নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শক্তির পার্থক্য, র্যাঙ্কিংয়ে অবস্থান সঙ্গে ইতিহাস-ঐতিহ্যকে বিবেচনায় নিলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবধান পাহড়সম। তবে গত কয়েক বছরের মুখোমুখি লড়াইয়ে দৃষ্টি ফেরালে অন্যরকম এক চিত্রই ফুটে ওঠে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রতিবেশী দুই দেশের আরেকটি মুখোমুখি লড়াইয়ের আগে তাই আরেকটি রোমাঞ্চকর ম্যাচের অপেক্ষায় ক্রিকেটপ্রেমীরা। সেমিফাইনালের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে সুপার টুয়েলভে আগামীকাল অ্যাডিলেডে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় মাঠে গড়াবে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচটি। সুপার টুয়েলভে দুটি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। ভারতও দুটি ম্যাচ জিতেছে। সেমিফাইনালে ওঠার দৌড়ে এই ম্যাচ দুই দলের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ভিন্ন দুই লক্ষ্যে আসরে পা রেখেছিল দুই দল। ভারত নিঃসন্দেহে টপ ফেভারিটদের একটি, সেখানে এই সংস্করণে এখনও বাংলাদেশের পায়ের নিচে মাটিই শক্ত হয়নি। তবে বিশ্বকাপের ফরম্যাট এমন যে একটি মাত্র ভুলই পাল্টে দিতে পারে পরের ধাপে যাওয়ার সমীকরণ। তাইতো, আসছে ম্যাচে পরাজিত দলের সেমি-ফাইনালের যাওয়া আশা অনেকটাই ফিকে হয়ে যেতে পারে। শেষও হয়ে যেতে পারে। আবার যারা জিতবে, এগিয়ে যাবে নকআউটের পথে। গ্রæপের তিনটি করে ম্যাচ শেষে দুই দলের পয়েন্ট সমান। তবে সবশেষ ম্যাচে তাদের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। নেদারল্যান্ডসেকে হারিয়ে শুরুর পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশ; তবে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। অন্যদিকে, পাকিস্তানের পর নেদারল্যান্ডসকেও হারিয়ে উড়ছিল ভারত। তাদের জয়যাত্রা থামিয়ে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
গত কয়েক বছরে বহুদলীয় আসরে শ্বাসরুদ্ধকর সব লড়াই উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। এবার সেমি-ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখার লড়াই হওয়ায় আরেকটি জমজমাট ম্যাচের আশা জাগছে। এই দুই দলের মধ্যে প্রতিদ্ব›িদ্বতা নতুন উচ্চতায় পৌঁছায় ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত সেই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ১০৯ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। তবে, ওই ম্যাচে আম্পায়ারদের কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে অনেক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। তারপর প্রায় ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশের দর্শকদের মধ্যে থাকে অন্যরকম উত্তেজনা। মাঠের লড়াইয়েও দেখা যায় বাড়তি ঝাঁজ। সেই বিশ্বকাপের পর ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই সাফল্য আরও তাতিয়ে দেয় দুই দলের লড়াই। এরপর প্রায় সব ম্যাচেই তুমুল প্রতিদ্ব›িদ্বতা হলেও অবশ্য আর কখনও ভারতের বিপক্ষে জিততে পারেনি বাংলাদেশ।
সব মিলিয়ে গত ছয় বছরে বহুদলীয় টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ও ভারতের মুখোমুখি ছয় ম্যাচের চারটিই ছিল তুমুল উত্তেজনাপ‚র্ণ। তবে প্রতিবার শেষ হাসি হেসেছে ভারত। অতীত পরিসংখ্যান ভারতের পক্ষে থাকলেও বিশ্বকাপে দুই দলের অবস্থা বিবেচনায় বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার কথা নয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ বলে পাওয়া জয়ের আত্মবিশ্বাস ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, এখনই শেষ চারের কথা ভাবছেন না তারা, ‘ম্যাচ জিতলে তো আত্মবিশ্বাস বাড়েই। দলের পরিবেশও আগে থেকেই ভালো। (সেমি-ফাইনাল নিয়ে) আসলে চিন্তা করছি না। আমরা ‘ম্যাচ বাই ম্যাচ’ যেতে চাই। ওইটাই চিন্তা আছে যে পরের ম্যাচ আমরা কতটা ভালো খেলতে পারি।’ তবে ম্যাচের আগের দিন আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করলেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ অধিনায়কের মতে, কঠিন হলেও অঘটনের সুযোগ নিতে মুখিয়ে দল।
কাজটা সহজ নয়, সুপার টুয়েলভে বাংলাদেশের শেষ দুটি ম্যাচ ভারত (আজ) ও পাকিস্তানের (৬ নভেম্বর) বিপক্ষে। ২০১৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপেও প্রায় একই পর্যায়ে ছিল বাংলাদেশ। সেখানে উপমহাদেশের এই দুই দলের বিপক্ষে হেরে তাদের টুর্নামেন্ট শেষ হয়েছিল হতাশায়। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে ভারতের বিপক্ষে খেলা ১১ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় ¯্রফে একটি। বিশ্বকাপে তিন ম্যাচের তিনটিই জিতেছে ভারত। একই অবস্থা পাকিস্তানের বিপক্ষে, মুখোমুখি ১৭ ম্যাচে দুই জয় বাংলাদেশের। বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচের সবকয়টিই হেরেছে বাংলাদেশ। ক্রিকেটীয় শক্তি নিয়ে এই দুই দলের কোনো প্রশ্ন চলে না। সেমিফাইনালে ওঠার দৌড়ে এ দুটি বড় দলই বেশ চাপে আছে। নিজেদের শেষ দুই ম্যাচে বাংলাদেশ কিংবা জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ভারত হেরে গেলে সেমিফাইনালে ওঠার সমীকরণে অনেক যদি-কিন্তুর মধ্যে পড়তে হবে। পাকিস্তানের অবস্থা আরও খারাপ। সেমিফাইনালে ওঠার নাটাই পাকিস্তানের হাতে নেই। শেষ দুই ম্যাচ জিতলেও অন্য ম্যাচের ফলের ওপর নির্ভর করতে হবে বাবর আজমদের।
পরিস্থিতি যখন এমন, তখন বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন, ‘পরবর্তী লক্ষ্য হলো, দুটো ম্যাচ খুব ভালোভাবে খেলা। দুটো ম্যাচের কোনো ম্যাচও যদি জিততে পারি, সেটা আপসেট (অঘটন) হিসেবে গণ্য হবে। সেই আপসেটটা করতে পারলে আমরা খুশি হব। না করতে পারলে বেশি কিছু বলার নেই।, সাকিব যে অঘটনের কথা বললেন, চলতি আসরে সেটা দেখা গেছে বেশ কয়েকবার। প্রথম রাউন্ডে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে নামিবিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিতেছে স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড। সুপার টুয়েলভে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে আয়ারল্যান্ড। পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় পেয়েছে জিম্বাবুয়ে। এসব ম্যাচ থেকে অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘দুই দলই কাগজে-কলমে আমাদের চেয়ে অবশ্যই ভালো। তবে আমরা যদি ভালো খেলি, আমাদের যদি দিন থাকে, তাহলে কেন পারব না। এই বিশ্বকাপেই আমরা দেখেছি, আয়ারল্যান্ড ইংল্যান্ডকে, জিম্বাবুয়ে পাকিস্তানকে হারিয়েছে।’
অ্যাডিলেইডে বাংলাদশকে লড়তে হবে বিরূপ আবহাওয়ার সঙ্গেও। বৃষ্টি আর তীব্র শীতলতায় মানিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জও সাকিবদের সামনে। এখানেই নিজেদের পিছিয়ে রাখলেন সাকিব। বললেন, অ্যাডিলেডে খেলার অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশের চেয়ে বিস্তর ব্যবধানে এগিয়ে ভারত, ‘দুই দল সাম্যাবস্থানে আছে বলা ঠিক হবে না।’ এই কন্ডিশনও বাংলাদেশের বিপক্ষে ব্যাটে উত্তাপ ছড়াতে পারেন ভারতের সূর্যকুমার যাদব। রোহিত, কোহলি ও রাহুলরা থাকতেও গত এক বছরে টি-টোয়েন্টিতে সূর্য নিজের জাতটা ভালোই চিনিয়েছেন। সাকিব মনে করেন, ম্যাচটা জিততে হলে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং অর্ডারকে আগে সামলাতে হবে। সে পরিকল্পনা টিম মিটিংয়ে ঠিক করার কথা জানালেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘গত এক বছরের রেকর্ড চিন্তা করলে সে ভারতের ১ নম্বর ব্যাটসম্যান। তাদের বেশ কয়েকজন বিশ্বমানের খেলোয়াড় রয়েছে, যাদের দিকে নজর রাখতে হবে। আমরা এখনো টিম মিটিং করিনি। মিটিংয়ে আমরা সবকিছু নিয়েই আলোচনা করব। হ্যাঁ, তাদের দুর্দান্ত ব্যাটিং অর্ডার রয়েছে। ভালো কিছু করতে বা জিততে এটি সামলাতে হবে।’
আগের দিনই দল থেকে জানানো হয়েছিল যে গতকাল অনুশীলন হবে না। অ্যাডিলেড ওভালে এলেও উইকেট দেখার সুযোগ ছিল সাকিবের। তবে বিরূপ আবহাওয়া সেটিও হতে দিল না। অনেকটা অন্ধকারে থেকেই অঘটনের স্বপ্ন বুনতে হবে বাংলাদেশকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।