Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কোকা গাছের পাতা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৪ নভেম্বর, ২০২২, ১:২২ এএম

পুপো লেক। এক সময় বলিভিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম হ্রদ হিসাবে খ্যাতি পেয়েছিল। আবহাওয়া পরিবর্তনের ধাক্কায় শতাব্দী-প্রাচীন এই হ্রদ এখন স্থানীয়দের কাছে শুধুই সোনালি অতীত। আদিবাসী অধ্যুষিত এ অঞ্চল এখন দেশটির সবচেয়ে অনুর্বর এলাকাগুলোর একটি। এখানকার অধিবাসীরা ফসলের ক্ষেত্রে সেচ দিতে নির্ভর করতেন পুপোর পানির ওপর। সেদিন আর নেই। জমিতে ফসল নেই, হ্রদে পানি নেই; তাই মাছও নেই। পুপোর স্বচ্ছ পানিতে যে নৌকা নিয়ে মাছ ধরায় উচ্ছল দিন পার করতেন জেলেরা, সে নৌকা এখন স্থানীয় শিশুদের খেলনা। খাদ্যের অভাবে স্থানীয়রা আদিম মানুষের মতো চিবোচ্ছেন গাছের পাতা। উরু আদিবাসী স¤প্রদায়ের সদস্য ফেলিক্স মাউরিসিও একজন জেলে ছিলেন। এখন তার বয়স ৮২। জীবনে এই প্রথম কঠিন আবহাওয়া-সন্ত্রাসের শিকার এই বৃদ্ধ। ফাপা উদর নিয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন স্থানীয় অনুর্বর প্রকৃতির দিকে। আর ক্ষুধাদানবের অত্যাচার সামাল দিতে মাঝে মাঝে বাধ্য হয়েই চিবোতে থাকেন কোকা গাছের পাতা। এখানে দাঁড়িয়েই তিনি কল্পনা করেন- একদিন কত বড় বড় মাছ ধরেছিলেন এই হ্রদ থেকে। জালে ধরা পড়া সবচেয়ে ছোট মাছটিও হতো ৩ কেজির সমান। ৩৬ বছর আগে, ১৯৮৬ সালে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত ছিল পুপোর লেক এলাকা।
কিন্তু বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, দিনেদিনে বলিভিয়ার উচ্চ সমভ‚মি এলাকায় কৃষিকাজ ও খনি ব্যবস্থাপনায় পানি উত্তোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হ্রদটি। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাব। হাতেগোনা কিছু গাছ থাকলেও সেগুলোতে পাখি নেই। সব গাছে ফল হয় না, ফুলও না। স্মৃতি হাতড়ে মৌরিসিও বলেন, ১৯১৫ সালে ওরোরোর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি গ্রাম পুনাকা তিনতা মারিয়াতে বসতি স্থাপন করেছিলেন তার দাদা-দাদিরা। সেখানে পুপো হ্রদের পানি প্লাবিত হওয়ায় ওই এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন তারা। এখন সবই শুকিয়ে গেছে। প্রায় ৮৪টি স্থানীয় পরিবারের প্রায় সবাই চলে গেছেন অন্যত্র। থেকে গেছে শুধু সাতটি পরিবার।
২০১৩ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে পুনাকা তিনতা মারিয়া, লাপাল্লাপানি এবং ভিলানেকের বসতি এলাকায় উরু আদিবাসী স¤প্রদায়ের প্রায় ৬০০ সদস্য বসবাস করতেন। পরবর্তী সময়ে তারা কাজ ও খাদ্যের সন্ধানে এসব এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। পাড়ি জমান বলিভিয়া অথবা পেরুর মূল ভ‚খÐে। বলিভিয়ার ক্ষমতাসীন এমএএস পার্টির সিনেটর লিন্ডাউরা রাসগুইডো অক্টোবরে এখানে এক সফরে এসে বলেছিলেন, ‘আমরা যদি আবহাওয়া সতর্কতাগুলো না-মেনে চলি, তাহলে উরুরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। সূত্র : এএফপি।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ