মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
পশ্চিমাদের এখনই আলোচনায় বসার সময়
যতো দিন গড়াচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিপজ্জনকভাবে প্রলম্বিত হচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্রসর হচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইউক্রেনকে আরও বেশি অস্ত্র সরবরাহের করায়, প্রত্যুত্তরে রাশিয়াও দ্বিগুণ শক্তিতে এর মোকাবেলা করছে এবং পারমাণবিক অস্ত্রের সম্ভাব্য ব্যবহারের ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদি রাশিয়া পারমাণবিক আক্রমণ করে বসে, ন্যাটোও সরাসরি যুদ্ধে জড়িত হবে। এমনটি ঘটলে অচিরেই একটি তৃতীয় বিশ^যুদ্ধের সূত্রপাত হবে এবং একটি পারমানবিক যুদ্ধ সমগ্র ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে, যা পৃথিবী জুড়ে মহাবিপর্যয়ের সৃষ্টি করবে। কিন্তু, এর ফলে, পরিশেষে কেউ লাভবান হবে কি? তাই ইউক্রেনকে সহায়তার মূল্য তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নয়। বরং আরও একটি বিশ^যুদ্ধ এড়াতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ইউক্রেনকে রাশিয়ার সাথে আলোচনার টেবিলে বসানোর এখনই আদর্শ সময়।
এই মুহূর্তে পশ্চিমা দুনিয়া রাজনৈতিক মেরুকরণ, অর্থনৈতিক মন্দা এবং আদর্শিক চরমপন্থার সম্মুখীন। ইউরোপীয়রা জ¦ালানী মূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং চরম গ্যাস ঘাটতির মুখোমুখি হয়ে শীতের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ এবং চীনের সাথে তীব্র প্রতিদ্ব›িদ্বতার পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদেরকে ব্যাপকহারে গণমুক্তির আন্দোলন এবং ক্ষুব্ধ ও মত-বিভক্ত ভোটারদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং ক্রমবর্ধমান অর্থ মন্দার প্রভাব পশ্চিমা শাসনতন্ত্রের জন্য অভ্যন্তরীণ হুমকি বাড়িয়ে তুলছে এবং ইউক্রেনকে সমর্থন করার সংহতিতে চাপ সৃষ্টি করছে। এর মধ্যে, ইতালীতে রাশিয়াপন্থী জোট জ¦ালানী খরচ এবং মুদ্রাস্ফীতিকে কেন্দ্র করে প্রচারণা চালিয়ে নির্বাচনে জিতেছে। জার্মানি এবং ফ্রান্সের কোনরকমে রাজনৈতিক টিকিয়ে রেখেছে। কিন্তু ইউক্রেনকে ভারী অস্ত্রের জোগান দেয়া নিয়ে জার্মানির সরকারের মধ্যে মত বিরোধ দেখা দিয়েছে। জার্মান নীতি নির্ধারকরা টেকসই জ¦ালানী বিলের সম্মুখীন হয়েছে, এবং ফ্রান্স শ্রম ধর্মঘট এবং জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় নিয়ে ব্যাপক বিক্ষোভে বিপর্যস্ত।
একদিকে, ইউক্রেনকে সাহায্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য উদার গণমুক্তির আন্দোলনের এবং আটলান্টিকের উভয় পাড়ের ঐক্যমতের বিভাজনের একটি উর্বর ভ‚মিতে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে, ক্রমবর্ধমান পণ্যমূল্যের পটভ‚মিতে রিপাবলিকানরা মার্কিন মধ্যবর্তী নির্বাচনে হাউসের নিয়ন্ত্রণ নিতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে। কংগ্রেসে একটি নতুন রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে সম্ভবত ‘আমেরিকা প্রথম’ নীতিতে বিশ^াসী ক্রমবর্ধমান সংখ্যক প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ওহাইওর রিপাবলিকান প্রার্থী জে.ডি. ভ্যান্স, ইউক্রেনের যুদ্ধে সিনেটের মনোভাবের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, ‘ইউক্রেনের সাথে এক বা অন্যভাবে কী ঘটবে তা আমি সত্যিই ভাবি না।’ যদিও তিনি পরে তার মন্তব্য থেকে পিছিয়ে গেছেন, কিন্তু ভ্যান্স একাই কিয়েভকে সমর্থন করার বিষয়ে হিসাবি নন। সংখ্যালঘু নেতা কেভিন ম্যাকার্থি সম্প্রতি বলেছেন যে, রিপাবলিকানরা হাউসের নিয়ন্ত্রণ জিতলে ইউক্রেন আর ‘বø্যাঙ্ক চেক’ পাবে না।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নিজ দল থেকে ইউক্রেন নিয়ে বিরোধিতা, আলোচনায় বসার জন্য এলন মাস্কের মতো দুরিয়ার সেরা ব্যবসায়ীদের ক্রমবর্দমান দাবিসহ অভ্যন্তরীণ চাপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা আর কতদূর ইউক্রেনকে অবারিত সাহায্য দিতে পারবেন, তা ধীরে ধীরে অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। তাই, শীঘ্রই পশ্চিমা জোটের প্রয়োজন ইউক্রেন এবং রাশিয়াকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে যাওয়া, যুদ্ধ বন্ধ করার এবং একটি আঞ্চলিক মীমাংসার জন্য একটি ক‚টনৈতিক প্রচেষ্টার মধ্যস্থতা করা। যদিও এই কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সহজে একটি শান্তি চুক্তি তৈরি করতে ব্যর্থ হতে পারে, তবুও এটি রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে একটি বৃহত্তর যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি এবং হত্যা ও ধ্বংযজ্ঞের অবসান, বিশ্ব অর্থনীতির মন্দা হ্রাস এবং আটলান্টিকের উভয় তীরে স্থিতিশীলতা স্থাপনের ক্ষেত্রে আশাবাদী করে। এই ধরনের চুক্তির দালালি করার জন্য ওয়াশিংটনের প্রচেষ্টা মস্কোর সাথে যোগাযোগের একটি চ্যানেলও খুলে দেবে।
ভিয়েতনাম থেকে আফগানিস্তান থেকে ইরাক পর্যন্ত পশ্চিমারা আজ অবধি কৌশলগত স্বার্থ-ঝুঁকিতে পড়েনি। কিন্তু, ইউক্রেনকে আরও যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাওয়ার পশ্চিমা প্রচেষ্টা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে গড়ালে সেটি যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্রদের পাশাপাশি সমগ্র বিশ^কে স্বার্থ ও অস্তিত্ব ঝুঁকিতে ফেলবে। সেকারণে, জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক অধ্যাপক এবং কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনের সিনিয়র ফেলো চার্লস এ. কুপচান সম্প্রতি দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি কলামে বলেছেন, ‘বিশ^ব্যাপি ধ্বংস ও বিপর্যয় এড়ানোর জন্য রাশিয়া এবং ইউক্রেনকে আলোচনার টেবিলে বসানোর এখনই উপযুক্ত সময়।’ তথ্যসূত্র : দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স, ইন্টারনেট। লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।