বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
এই পৃথিবীতে সর্ব শক্তিমান আল্লাহ মানুষকে ‘খলিফা’ বা প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেছেন। প্রতিনিধির কাজ হলো মূল মালিকের নির্দেশ মোতাবেক এই দুনিয়ায় দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা এবং এই ধরণীকে সকল প্রকার পাপ ও পঙ্কিলতা হতে বিমুক্ত রাখা। কিন্তু চলমান বিশ্বের মানুষ আল্লাহর পছন্দনীয় জীবন ব্যবস্থার কথা ভুলে গেছে। বিস্মৃত হয়েছে তাঁর নিদর্শনাবলী। শুধু তাই নয়, মানুষ আজ আল্লাহর সাথে পাল্লা দিয়ে নিজেদের ক্ষমতা ও দক্ষতা প্রদর্শনে কুণ্ঠা বোধ করছে না।
এমন অবস্থার অবতারণা ঘটবে, আল্লাহপাক আগেভাগেই জানতেন। আর জানতেন বলেই তিনি আল কোরআনে ঘোষণা করেছেন : ‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সাগরে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে; ফলে, তিনি তাদেরকে তাদের কোনো কোনো কাজের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা ফিরে আস’। (সূরা আররূম : আয়াত-৪১)।
এই আয়াতে কারিমায় মহান আল্লাহপাক অত্যন্ত সহজ-সরল ভাষায় ঘোষণা করেছেন যে, ভূমণ্ডলে ও জলধিবক্ষে তথা সারা বিশ্বে মানুষের কৃতকর্মের বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। এখানে ফ্যাঁসাদ বা বিপর্যয় বলতে অন্যায়, অবিচার, দুর্ভিক্ষ, মহামারি, জুলুম-নির্যাতন অগ্নিকাণ্ড, ভূমিকম্প, পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার ঘটনাবলির প্রাচুর্য সকল বস্তু হতে বরকত উঠে যাওয়া, উপকারী বস্তুর উপকার কম হওয়া এবং ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়া, মানবিক গুণাবলী লোপ পাওয়া, অন্যায় ও মন্দকর্মের প্রতিকার না হওয়া ইত্যাদি আপদ-বিপদকে বোঝানো হয়েছে। (তফসিরে কুরতুবী, তাফসিরে মায়ালিমুত্ তানজীল)।
অন্য এক আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত এই বিপর্যয়ের কারণ বিশ্লেষণ করে ইরশাদ করেছেন : ‘তোমাদেরকে যে সকল বিপদ-আপদ স্পষ্ট করে, সেগুলো তোমাদেরই কৃতকর্মের কারণে হয়ে থাকে। অনেক গোনাহ তো আল্লাহপাক ক্ষমা করেছেন।’ (সূরা আশ্-শূরা : আয়াত-৩০)। এই ঘোষণার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য এই যে, এই পৃথিবীতে বিপদাপদের সত্যিকার কারণ হলো মানুষের গোনাহ। যদিও দুনিয়াতে এ সকল গোনাহের পুরোপুরী প্রতিফল ও শাস্তি দেয়া হয় না এবং প্রত্যেক গোনাহের কারণেই বিপদ আসে না, বরং অনেক গোনাহ তো ক্ষমা করে দেয়া হয়।
তবে, একথা সত্য যে, সকল গোনাহের কারণে বিপদ আসে না, বরং কোনো কোনো গোনাহের কারণেই বিপদ আসে। এই পৃথিবীতে প্রত্যেক গোনাহের কারণে বিপদ বা বিপর্যয় আসলে একজন মানুষ ও দুনিয়াতে বেঁচে থাকত না। আল কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত এ বিশেষত্বটি এভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এরশাদ হয়েছে : ‘আল্লাহ পাক যদি মানুষকে তাদের সীমালংঘনের জন্য শাস্তি দিতেন, তাহলে ভূপৃষ্ঠে কোনো জীব-জন্তুকেই রেহাই দিতেন না, কিন্তু তিনি একটা নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদের অবকাশ দিয়ে থাকেন।’ (সূরা আন্নাহল : আয়াত-৬১)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।