বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
তিন পাত্তি গোল্ডসহ বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার চক্রের মূল হোতা উল্কা গেমস লি. এর সিইও জামিলুর রশিদসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব
র্যাব বলছে, তিন পাত্তি গোল্ড’ মূলত একটি অ্যাপ যা মোবাইলে ডাউনলোড করে খেলা যায়৷ বর্তমানে ‘তিন পাত্তি গোল্ড’ এ প্রায় ৯ লাখ নিয়মিত গেইমার রয়েছে এবং প্রতিদিন প্রায় ৩০ লাখ টাকার চিপস বিক্রি হয় বলে জানা যায়। উল্কা গেমস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সিইও হিসেবে নিযুক্ত হয়ে জামিলুর মুনফ্রগ থেকে মাসিক প্রায় ৪ লাখ টাকা বেতন পেত। তিন পাত্তি গোল্ডসহ বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার আড়ালে দেশের বাহিরে প্রায় ২০০ কোটি টাকা পাঠানোর মূলহোতা ও উল্কা গেমস লি. এর সিইও জামিলুর রশিদ।
রোববার রাতে র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৪ এর অভিযানে রাজধানীর মহাখালী ও উত্তরা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন- মূলহোতা ও উল্কা গেমস লি. এর সিইও জামিলুর রশিদ (৩১), সায়মন হোসেন (২৯), মো. রিদোয়ান আহমেদ (২৯), মো. রাকিবুল আলম (২৯), মো. মুনতাকিম আহমেদ (৩৭) এবং কায়েস উদ্দিন আহম্মেদ (৩২)।
এসময় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ, সিপিইউ, সার্ভার স্টেশন, হার্ড ডিস্ক, স্ক্যানার, ডিভিডি ড্রাইভ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ডেভিট ও ক্রেডিট কার্ড এবং পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র ও নগদ টাকাসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব জানায়, উল্কা গেমস লি. এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জামিলুর রশিদ। ২০১৭ সালে পাশ্ববর্তী দেশের একটি প্রতিষ্ঠান মুনফ্রগ ল্যাব এর সাথে তার পরিচয় হয়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে সে মুনফ্রগ ল্যাব এর বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে দেড় লক্ষাধিক টাকা বেতনে নিযুক্ত হয়। মুনফ্রগ ল্যাব এর অনলাইন জুয়া অ্যাপ ‘তিন পাত্তি গোল্ড’ এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় গেমটিকে আরোও ছড়িয়ে দিতে দেশে বৈধতার জন্য কিছু আইনজীবীর পরামর্শে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে ২০১৯ সালের শুরুর দিকে জামিরুল রশিদ ‘উল্কা গেমস প্রা. লি.’ নামে একটি গেমিং ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন নেয়।
র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার মঈন বলেন, ২০১৯ সালে মুনফ্রগের ০.০১ শতাংশ উল্কা গেমসকে প্রদানের মাধ্যমে দেশে গেমিং খাতে উন্নয়নের জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকা প্রদানের মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ হয়। দেশে গেইম ডেভেলপমেন্টের অনুমোদন থাকলেও অনলাইন জুয়া/ক্যাসিনোর অনুমোদন না থাকায় উল্কা গেমস বিভিন্ন ভুল তথ্য উপস্থাপন করে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে আইনি বৈধতা প্রাপ্তির ব্যবস্থা করে। এভাবেই ‘তিন পাত্তি গোল্ড’ যাত্রা শুরু করে শহর নগরে ছড়িয়ে পরে। উল্কা গেমস এর যাত্রা গেমিং ডেভেলপমেন্টের উদ্দেশ্যে শুরু হলেও তারা বস্তুত গেম ডেভেলপমেন্ট না করে তিন পাত্তি গোল্ডসহ বিভিন্ন অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে বিপুল পরিমান অর্থ দেশের বাহিরে প্রেরণের কার্যক্রম পরিচালনা করছিল।
কমান্ডার খন্দকার মঈন বলেন, 'তিন পাত্তি গোল্ড’ মূলত একটি অ্যাপ যা মোবাইলে ডাউনলোড করে খেলা যায়। এই অ্যাপের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ মুনফ্রগ ল্যাব এর কাছে রয়েছে। উক্ত অ্যাপে ‘তিন পাত্তি গোল্ড’ ছাড়াও রাখি, আন্দর বাহার ও পোকার নামেও অনলাইন জুয়ার গেমস রয়েছে। যে কোন কাজের পাশাপাশি এই গেম খেলতে পারা যাওয়ায় তরুণসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে এটি জনপ্রিয়তা পায়। গেমস এর রেজিস্ট্রেশনের পর একজন গ্রাহককে গেমস খেলার জন্য কিছু চিপস ফ্রি দেয়া হয়। পরবর্তীতে গেমস খেলার জন্য অর্থের বিনিময়ে চিপস কিনেতে হয়।
র্যাব মুখপাত্র জানায়, মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে চিপস কেনার অর্থের লেনদেন হয়। প্রতিদিন প্রায় ৫০ হজার কোটি চিপস বিক্রি হয় এবং প্রতি কোটি চিপস বিভিন্ন পর্যায়ে ৪৬-৬৫ টাকায় বিক্রি করা হয়। বিভিন্ন বট প্লেয়ার/রোবট প্লেয়ার এর মাধ্যমে মূল গেইমারদের কৌশলে হারিয়ে প্লেয়ারদের পরবর্তীতে আরো চিপস কিনতে উৎসাহিত করা হয়। বাংলাদেশে ‘তিন পাত্তি গোল্ড’ এর চিপস বিক্রির কাজটি ১৪টি অফিসিয়াল ডিস্ট্রিবিউটর/এজেন্টের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। এই সব ডিস্ট্রিবিউটরদের সাব ডিস্ট্রিবিউটর রয়েছে বলে জানা যায়।
এছাড়াও, প্রাইভেট টেবিল অপশনের মাধ্যমে অন্য প্লেয়ার থেকেও চিপস কেনা যায়। বর্তমানে ‘তিন পাত্তি গোল্ড’ এ প্রায় ৯ লাখ নিয়মিত গেইমার রয়েছে এবং প্রতিদিন প্রায় ৩০ লাখ টাকার চিপস বিক্রি হয় বলে জানা যায়।
গ্রেপ্তারের জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবের এই কর্মকর্তা জানায়, ভার্চুয়াল চিপস অর্থের বিনিময়ে ডিস্ট্রিবিউটরদের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া হয়। বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে চিপস বিক্রির টাকা ডিস্ট্রিবিউটরদের থেকে সংগ্রহ করা হত। বর্তমানে উল্কা গেমস এর ৪টি একাউন্টে প্রায় ৮০ কোটির বেশি টাকা রয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়াও গত দুই বছর তারা মুনফ্রগ ল্যাবকে ব্যাংকের মাধ্যমে ২৯ কোটি টাকা দিয়েছে। উল্কা গেমস এর মোট ৩৬ জন কর্মকর্তা/কর্মচারী ছিল। বেতন দেয়াসহ অফিস পরিচালনায় প্রতি মাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ হত। এছাড়াও, কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বাৎসরিক বেতনের ৩০-৯০% হারে বোনাস দেয়া হত। প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে দেশের বাহিরে অনলাইন জুয়ার অর্থ পাঠাত।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার জামিলুর রশিদ ঢাকার একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে প্রাচ্যের একটি দেশ থেকে ২০১২ সালে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করে দেশে ফিরে আসে। ছোটকাল থেকেই মোবাইল গেইমস এর প্রতি আসক্ত হওয়ায় ২০১৫ সাল থেকে মোবাইল গেমস তৈরির কাজ শুরু করে। হিরোজ অফ ৭১ ও মুক্তি ক্যাম্প নামক ২০১৭ সালে দুইটি গেমস নির্মাণের জন্য সে সরকারের কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা অনুদান পায়।
পরবর্তীতে ২০১৭ সালে মুনফ্রগ ল্যাব এর সাথে পরিচয়ের সূত্রপাত হয়। ২০১৮ সালে সে গেমস ডিজাইন কনসালটেন্ট ও বাংলাদেশে নিযুক্ত কর্মকর্তা হিসেবে মুনফ্রগ থেকে দেড় লক্ষাধিক টাকা বেতনে যুক্ত হয়। পরবর্তীতে, ২০১৯ সালে উল্কা গেমস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সিইও হিসেবে নিযুক্ত হয়ে সে মুনফ্রগ থেকে মাসিক প্রায় ৪ লাখ টাকা বেতন পেত। এছাড়াও, সে বাৎসরিক আয়ের ৯০-১০০% বোনাস পেত বলে জানা যায়। তার বিভিন্ন একাউন্টে বেশ কিছু টাকা, একটি দামী গাড়ী এবং ঢাকা ও ঢাকার বাহিরে ফ্ল্যাট ও জমি রয়েছে বলে জানা যায়।
গ্রেপ্তার রিদোয়ান আহমেদ ২০১৯ সালে ৪০ হাজার টাকা বেতনে সে উল্কা গেমস এ যোগ দেয় এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় ক্রয়-বিক্রয়, ভেন্ডর ম্যানেজম্যান্ট, ইভেন্ট আয়োজনসহ অফিস পরিচালনার দায়িত্ব পালন করত। বর্তমানে তার বেতন ১ লক্ষাধিক টাকা ছিল।
গ্রেপ্তার কায়েস উদ্দিন ২০২১ সালে সে উল্কা গেমস লি. এ হেড অফ সেলস হিসেবে যোগদান করে। তার নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় ডিষ্ট্রিবিউটররা ভার্চুয়াল চিপস বিক্রি, টার্গেট অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করত। সে মাসে ২ লাখের বেশি টাকা বেতন পেত বলে জানা যায়।
গ্রেপ্তার সায়মন হোসেন ২০২০ সালে উল্কা গেমসে ৪০ হাজার টাকা বেতন চাকরী শুরু করে। সে উল্কা গেমস এ প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা ছিল। বর্তমানে তার বেতন ছিল প্রায় ১ লাখ টাকা।
গ্রেপ্তার রাকিবুল আলম ২০১৯ সাল থেকে উল্কা গেমস এ ‘তিন পাত্তি গোল্ড’ এ চিপস বিক্রির ডিস্ট্রিবিউটরের কাজ শুরু করে। সে প্রতি মাসে প্রায় ২-৩ কোটি টাকার ভার্চুয়াল চিপস বিক্রি করত বলে জানায়।
গ্রেপ্তার মুনতাকিম আহমেদ ২০১৯ সালে উল্কা গেমস লি. এর পরামর্শক হিসেবে যুক্ত হয় এবং বিভিন্ন কৌশলে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে ভার্চুয়াল চিপস বিক্রির অর্থ দেশের বাইরে পাঠানোর কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিল। উল্কা গেমস লি. থেজে তাকে মাসিক দেড় লক্ষাধিক টাকা প্রদান করা হত বলে জানা যায়।
গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।