Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টাইগারদের ভিন্নরকম ‘প্রথম’

নাভিদ হাসান | প্রকাশের সময় : ৩০ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলছে সেই ১৯৯৭ সাল থেকে। সময়ের হিসেবে যা ২৫ বছর। এই লম্বা সময়ে এ দুই দল ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি খেলেছে, একে অপরের বিপক্ষে। তবে অবাক করা ব্যাপার হচ্ছেÑ এর মাঝে বিশ্বকাপের মঞ্চে একবারও এ দুই দল মুখোমুখি হয়নি। এই অদ্ভুত ‘প্রথমের’ সামনে দাঁড়িয়ে খুব একটা স্বস্তিতে নেই বাংলাদেশ। দীর্ঘদিন ধরেই টি-টয়েন্টিতে বাংলাদেশের মূল সমস্যা ব্যাটিং। অন্যদিকে ঠিক আগের ম্যাচেই পাকিস্তানের মতো পরাশক্তিকে ১ রানে হারিয়ে রীতিমত উড়ছে জিম্বাবুয়েনরা।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম আসরের সূচনালগ্নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাওয়া জয়ের পর, দীর্ঘদিন এই সংস্করণের বিশ্ব আসরের মূলপর্বে জয়হীন ছিল টাইগাররা। সেই ক্ষরা কাটে এ আসরের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে ৯ রানে হারানোর মাধ্যমে। সেই জয় আত্মবিশ্বাস জুগালেও, সাকিব বাহিনীর ব্যাটিং ছিল বিপদসীমার ঠিক কাছে। পরের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০৪ রানের বিশাল ব্যাবধানে হারে ব্যাটারদের আত্মবিশ্বাস ‘রেড অ্যালার্ট’ অঞ্চলে ঢুকে গিয়েছে। অবশ্য দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতিচ্ছবিই ব্যাটিং ভরাডুবী।
বাংলাদেশ দলের ট্যাকনিকাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরাম অবশ্য আগের ম্যাচের ফলাফল নিয়ে না ভেবে স্মনে তাকাতে চাচ্ছেন। এই ভারতীয় কোচের মতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বড় হার এখন অতীত, ‘আমরা পয়েন্ট তালিকায় তাকাচ্ছি না, যা ঘটেছে, তা ঠিক করতে পারব না। নিজেদের পরিকল্পনা সমন্ধে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে এবং ম্যাচের দিন শুধু ম্যাচ নিয়েই ভাবতে হবে। টুর্নামেন্টের খেলায় আবেগের কোনো জায়গা নেই। একটা দিন খারাপ যেতেই পারে; কিন্তু তারপরই ঘুরে দাঁড়াতে হয়। আমরা বড় ব্যবধানে জিতি কিংবা হারি, পরের দিন তো এর কোনো দাম নেই। আবারও ঘুম থেকে উঠে নতুন ম্যাচ খেলতে হয়। জিম্বাবুয়ে যেভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচটি খেলেছে, তা অবিশ্বাস্য ছিল। তাদের পুরো কৃতিত্ব দিতে হবে, আমাদের পূর্ণ সম্মান আছে তাদের প্রতি।‘
শ্রীরাম নবোদ্যমে সামনে তাকাতে চান। তবে অতীত একেবারে মুছে ফেলাটাও বেশ কঠিন। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রায় একটি রসিকতার আশ্রয় নিতেন। দল খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে গেলেই বলতেন, জিম্বাবুয়ের সাথে খেলো ফর্মে ফেরার জন্য। কিন্তু গত জুলাই-আগস্টে জিম্বাবুয়ের মাঠে গিয়ে টাইগাররা ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে হেরে, সেই রসিকতার পথটাও বন্ধ করে দিয়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য। বাংলাদেশ তাদের সর্বশেষ ১৫ ম্যাচে মাত্র ৪টি ম্যাচ জিতেছে, যার মাঝে ২টি সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে, ১টি করে জিম্বাবুয়ের ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। অন্যদিকে জিম্বাবুয়ে সর্বশেষ ৫ ম্যাচের ৪টিই জিতেচগে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের বিপক্ষে শেষ ৫ বারের দেখায় জিতেছে ৩ বার! আজকের ম্যাচের আগে স্বাভাবিকভাবেই টাইগার ক্রিকেটারদের মস্তিষ্কে এই সকল স্মৃতি বারবার ফিরে আসবে।
বিশ্বকাপ ও টেস্টে বাংলাদেশের অভিষেকটা ১ বছরের ব্যবধানে। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের তখন যে ক্রিকেটিয় পার্থক্য ছিল, আজও তাই আছে। কেবল পার্শ্ব পরিবর্তন করে বাংলাদেশ চলে গিয়েছে প্রভাবশালীদের দলে। এই লম্বা সময়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট যেভাবে মিডিয়া, জনগণ, অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষক ও উঠতি ক্রীড়াবিদদের কাছ থেকে সাড়া পেয়েছে, তাতে ক্রিকেট এগিয়ে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনাই বটে। তবে এতসব সুযোগের মাঝে যে অবস্থানে বাংলাদেশ ক্রিকেটের থাকার কথা ছিল, ঠিক সেখানে নেই তারা। অন্যদিকে রাজনৈতিক কারণেই জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট গত ২০ বছরে শুধু পিছিয়েছে। তবে ঠিক ১ বছর আগে দেশটির সাবেক কিংবদন্তি ক্রিকেটার ডেভিড হটন জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব নিলে বদলাতে থাকে চিত্র। আর জিম্বাবুয়েন ক্রিকেটারদের মাঝে সিকান্দার রাজা আছেন ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে। পাকিস্তানি বংশোভূত এই ক্রিকেটার বাংলাদেশকে পেলেই বনে জান ম্যাচের ‘রাজা’।
জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক আত্মবিশাসী অধিনায়ক ক্রেগ আরভিন বাংলাদেশকে হারানোর ব্যাপারে আশাবাদী। শুধু এখানেই শেষ না, আরভিন জানালেন তারা এখন সেমি ফাইনালে খেলার স্বপ্নে বিভোর ‘পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়টা আমাদের আত্মবিশ্বাসী করেছে। আমরা জানি বাংলাদেশ মানসম্পন্ন দল। আমাদের আগামীকাল নিজেদের সেরা খেলাটাই খেলতে হবে। সেমিতে ওঠার বিশাল সুযোগ পেয়েছি আমরা। তবে এর জন্য বাংলাদেশের বিপক্ষে জিততে হবে। এরপর নেদারল্যান্ডসকে হারাতে হবে। ভারতের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ আর অন্যান্য ম্যাচের ফলের ভূমিকাও থাকবে।’
লুক জংওয়ে, ব্রাড ইভান্স ও ব্লেসিং মুজারাভানিদের নিয়ে গরা পেস বোলিং বিভাগ দারুণ সার্ভিস দিচ্ছে জিম্বাবুয়েকে। তাছাড়া প্রতি ম্যাচেই উপরের দিকের কেউ একজন রান পাচ্ছে দলটির। রাজার সঙ্গে লোয়ার ওর্ডারে রায়ান বার্ল ছড়ি ঘুড়ায় প্রতিপক্ষ বোলারদের উপর। সর্বশেষ পাকিস্তান ম্যাচের একাদশ অপরিবর্তিত রেখেই বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামবে জিম্বাবুয়ে। অন্যদিকে টাইগারদের একাদশে ইয়াসির আলী রাব্বির ফেরার সম্ভাবনা আছে। তবে সেক্ষত্রে বাংলাদেশ দলে একজন প্রতিষ্ঠিত বোলার কমে যাবে। তাই পঞ্চম বোলারকে হতে হবে অনেক নিখুঁত।
ব্রিসবেনে সর্বষেষ ছয়টি টি-টোয়েন্টির মধ্যে প্রথম ব্যাট করা দল ৪ বার জিতেছে। আর এই মাঠের প্রথম ইনিংসের গড় ১৬৮ রান। বর্তমান পরিসংখ্যান বিবেচনায় বাংলাদেশ যতই নড়বড়ে থাকুক, ছন্দে যতই পতন আসুক, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনায় বেশি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ