Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১৯৯০ : ম্যারাডোনার সামনে অ্যালামও আর্জেন্টাইন!

আর মাত্র ১৭ দিন...

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

মেক্সিকোতে ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন খানিকটা একক প্রচেষ্টায়। তবে চার বছর পরে ইতালিতে, অনেকটাই আন্ডারডগ হিসেবে আবির্ভাব ঘটে আর্জেন্টিনার। আগের বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা, বহু ধুঁকার পর গ্রæপ পর্বের বাধা পার করে ইতালিতে। তবে স্বস্তির নিশ্বাস নিতে পারেনি আলবিসেলেস্তারা। কারণ শেষ ষোলতেই তারা মুখোমুখি হয় আসরের সভচেয়ে বড় দাবিদার ব্রাজিলের। তবে যখনই দল তলানিতে ঠেকে যেত, তখনই ত্রাণকর্তা হিসেবে ডিয়েগো ম্যারাডোনার আবির্ভাব ঘটতো। ব্রাজিলের বিপক্ষেও সেদিনও শেষ মুহ‚র্তে জাদুর ছোঁয়ায় ম্যাচের ভাগ্য বদলে দিয়েছিলন ‘ফুটবল ইশ্বর’।
গ্রেট ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে আত্মবিশ্বাসের অভাব ভুগতে খুব কম সময়ই দেখা গিয়েছে। কিন্তু সেই ম্যাচের আগে গ্রেটেস্ট অব অল টাইম বলে বসলেন, ‘ব্রাজিলিয়ানরা খুব শক্তিশালী-আমাদের চেয়ে ভালো।’ এই বিবৃতিতে কোন মিথ্যা বিনয় ছিল না। সত্যি বলতে ব্রাজিল একটি একতরফা ম্যাচ উপহার দিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা দিবে, এমনটাই ধরে নিয়েছিল সারা পৃথিবী। কিন্তু সবকিছু কি আর কাগজ-কলমের হিসেবে চলে? বিশেষ করে প্রতিপক্ষ দলে যখন ম্যারাডোনা খেলেন, তখন আপনাকে ম্যাচ শেষ হওয়া পর্যন্ত যে অপেক্ষা করতেই হবে!
ব্রাজিল দলে মারাত্মক ফর্মে ছিলন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার অ্যালেমাও ও স্ট্রাইকার কারেকা। নাপোলিতে খেলা দুইজনই ছিলেন ম্যারাডোনার ক্লাব সতীর্থ। সেলেসাওদের আরেক ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার কার্লোস দুঙ্গা তখন ইউরোপের সেরা ডেসট্রয়ার। ম্যাচে আর্জেন্টিনা মোতেই সুবিধা করতে পারছিল না। ব্রাজিল বহুবার গোলের কাছাকাছি গিয়েও বঞ্চিত হয়। ম্যাচের তখন ৮০ মিনিটের খেলা চলছিল। সেই সময় নিজেদের অর্ধ থেকে তিন জন মার্কারকে অতিক্রম করে ব্রাজিলের গোলমুখে দৌড় দেন ফুটবল ঈশ্বর। আরও তিনজন ডিফেন্ডার তখনও সামনে অপেক্ষা করছে ম্যারাডোনাকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য। ডিফেন্ডাররা ধারণা করছিলেন, হয়তো ড্রিবলিং করে বাম পার্শ্বে যেতে চাইবেন ম্যারাডনা। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে আর্জেনটাইন ‘নম্বার ১০’ আরও সামনে এগিয়ে গেলেন। সেই ক্ষণিক মুহূর্তের হিসেবটা সেই সময় আর কেউ না বুঝলেও, ক্লদিও ক্যানিজিয়া ঠিকই ধরতে পেরেছিলেন। এই স্ট্রাইকার জটলার ভেতরেই ডান পার্শ্ব থেকে দৌঁড় দেন বাম দিকে। তখন ম্যারাডোনা আর সামনে না গিয়ে, বলটা ডান পায়ে তিন ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে ঠেলে দেন ফাকায় দাঁড়িয়ে থাকা ক্যানিজিয়াকে। ঝুঁকি ছিলো ডিফেন্ডারদের পায়ে লেগে সেই পাস প্রতিহত হবার। কিন্তু ঝুকি নিতে কি বীর কখন ডরায়? মোটেই না।
সাহসী ম্যারাডোনার পাস পেয়ে গেলেন ক্যানাজিয়া। এরপর অসম্ভব ঠান্ডা মাথায় সামনে এগিয়ে গিয়ে, গোলকিপার তফারেলকে সামনে টেনে আনলেন। একটি ড্রিবলিংয়ে ব্রাজিলিয়ান কিপারকে পরাস্ত করে ঠান্ডা মাথায় ক্যানিজিয়া বল পাঠিয়ে দিলেন জালে। বর্তমান জুভেন্টাস স্টেডিয়াম ও তৎকালীন ‘দেলে আলপি’ তখন উত্তেজনায় কাঁপছে। ফেবারিট ব্রাজিলের শেষ মুহূর্তে গোল হজম করে, পরে তা আর শোধ করতে পারেনি। আর্জেন্টিনা ১-০ ব্যবধানে জিতে চলে যায় কোয়ার্টার ফাইনালে। আর আসর থেকে বিদায় ঘন্টা বাজে ব্রাজিলের। ম্যারাডোনা পরে বলেছিলেন, ‘এই দুর্দান্ত গোলটি ব্রাজিলের প্রতিরোধের শক্তিই ধ্বংস করে দেয়।’
সেই সময় ব্রাজিলের গণমাধ্যম দাবি করেছিল, ক্লাব সতীর্থ বলে অ্যালেমাও কড়া ট্যাকেলের মাধ্যমে ম্যারাডোনাকে চ্যালেঞ্জ জানায়নি! ম্যারাডোনা তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘এটা আমাকে বিরক্ত করেছে যে, ব্রাজিলের প্রেস অভিযোগ তুলেছিল, অ্যালেমাও আমাকে নাপোলি দলের সতীর্থ বলে কড়া ট্যাকেল করে নামিয়ে দেয়নি।’ সেদিন ব্রাজিলের তাফারেল ব্রাজিলের ব্যর্থতার ব্যাপারে বলতে গিয়ে স¤প্রতি ফিফাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন, ‘আমরা আর্জেন্টিনা বিপক্ষে অনেক ভালো খেলেছি, কিন্তু সত্যটা হচ্ছে আমরা ম্যাচটা হেরেছি’। তাফারেল আরও যোগ করেন’, তাদের শুধুমাত্র একটি সুযোগ ছিল, যেটি ম্যারাডোনার দৌড়ের মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল এবং তারা সেই সুযোগে গোল করেছিল। আমরা ২০টিরও বেশি সুযোগ পেয়েছিলাম। তবে সবগুলোই মিস করেছি। এটিই ফুটবল। তবে আমি একটি বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত। একজন ‘সেলেসাও’ সেই বিশ্বকাপে নিজেদের হারিয়েছিল।’
এতোদিন পরে এসেও, তাফারেলও ইঙ্গিতে অ্যালেমাওকেই দুষলেন!

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ