Inqilab Logo

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ঘুষের টাকা না পেয়ে কাজ বন্ধের অভিযোগ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০২২, ৮:২৮ পিএম

দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির প্রতি সরকারের কড়া নজর থাকলেও ঘুষের টাকা না পেয়ে নানা অজুহাতে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীন দুইটি আরসিসি গাডার ব্রিজের কাজ পায় মোহাম্মাদ ইউনুছ অ্যান্ড ব্রাদার্স (প্রা.) লি. নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজ পাওয়ার আগেই কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. বিল্লাল হোসেন সরকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক শহিদুল ইসলামকে ফোন করে কাজ নিতে নিষেধ করেন। এছাড়া গাজীপুরে বাইরের কোনো ঠিকাদার এই কাজ করতে পারবে না বলেও জানান ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে জানান তিনি।


এবিষয়ে মোহাম্মাদ ইউনুছ অ্যান্ড ব্রাদার্স (প্রা.) লি. ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে গাজীপুর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবার একটি অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালকের বরাবর এ অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।


উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ২০২০ সালের মার্চে বিল্লাল হোসেন সরকার কালীগঞ্জ পোস্টিং হওয়ার পরেই স্থানীয় ঠিকাদারদের সঙ্গে ৮ শতাংশ কমিশন বাণিজ্যের একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। তার সিন্ডিকেটের বাইরে অন্য কোনো ঠিকাদার কাজ পেলে বিল্লালকে দিতে হয় মোটা অংকের ঘুষ।

স্থানীয় ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা প্রকৌশলী বিল্লাল হোসেন তার পছন্দের ঠিকাদারদের দিয়ে সব কাজ করিয়ে থাকেন। তার এই অনিয়মের প্রতিবাদ করলে তিনি এমপি-মন্ত্রীর অত্যন্ত কাছের লোক বলে পরিচয় দেনন।

তারা অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় কিছু ঠিকাদারের সঙ্গে সিন্ডিকেট গড়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। চলতি বছরে জুন মাসে ঈদুল আজহার আগে উপজেলা ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়ক উন্নয়নে অনূর্ধ্ব ১০০ মিটার সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় একটি ৪৫ মিটার গার্ডার ব্রিজের নির্মাণ কাজ চলছিল। গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বক্তারপুর ইউনিয়নের মোহনা নামক স্থানে। সেই ব্রিজের কাজ দেখভাল করতেন ইঞ্জিনিয়ার বিল্লাল হোসেন। বৃষ্টির সময় এবং জলাশয় পানি থাকা অবস্থায় ঢালাই দিতে বাধ্য করেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে। ফলে এই বৃষ্টির মধ্যে কাজ করতে গিয়ে মারা যান শ্রমিক লিয়াকত হোসেন। নিহত ওই শ্রমিকের বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলায়। লিয়াকতের পরিবারের সদস্যরা ইঞ্জিনিয়ার বিল্লালের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি খারাপ আচারণ করেন। এমনকি ২০১৯ সালে এ ব্রিজের কাজ শুরু করেও উপজেলা প্রকৌশলীর হয়রানির কারণে এখন পর্যন্ত একাজ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এতে করে সরকারি উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের বাধাগ্রস্ত করছেন বিল্লাল।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মোহাম্মাদ ইউনুছ অ্যান্ড ব্রাদার্স (প্রা.) লি. ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দুই সাইডে (বক্তারপুর ইউনিয়নের জয়রামবের গ্রাম ও নগরী ইউনিয়নের কেটুন গ্রাম) কাজ করার জন্য মালামাল মজুত রাখা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মালামাল পরে থাকায় তা নষ্ট হচ্ছে।

এই বিষয়ে বক্তারপুর স্থানীয় বাসিন্দা আজিজুল হক মাসুম বলেন, গত ৫ মাসের বেশি সময় ধরে ব্রিজের মালামাল রাখা হয়েছে। শুনেছি ব্রিজ হবে। কিন্তু এখানে অফিসার আসে শুধু মাপামাপি করে আবার চলে যায় কাজের কোনো তো অগ্রগতি দেখি না।

আরেক স্থানীয় বাসিন্দা দীলিপ গোমস্তা বলেন, ব্রিজ করবে বলে রাস্তা কেটে রাখছে কিন্তু ব্রিজ করার কোনো খবর নাই। অফিসার গো দেখি আসে জমি মাপামাপি করে আবার চলে যায়। কম হলে ১০বার জমি মাপামাপি করেছে। রড, বালু সিমেন্ট এনে দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার উপর রাখছে, মানুষ চলাচল করতে পারে না এবং এসব মালামালও নষ্ট হচ্ছে। অনেকে এখান থেকে বালু সিমেন্ট নিয়ে নিজের কাজে লাগাচ্ছে। কেন কাজ হয়না আমরা তো জানি না। আমরা চাই দ্রুত ব্রিজ নির্মাণ হোক।

অভিযুক্ত কালীগঞ্জ উপজেলার প্রকৌশলী বিল্লাল হোসেন সরকার বলেন, আমি তো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কাজ করার জন্য সহযোগিতা করছি। প্রায় পাঁচ মাস ধরে মালামাল নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। কাজের অগ্রগতি কতটুকু জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছুটা হয়েছে। আর হবেই কীভাবে, কাজ করার জন্য যেসব মাল দরকার, সেই মাল না এনে অন্য মাল নিয়ে আসে, এজন্য কাজের তেমন অগ্রগতি নেই।

২০ লাখ টাকা ঘুষের অভিযোগের বিষয়ে এই প্রকৌশলী বলেন, সরকারি কাজে আমি কেন ঘুষ চাইবো। আপনি সাইডে এসে দেখে যান। আপনি কালীগঞ্জ আসেন, চা খেয়ে যান, তাহলে বুঝতে পারবেন। আমার সঙ্গে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক, কুমিল্লায় আমি পাঁচ বছর ছিলাম, তিনি আমাকে চেনেন। আমি সরকারি কাজে সবসময় সহযোগিতা করি।

লিয়াকত নামের শ্রমিক মারা যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকৌশলী বিল্লাল বলেন, সেটা তো অনেক আগে। আমি তো ঢালাই করার সময় সাইডে ছিলাম না। সাইড ইঞ্জিনিয়ার ছিল। আর এ ঘটনার তদন্ত হয়েছে, আপনি এসে সেই রিপোর্ট দেখে যান।

বিষয়ে মোহাম্মাদ ইউনুছ অ্যান্ড ব্রাদার্স (প্রা.) লি. নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ২০ লাখ টাকা ঘুষ না পেয়ে প্রকৌশলী বিল্লাল ইচ্ছে করে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে হয়রানি করে কাজ বন্ধ রেখেছেন। আমি চিফ ইঞ্জিনিয়ার, জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী কাছে অভিযোগ করবো বলে জানাই এর উত্তরে বিল্লাল বলেন বড় বড় এমপি-মন্ত্রীর সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক আছে পারলে অভিযোগ দিয়ে কিছু করেন।

শহিদুল ইসলাম আরও বলেব, আমার যদি মালামাল খারাপ হতো তাহলে তিনটি পাইলের ঢালাই করলো কীভাবে। এসব মিথ্যা কথা বলে তিনি প্রতিনিয়ত কাজ বন্ধ রেখে আমাকে হয়রানি করে যাচ্ছেন।

 

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. সেলিম বলেন, এই বিষয়ে আমি তো জানি না। আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। এটা নির্বাহী প্রকৌশলী বলতে পারবেন।

গাজীপুর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল বারেক বলেন, কাজ নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে, সেই বিষয় জানতে পারছি। ঠিকাদার কাজ করতে যেসব মালামাল ও মেশিন আনছে তা ত্রুটিপূর্ণ। তাই কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে।

আব্দুল বারেক বলেন, আমার কাছে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী বিল্লালের বিরুদ্ধে এখনও কোনো অভিযোগ আসেনি। তার বিরুদ্ধে যে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার প্রমাণ পেলে অব্যশই ব্যবস্থা নেব।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিন বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা চিঠি পাইনি। আপনার কাছ থেকে আমি প্রথম শুনলাম। অভিযোগ আসলে যাচাই-বাছাই করবো।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ