Inqilab Logo

রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

শি’র শাসনামলে চীনের বিশাল পরিবর্তন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩০ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম কংগ্রেসে শি জিনপিং নজির ভঙ্গ করে তৃতীয় মেয়াদে নেতৃত্ব লাভ করেছেন। আর পলিটব্যুরোর স্থায়ী কমিটি সাজিয়েছেন সম্পূর্ণভাবে তার অনুগতদের দিয়ে। এর মধ্য দিয়ে, মাও সেতুং-এর পর, শি জিনপিং চীনের সবচেয়ে ক্ষমতাধর শাসক হিসেবে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করলেন। প্রেসিডেন্ট শি এক দশক ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে চীন, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট, উভয় ক্ষেত্রেই ব্যাপক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট শি এর আমলে চীনে যে পরিবর্তনগুলো হয়েছে, তার মধ্য থেকে কয়েকটি নিচে তুলে ধরা হলো:- পশ্চিমা দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোতে চীনের ভাবমূর্তি খারাপ হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার সম্পর্কের দ্রুত অবনতি হয়েছে। চীনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কঠোর নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে আরো দ্রুত সম্পর্কের অবনতি হয়। তবে মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ এবং তাইওয়ানের প্রতি চীনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসনের প্রতি পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির কারণেও চীনের ভাবমূর্তির অবনতি হয়। দায়িত্ব গ্রহণের পর কমিউনিস্ট পার্টি থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটনে প্রেসিডেন্ট শি এক অনন্য অভিযান শুরু করেন। এমন উদ্যোগ জনগণের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়। তবে বেশ কিছু বিশ্লেষক বলেছেন যে এটি প্রেসিডেন্ট শি’র রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্মূলের ক্ষেত্রেও সহায়ক হয়েছে। এক সময়ের বিশৃংখল সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। তিব্বত, ঝিনজিয়াং ও হংকং, এই এলাকাগুলো রাজধানী বেইজিং থেকে বেশ দূরে। এলাকাগুলো অনেক দিন ধরেই চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির জন্য মাথাব্যথার কারণ ছিল। নিরাপত্তার অজুহাতে প্রেসিডেন্ট শি ওই এলাকাগুলোতে নজিরবিহীনভাবে ব্যাপক দমনপীড়ন শুরু করেন, এর মাধ্যমে এসব সীমান্তবর্তী এলাকাকে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এমন দমন অভিযানের সময় ঝিনজিয়াংয়ে আনুমানিক ১০ লাখ সংখ্যালঘু মুসলিম উইঘুরদের শিবিরে আটকে রাখার ঘটনা ঘটে। হংকংয়ে ২০১৯ সালের সরকারবিরোধী বিশাল বিক্ষোভ দমনে বেইজিং জাতীয় নিরাপত্তা আইন নামে একটি আইনকে ঢালাওভাবে ব্যবহার করে। মাও এরপর থেকে চীনের সব নেতাই স্বশাসিত তাইওয়ান দ্বীপটিকে চীনের সাথে ’পুনরেকত্রীকরণের’ গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন। তবে প্রেসিডেন্ট শি’র আমলে তাইওয়ান প্রণালীতে উত্তেজনা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পিপল’স লিবারেশন আর্মি দ্বীপটির আশপাশে তাদের কার্যক্রমের মাত্রা বৃদ্ধি করেছে। এসব কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে সামরিক মহড়া থেকে শুরু করে তাইওয়ানের আকাশ প্রতিরক্ষা চিহ্নিতকরণ এলাকায় অনুপ্রবেশ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি করা। গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইপেই সফরের জের ধরে, চীন নজিরবিহীন মাত্রায় সামরিক মহড়া পরিচালনা করে। অর্থনীতিতে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশনা বৃদ্ধি করেছেন প্রেসিডেন্ট শি। যেসব খাতে নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করা হয়েছে, সেগুলো হলো বেসরকারি পরিচালনায় সবচেয়ে গতিশীল খাত, বিশেষ করে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে এবং লাভজনক শিক্ষা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। এই খাতগুলোতে দমন এবং চলমান কোভিড-১৯ সংক্রান্ত বিধিনিষেধের প্রভাব, শহরে বেকারত্ব বৃদ্ধি করেছে এবং ভোক্তাদের আস্থা হ্রাস করেছে। প্রেসিডেন্ট শি দায়িত্ব গ্রহণের আগেই দুই সংখ্যার প্রবৃদ্ধির আমল শেষ হয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে প্রবৃদ্ধির হার হ্রাস পেতে শুরু করে। অর্থনীতির আকার বড় হওয়ার সাথে সাথে এটা ছিল একটা অনস্বীকার্য প্রবণতা। প্রেসিডেন্ট শি’র শাসনামলে অবিচলভাবে আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাপক সংখ্যক বিশ্লেষক সতর্ক করেছেন যে চীনের বিনিয়োগ ব্যাপক ও অবকাঠামো নির্মাণ মডেলের ওপর নির্ভরশীল। উন্নয়নের এই মডেলটি, ভবিষ্যতের ক্রমহ্রাসমান প্রবৃদ্ধির সাথে তাল মেলাতে অক্ষম। অভ্যন্তরীণ সমালোচনা ও প্রতিবাদ কঠোরভাবে দমন করেছেন শি। যার মধ্য দিয়ে ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ ধ্বংস হয়ে গেছে আর চীনের ভেতরে ক্রমবর্ধমান হারে সেন্সরশিপের ’গ্রেট ফায়ারওয়াল’ জোরদার হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক বাহিনী গড়ে উঠেছে, আধুনিক হয়েছে। শি’র নেতৃত্বাধীন পিপল’স লিবারেশন আর্মি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সাথে নিজের ব্যবধান কমিয়ে আনছে। এমনকি গভীর সমুদ্রে অভিযান পরিচালনার সক্ষমতার ক্ষেত্রেও এমন কথা প্রযোজ্য। তাইওয়ানকে ঘিরে বিদ্যমান উত্তেজনার ক্ষেত্রে এটি দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কর্মকর্তা সতর্ক করেছেন যে তাইওয়ানকে দখল করে নেয়ার সক্ষমতার ক্ষেত্রে চীন আরো দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। রয়টার্স, সিনহুয়া।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ