Inqilab Logo

সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

২০১০ : সুয়ারেজের ‘অবৈধ আত্মত্যাগ’

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রথম আসরসহ বিশ্বকাপে সর্বমোট দুইবারের চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ে। তবে সবশেষ ৫০ বছরের মধ্যে, লাতিন আমেরিকার দেশটির সবচেয়ে বড় সফলতা আসে ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে। সেবার চতুর্থ হয়ে আসর শেষ করা উরুগুয়ের খেলা, দাগ কেটেছিল ফুটবল প্রেমীদের হৃদয়ে। দিয়াগো ফোরলান সেবার অসাধারণ ফুটবল খেলে জিতেছিলেন ‘গোল্ডেন বল’। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে ঘানার বিপক্ষে সেই সময়ের তরুণ লুইস সুয়ারেজ দারুণ এক কীর্তি গড়েন। যা আজ পর্যন্ত বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আত্মত্যাগের ঘটনা হিসেবে গন্য করা হয়। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে সেই ম্যাচে কোন গোল বা এসিস্ট করেননি সুয়ারেজ।
ঘানা-উরুগুয়ের ম্যাচটি পরিচালনা করছিলেন ওলেগারিও বেনকোরেঙ্কা। এই পর্তুগিজ রেফার বিরতির বাঁশি বাজানোর ঠিক আগ মুহুর্তে ৩৫ গজ দূর থেকে দর্শনীয় এক গোল করে বসেন ঘানার সুলে মুলতানি। উরুগুয়ের গোলকিপার ফার্নান্দো মুসলেরা বাঁ দিকে ঝাপ দিয়ে থামানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মুলতানির আচমকা নেওয়া শর্টে এতো গতি ছিল যে, গোলরক্ষকের কিছুই করার ছিল না। ঘানা বিরতিতে যায় প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে বিশ্বকাপের শেষ চারে উঠার স্বপ্ন নিয়ে। তবে দ্বিতিয়ার্ধের ১০ মিনিটের মধ্যেই ফোরলান সমতায় ফেরান উরুগুয়েকে। তাতে চিন্তার ভাঁজ পরে আফ্রিকার দলটির খেলোয়াড়দের কপালে। নির্ধারিত সময়ে কোন দলই আর গোল করতে না পারলে অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় খেলা।
সেই অতিরিক্ত সময়েরও একদম শেষ মুহূর্তে শুরু হয় নাটক। ডমিনিক আদিয়াহের নেওয়া শর্ট ঢুকে যাচ্ছিল উরুগুয়ের জালে। যদি গোল হতো, তাহলে লাতিন দলটির বিদায় ঘন্টা বেজে যেত তখনই। কারণ ম্যাচে ফিরে আসার কোন সময়ই ছিল না। উরুগুয়ের গোললাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন দলটির স্ট্রাইকার সুয়ারেজ। কিছু না ভেবেই তিনি হাত দিয়ে আদিয়াহের শর্ট থামিয়ে দিলেন। সেই সময় আয়াক্সে খেলে সুয়ারেজকে তখনই লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠে থেকে বের করে দেওয়া হয়। কিন্তু উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার দাঁড়িয়ে ছিল টেনেলের একদম কাছে গিয়ে। কারণ পেনাল্টি থেকে যদি ঘানা গোল পায়, তাহলে তার এই ‘অবৈধ প্রচেষ্টা’ মূল্যহীন হয়ে যাবে।
পেনাল্টি কিক নিতে আসলেন আসোমা জিয়ান। এই স্ট্রাইকার স্নায়ুচাপেই বল মারলেন বারে। বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালটাই যেন হাত থেকে ফেলে দিয়েছিলেন এই ঘানায়ান স্ট্রাইকার। পেনাল্টি কিক থেকে যখন ঘানা গোল করতে ব্যর্থ হয়, তখন টানেলের পাশে দাঁড়ানো সুয়ারেজের উদযাপন ছিল বাধনহারা। জোহানেসবার্গের সকার সিটি স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে আসা ঘানার সমর্থকরা সেই সময় একদমই ভেঙ্গে পড়েছিল। সেই ছাপ লেগেছিল দলটির ফুটবলারদের মধ্যেও। টাই-ব্রেকে ৫-৩ ব্যবধানে হেরে যায় তারা। শেষ হয়ে যায় সেমি ফাইনালে উঠার স্বপ্ন।
ম্যাচশেষে স্বাভাবিকভাবেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন সুয়ারেজ। তবে গণমাধ্যমে কথা বলার সময় তিনি কিছুটা বিতর্কের আশ্রয় নিলেন। নিজের অবদানকে মহামান্যিত করার জন্য এই স্ট্রাইকার টেনে আনলেন ১৯৮৬ সালের আর্জেন্টিনা-ইংল্যান্ড ম্যাচটি। যেখানে ম্যারাডোনার হাত দিয়ে করা গোলে ইংলিশদের হারিয়েছিল আর্জেন্টাইনরা। সুয়ারেজ বলেন, ‘আমার আসলে “হ্যান্ড অফ গড”। আমি দলকে টুর্নামেন্টে টিকিয়ে রেখেছি।’ এরপর রসিকতার আশ্রয় নিয়ে বলেন, ‘কখনও কখনও প্রশিক্ষণে আমি গোলরক্ষক হিসেবে খেলি। সেই প্রশিক্ষণ মূল্যবান সময়ে কাজে লাগলো।’
সুয়ারাজের বিশ্বকাপ শেষ হবার ৬ মাস পরই যোগদেন লিভারপুলে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে খালের সময় প্রিতপক্ষ ফুটবলার প্যাট্রিক এভরাকে বর্ণবাদী গালি দিয়ে নিষেধাজ্ঞায় পড়েন। এমনকি ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে ইতালির জর্জিও কিয়েল্লিনিকে কামড় দিয়েও ফিফার ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞায় ছিলেন। গোটা ক্যারিয়ারেই এই স্ট্রাইকার ছিলেন বিতর্কিত। তবে সবকিছুর পরও ঘানার বিপক্ষে তার সেই অবৈধ রক্ষণটা দারুণ ব্যাপার তার দেশের মানুষের কাছে। আজও উরুগুইয়ানদের নিকট সুয়ারেজের সেই ‘হ্যান্ডবল’টা দারুণ এক আত্মত্যাগ হয়েই আছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ