবারও প্রেসিং ফুটবলের মাধ্যমে বল জেতেন রসি, এরপর ডি বক্সের বাইরে থেকে গতিময় এক শটে পরাস্ত করেন প্রতিপক্ষ কিপার ভালদির পেরেসকে। ২-১ গোলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় ব্রাজিল। তবে ম্যাচের ৭৮তম মিনিটে ডিবক্সের বাইরে থেকে নেওয়া ফ্যালকাওয়ের বাঁ পায়ের এক দর্শনীয় শটে দ্বিতীয়বারের মত সমতায় ফেরে সেলেসাওরা। কিন্তু ঠিক তার ৬ মিনিট পরে টিপিক্যাল ইতালিয়ান ‘চোরাগুপ্তা হামলায়’ হ্যাটট্রিক পূরন করেন রসি। সর্বকালের সেরা ব্রাজিল দলকে (যারা কখনোই বিশ্বকাপ জেতেনি) ৩-২ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠে যায় ইতালি।
অন্যদিকে স্মরণীয় হ্যাটট্রিকে সমালোচকদের চুপ করিয়ে দিয়েছিল রসি। এই স্ট্রাইকারের উপর বিশ্বাস রেখেছিলেন কেবল একজন ব্যক্তিই। ম্যাচ শেষে তার কাছেই ছুটে গেলেন তিনি। রসি বলেন, ‘খেলার পরে আমি শুধু বিয়ারজোটকে খুঁজলাম। সেই অবিশ্বাস্য জয়, অর্জন এবং অবিস্মরণীয় মুহ‚র্তগুলোর জন্য আমি বসের কাছে ঋণী ছিলাম। আমি তাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম, শুধু আলিঙ্গন করেছিলাম। কোন কথা বলার দরকার ছিল না। তাছাড়া আমি খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম।’ দুই বছরের নিষেধাজ্ঞার পরে এমন একটি মুহূর্ত রসির জীবনে এলো, যা তাকে স্বর্গীয় সুখ দিয়েছিল। সেই দিকটা ইঙ্গিত করে এই ইতালিয়ান জানান, ‘আমি মনে করি সেই মুহূর্তে আমি জীবনে সবচেয়ে সুখী ছিলাম। বছরের পর বছর কষ্ট, সন্দেহ, যন্ত্রণার পরে, এমন একটা মুহূর্ত এসেছিল জীবনে যা আমাকে উড়িয়ে নিচ্ছিল বাতাসে।’
রসি সেমিফাইনালে পোল্যান্ডের বিপক্ষে পেয়েছিলেন আরও দুই গোল। এমনকি ফাইনালে জার্মানিকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে ইতালির চ্যাম্পিয়ন হওয়া ম্যাচেও একবার লক্ষ্যভেদ করেছিলেন। বলতে গেলে তার একক প্রচেষ্টায় ইতালি তৃতীয়বারের মত বিশ্বসেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিল। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় ও সর্বোচ্চ গোলস্কোরার- দুটি পুরষ্কারই নিজের করে নেন রসি। তবে এতোকিছুর পরও তার কাছে প্রিয় ব্রাজিলের বিপক্ষে পাওয়া জয়টি, ‘ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আবেগপূর্ণ ছিলাম সবাই। সব অসাধারণ খেলোয়াড়ে পূর্ণ ছিল সেই (ব্রাজিল) দলটি। এটা অবশ্যই আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলা ছিল।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।