Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

২০১৪ : মিরোস্লাভ ‘সমেরসোল্ট’ ক্লোসা

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

আন্তর্জাতিক ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে মর্মান্তিক ম্যাচ হিসেবে গন্য করা হয় ২০১৪ বিশ্বকাপের ব্রাজিল-জার্মানির মধ্যকার সেমিফাইনাল ম্যাচটি। সেদিন মেনেয়রাও স্টেডিয়ামের ৬০ হাজার দর্শককে কাঁদিয়ে ব্রাজিলকে ৭-১ ব্যবধানে বিদ্ধস্ত করেছিল জার্মানরা। এই ম্যাচের ১ গোল করে মিরোসøাভ ক্লোসা বনে যান ফিফা বিশ্বকাপের সর্বকালের শীর্ষ গোলস্কোরারে। রোনালদো নাজারিওর ১৫ গোলের মাইলফল টপকে, বিশ্বকাপের আসরে ১৬ গোলের মালিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন জার্মান প্লে-মেকার।
কিছু ফুটবলার থাকে, যারা ক্লাবে ৪ মৌসুম গড়পরতা খেলে। তবে বিশ্বকাপ আসলেই ভিন্নরূপ ধারণ করে। ক্লোসা ছিলেন সেই ধরনের এক স্ট্রাইকার। গোটা ক্লাব ক্যারিয়ারে মাত্র ২৫৮ গোল করা এই স্ট্রাইকার, জাতীয় দলে করেছিলেন ৭১ গোল। অনেক ফুটবল বোদ্ধা এমনও বলেন যে, ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে ক্লোসাকে দলে রাখা হয়েছিল, কেবল সর্বোচ্চ গোল স্কোরারের রেকর্ড গড়ার জন্য। ব্রাজিলে সেই আসরে, গ্রুপ পর্বে ঘানার বিপক্ষে গোল করেই চারটি বিশ্বকাপে গোল করা তৃতীয় প্লেয়ারে পরিণত হয়েছিলেন এই জার্মান। একই সঙ্গে নাজারিওর সমান ১৫ গোলের মাইলফকও স্পর্ষ করে ফেলেন ক্লোসা।
গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে গোল পেলেও, ক্লোসা পরের ৩ ম্যাচ ছিলেন গোল শূন্য। সেমিফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে গোলবন্যার ম্যাচে দ্বিতীয় গোলটি করেন ক্লোসা। যদিও ম্যাচে জার্মানরা আরও ৬ গোল পেয়েছিল। তবে তাদের দেখে মনে হচ্ছিল, সকল অপেক্ষায় ছিল ক্লোসার গোলটির জন্য। টনি ক্রুসের থ্রু বলটি থমাস মুলার বাড়িয়ে দেন ক্লোসাকে। সেই সময়ের ৩৬ বছর বয়সী ক্লোসা প্রথম টাচেই তা গোলের দিকে শট নিলে তা ব্রাজিল গোলরক্ষক জুলিও সিজার প্রতিহত করেন। তবে দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ঠিক বল জালে পাঠিয়ে দেন তিনি। অনন্য এক মুহূর্তের সৃষ্টি হয় জার্মান শিবিরে। বিশ্বকাপ ফুটবলের সর্বোচ্চ গোলের (১৬টি) মালিকও তখন এক জার্মান স্ট্রাইকার।
ক্লোসা সাধারনত উল্টো হয়ে লাফ দিয়ে (ডিগবাজী), তার গোল উদযাপন করতেন গোলের পর। এই কারণে তার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘সমেরসোল্ট’। কিন্তু মাইলফলক অর্জন করে, তিনি তার উদযাপন নিয়ন্ত্রণ করলেন। পাখির ডানার মত হাত মেলে দৌড় দিলেন সামনে, এরপরই হাঁটুর উপর ঘাসে সøাইড করলেন। আর কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তার টিমমেটদের দিকে তাকালেন আঙুল তুলে। নতুন রেকর্ড গরার পর, ক্লোসা যতটা না আবেগী ছিলেন, তার চেয়ে বেশি দেখা গেল সকল সতীর্থদের। ক্রুস, মুলার, ফিলিপ লামরা এমনভাবে উদযাপন করছিলেন, যেন গোলট তারাই করেছেন।
ফিফাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অস্বাভাবিক শান্ত ও বিনয়ী থাকলেন জার্মান স্ট্রাইকার। ক্লোসা নম্রভাবেই জানালেন তিনি অসাধারণ এক কৃতী করেছেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে একজন আইকন হিসাবে ভাবি না, তবে এটি অবশ্যই একটি অবিশ্বাস্য জিনিস। বিশ্বকাপে ১৬ গোল করা এমন একটি বিষয় যা নিয়ে মানুষ সাধারণত স্বপ্ন দেখে।’এতকথার মাঝে নিজের দলকে ভুললেন না এই স্ট্রাইকার, ‘আমি বরাবরের মতো আমার দলকে কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাতে চাই। কারণ তাদের ছাড়া এটি কখনই করতে পারতাম না।’
দক্ষিণ কোরিয়া-জাপানে অনুষ্ঠিত ২০০২ বিশ্বকাপে ক্লোসা করেছিলেন এক হ্যাটট্রিক সহ ৫ গোল। সঙ্গে ছিল ২ এসিস্ট। সমান সংখ্যক গোল ও এসিস্ট করেন, চার বছর পরে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত আসরেও। দক্ষীণ আফ্রিকাতে ২০১০ সালের বিশ্বআসরে ক্লোসা পান ৪ গোল। আর ব্রাজিল বিশ্বকাপে ২ গোলের সঙ্গে পেয়েছিলেন ১ এসিস্ট। তিনিই একমাত্র ফুটবলার যে, বিশ্বকাপে ৫টি গোল হেড দিয়ে করেছেন।
ব্রাজিল বিশ্বকাপেই ক্লোসার গড়া রেকর্ডটি পূর্ণতা পায় জার্মানদের শিরোপা জেতার মাধ্যমে। নিজেদের শোকেসে যা শোভা পাচ্ছে চতুর্থ শিরোপা হয়ে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ