বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
শয়তান অদৃশ্য শত্রু। কিন্তু তার আচার-আচরণ, কাজ-কারবার এবং প্রভাব-প্রতিক্রিয়া সবই দৃশ্যমান। শয়তান কোনো ভালো কাজ করে না, তার স্বভাব-ধর্ম মানুষের ক্ষতিসাধন করা, সর্বনাশ করা। কোনো শয়তানী কর্মকাণ্ড বাহ্যিক দৃষ্টিতে উত্তম মনে হলেও তার মধ্যে লুকিয়ে থাকে হাজারো অনিষ্ট সাধনকারী প্রক্রিয়া। এই অদৃশ্য শক্তির চেলা-চামুণ্ডারা সংখ্যায় অগণিত, বিপুল, যার কোনো শেষ নেই।
এরা কোথায়, কিভাবে তৎপরতায় লিপ্ত থাকে, তার হদিস করাও সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। তবে সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন লোকদের কাছে শয়তানী কার্যকলাপ সহজে ধরা পড়ে, তারা চিহ্নিত করতে পারে শয়তান ও তার বিশাল বাহিনীর সমস্ত ক্ষতিকর তৎপরতা। শয়তান পারে না এমন কোনো কাজ দুনিয়াতে নেই। তবে একটিমাত্র কাজ শয়তানের ক্ষমতাবহির্ভূত, তা হচ্ছে খাঁটি বিশ্বাসীদের বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করা।
পবিত্র কোরআনে অসংখ্য স্থানে শয়তানের বর্ণনা রয়েছে, তার স্বভাব-চরিত্র থেকে শুরু করে পূর্ণ পরিচিতি তুলে ধরা হয়েছে এবং শয়তানকে মানুষের প্রধান শত্রু হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, এমনকি সে আল্লাহরও শত্রু। শয়তানের শক্তিমত্তা, প্রভাব-প্রতিপত্তি, তার ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ প্রভৃতি আচার-আচরণ গতিবিধির বিবরণও কোরআনে বিক্ষিপ্তভাবে প্রদত্ত হয়েছে। শয়তানের অনুচর-অনুগামী এক প্রকারের মানবের কথাও বলা হয়েছে। আর শয়তানের কার্যকলাপের ফিরিস্তি এতই বিশাল বিস্তৃত যে, তা লিপিবদ্ধ করাও রীতিমতো সুকঠিন ব্যাপার।
তবে কোরআনে এমন কিছু ক্রিয়া-কর্মের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো মানুষই সাধন করে থাকে শয়তানের প্রতিভূ হয়ে। শয়তানের এসব বর্ণচোরা অনুচর দুনিয়ার সকল দেশে, সকল সমাজে এবং সকল যুগেই ছিল, আছে এবং থাকবে। পবিত্র কোরআনের একটি স্থানে শয়তানের ভ্রাতৃমণ্ডলীর কাজটি বিশেষভাবে চিহ্নিত করে দেয়ায়, তা আলাদাভাবে গুরুত্ব বহন করে। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সামাজিক জীবনে, জাতীয় জীবনে এমনকি রাষ্ট্রীয় জীবনেও এ ধরনের বহু ক্রিয়া-কলাপের সুস্পষ্ট প্রতিফলন দেখা যায়।
একসময় এদেশের রাজপথে, ফুটপাথে চলাচলকারী যে কোনো লোকের একটি বড় সাইনবোর্ড দৃষ্টিগোচর হতো এবং তাতে বড় বড় আরবি হরফে কোরআন শরীফের একটি আয়াত এবং সাথে তার বাংলা তরজমা থাকত। আয়াতটির বাংলা উচ্চারণ এরূপ :‘ইন্নাল মোবাজ্জিরীনা কালু ইখওয়া নাশ শায়াতীন’। অর্থাৎ অপচয়কারীরা নিশ্চয়ই শয়তানের ভাই।
শয়তানের ভাই সম্পর্কের অপচয়কারীরা কত বড় পাপী যে, কোরআন তাদের শয়তানের ভাই বলে ঘোষণা করেছে। অপচয় রোধ করতে হলে এর শাখা-প্রশাখা সবকিছুই নির্ণয় করে কে, কোথায়, কিভাবে অপচয় ঘটাচ্ছে এবং কারা কিভাবে অপচয়ের সাথে জড়িতÑ এসব বিষয় অনুসন্ধান করা যেমন জরুরি তেমনি তা কঠোর হস্তে দমনের ব্যবস্থা করাও সংশ্লিষ্ট সকলের দায়িত্ব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।