Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

২০০৬ : ‘অসম মাস্টার’ জিদান

আর মাত্র ১৯ দিন... চলছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তবে এরই মধ্যে বিশ্বকাপের আসল উত্তাপ নিয়ে দোর গোড়ায় হাজির ফুটবল। আসছে ২০ নভেম্বর থেকে কাতারে পর্দা উঠতে যাচ্ছে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

জার্মানিতে অনুষ্ঠিত ২০০৬ সালের বিশ্বকাপটা হবে রোনালদিনহোময়। এমনটাই ধারণা ছিল বিষেশজ্ঞ ও ফুটবলপ্রেমীদের। এই ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তী ২০০৪ ও ২০০৫ সালে পর পর দুইবার পেয়েছিলেন ফিফা বর্ষসেরার পুরষ্কার। জার্মানিতে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে এই প্লে-মেকারের ২০০৫-০৬ মৌসুমের পারফরম্যান্স ছিলে আরও ক্ষুরধার। বার্সালোনাকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতিয়ে বিশ্বকাপ দলের সঙ্গে যোগ দেন রোনালদিনহো। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে এই ব্রাজিলায়ান কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে ছিলেন নিজের ছায়ায়। আরও সুক্ষভাবে বললে ৩৫ বছর বয়সী জিনেদিন জিদানের পয়ারফরম্যান্সের সামনে গোটা ব্রাজিল দলই হয়ে গেল দর্শক। বিশ্বকাপের নক-আউটে জিদান একাই টানলেন ফ্রান্সকে।
বিশ্বকাপের পরই পেশাদার ফুটবল থেকেই অবসর নিবেন, এমনটা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন জিদান। ফ্লোরেন্তিনো পেরেজে প্রথম দফায় রিয়াল মাদ্রিদের সভাপতি হয়ে যে গ্যালাকটিকো গরেছিলেন, জিদান ছিলেন সেই দলের অন্যতম একজন। জার্মানি বিশ্বকাপের ঠিক আগে শেষ হওয়া মৌসুমে রিয়াল ছিল একদম মলিন। ততদিনে গ্যালাকটিকোর অন্যতম সদস্য লুই ফিগো দল ছেড়েছেন। ডেভিড ব্যাকহাম ও রোনালদো নাজারিও হারিয়েছেন ফর্ম। জিদান দেখলো এই রিয়াল অন্তত আগামী ৪-৫ মৌসুম বার্সালোনার সঙ্গে লড়াইয়ের অবস্থায় নেই। আবার নিজের বয়সটাও নেহাত কম না। তখন গণমাধ্যমে তিনি জানান, ‘আমি আর চালিয়ে যেতে পারব না। আমরা (মাদ্রিদ) সবশেষ ৩ বছর আগে কোন গুরুত্বপূর্ণ শিরোপা জিতেছিলাম। তবে এর মধ্যে দুটি শিরোপায় আমি ঠিক আগের মত অবদান রাখতে পারিনি । আমি হয়তো আর আগের মত খেলতে পারব না।’
ফরাসি গণমাধ্যম ও ফুটবল পন্ডিতরা দাবি করেছিলো যে, বয়স হয়ে যাওয়া জিদানকে বাদ দিয়ে, বিশ্বকাপ দল দেওয়া উচিৎ ফ্রেঞ্চ ম্যানেজার রেইমন্ড ডমেনিকের। ফ্রাঞ্চ বিশ্বকাপের গ্রুপ স্টেজে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করার পর দক্ষিণ কোরিয়া বিপক্ষেও ১-১ ব্যবধানে ড্র করে। এরপরই ফুঁসে ওঠে গোটা ফ্রান্স। আগের সমালোচোনা গুলো আরও তীব্র হয়ে আসতে থাকে জিদানের দিকে। টগোর বিপক্ষে কোন রকম ২-০ ব্যবধানে ম্যাচ জিতে শেষ ষোলতে পদার্পন করে ফ্রান্স। আর তারপরই শুরু মধ্যমাঠের জাদুকরের।
সেকেন্ড রাউন্ডে স্পেনের দারুণ স্কোয়াডের বিপক্ষে বিপক্ষে প্রথমেই পিছিয়ে যায় ফ্রান্স। এরপরই মাঠের নিয়ন্ত্রণ নেন জিদান। বল যেন একান্ত বাধ্যগতর মত তার পায়ের সঙ্গে লেগে ছিল। এগিয়ে যাওয়া স্পেন শেষ পর্যন্ত ৩-১ ব্যবধানে হারে। জিদান শেষের গোলটি করার পাশাপাশি, বাকি দুটি গোলেও পরোক্ষ ভূমিকা রাখেন। আলোনসো, জাভি, ফ্যাব্রেগাস, পুয়োল ও রামসের নাভিশ্বাস তুলে ছাড়েন ৩৫ বছর বয়সী ফরাসি মিডফিল্ডার।
তবে শেষ আটে ফ্রাঙ্কফুর্টে ব্রাজিলের বিপক্ষে যা করলেন তা এই শতাব্দীতে, অন্য কোন মিডফিল্ডার করতে পারেননি। মজার বিষয় হচ্ছে, এতোটা ভালো আশাও করেননি মুয়ানেজার ডমেনিকও। আগের বিশ্বকাপ জয়ী দলের চেয়েও ব্রাজিলের দল ছিল অনেকে ভারসাম্যপুর্ণ। সেই সেলেসাওদের নিয়ে রীতিমত ছেলেখেলায় মেতে উঠলেন জিজু। ঠিক যেমটা ভিডিও গেমেও করা যায়, সেই ধরনের অতিমানবীয় দক্ষতা দেখাতে থাকলেন এই মিডফিল্ডার। ব্রাজিলের মিডফিল্ডার ও ডিফেন্ডাররা সারা ম্যাচে কেবল জিদানের পিছেই দৌড়ালেন। জিদানের পাস থেকে থিয়েরি অঁরির একমাত্র গোলে ব্রাজিলকে ১-০ ব্যবধানে হারায় ফ্রান্স। সেমি-ফাইনাল ও ফাইলেন যথাক্রমে পর্তুগাল ও ইতালির বিপক্ষেও একই জাদু দেখান জিদান। দুই ম্যাচেই পেনল্টি থেকে পান দুটি গোল। তবে ফাইনালে মাতোরজ্জির বিপক্ষে সেই ‘ঢুস কাণ্ডে’ লাল কার্ড দেখে মাঠ থেকে বের হয়ে যেতে হয় জিদানকে। তার দলও টাই-ব্রেকে হারায় বিশ্বকাপ শিরোপা।
২০০৬ সালের শিরোপা জয়ীর তালিকায় হয়তো জিদানের নাম থাকবে না। তবে এটিও দিবালোকের মত সত্য যে, জার্মানি বিশ্বকাপে জিদানের কীর্তিও কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। সেই বিশ্বকাপের গোটা নক-আউট ছিল জিদানময়। ব্রাজিলের বিপক্ষে সেই মহারণ শেষে এই মিডফিল্ডার বলেছিলেন, ‘সেদিন মাঠের বাইরে বাতাসে যাদু ছিল।’ আর ব্রাজিলের সেই সময়কার কোচ কার্লোস আলবার্তো পেরেইরা বলেছিলেন, ‘জিদানই পার্থক্য তৈরি গড়েছে। সত্যি বললে ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালের চেয়েও বেশি ভালো ছিল, ওর আজ রাতের পারফরম্যান্স। সম্ভবত গত আট বছরে এটাই ছিল তার সেরা পারফরম্যান্স।’
যে ফরাসি গনমাধ্যম মাত্র দুই সপ্তাহ আগেও সমালচনার জোয়ারে ভাসিয়েছিল, তারাই ব্রাজিলের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনাল জেতার পর জিদানকে অভিহিত করলো, ‘অসম মাস্টার’ নামে। ফ্রাঙ্কফুর্টে সেই ম্যাচ দেখা একজন জার্মান দর্শক পরে বলেছিলন, ‘আমি জাদু বিশ্বাস করি না, তবে জিদানের ফুটবল বিশ্বাস করি’!



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ