Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাপাচার ও নাফরমানির কারণে দুর্ভিক্ষ আসতে পারে

জুমার খুৎবাহ পূর্ব বয়ান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ অক্টোবর, ২০২২, ৬:৫৮ পিএম

পাপাচার ও আল্লাহর নাফরমানির কারণে দুর্ভিক্ষ আসতে পারে। ইতিমধ্যেই খাদ্য সঙ্কট নিয়ে কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। দুর্ভিক্ষ থেকে রেহাই পেতে জাতীয়ভাবে চোখের পানি ফেলে বেশি বেশি তাওবাহ ইস্তিগফার পাঠ করে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। গোলাপ ফুল চাষের পরিবর্তে খাদ্য শস্যের চাষাবাদ এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া বাড়াতে হবে। খাদ্য সংরক্ষণ এবং সুসম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন।
মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমের খতীব মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান আজ জুমার বয়ানে বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর আঘাতে উপকূলীয় বেশ কয়েকটি জেলা হয়ে গেছে লন্ডভন্ড। এ ঝড়ে এপর্যন্ত ৩৭ জনের প্রাণহানী ঘটেছে বলে জানা গেছে। ফসলের মাঠ, মাছের ঘের, ঘর-বাড়ি, গাছ-পালার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। তবু আল্লাহ পাকের মেহেরবানীতে যে পরিমাণ ধ্বংসযজ্ঞের আশঙ্কা করা হয়েছিল তা হয়নি। আবহাওয়া বিভাগ নভেম্বরে আরো একটি ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সেটা মহা দুশ্চিন্তার বিষয়। বিপদ তো লেগেই আছে, একটা যেতে না যেতে আর একটা হানা দিচ্ছে। চিকনগুনিয়া, ডেঙ্গু, সাইক্লোন, করোনা ভাইরাস, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি আরো কত কী? এছাড়াও মানব সৃষ্ট যুদ্ধ, ধ্বংসযজ্ঞ তো আছেই। এযে কবে শেষ হবে তা কেউ জানেন না। গবেষক, বিজ্ঞানীরা যত কারণই আবিষ্কার করুন না কেন, সেই কারণগুলো সৃষ্টি করছেন কে? একমাত্র সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা সর্ব শক্তিমান মহান আল্লাহ। সেই আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন স্থলে, জলে তথা সারা বিশ্বে মানুষের দুষ্কর্মের কারণে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। তাফসীরের কিতাবে আছে বিপর্যয় বলে দুর্ভিক্ষ, মহামারী, দাবানল, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি ঘটনাবলীর প্রাচুর্য, সবকিছু থেকে বরকত উঠে যাওয়া, উপকারী বস্তুর উপকার কম হওয়া ইত্যাদি বিপদ-আপদ বুঝানো হয়েছে। কোরআনে পাকে অন্যত্র বলা হয়েছে- তোমাদের উপর যে বিপদ-আপদ আপতিত হয় সেগুলো তোমাদেরই কৃতকর্মেও করণে। অনেক গুনাহ্তো আল্লাহ ক্ষমাই করে দেন, তবু যা আসে তা একারণে যে আল্লাহ চান মানুষ কিছুটা ফল ভোগ করে যেন তাঁর দিকে ফিরে আসে। কিন্তু মানুষ কি ফিরে আসছে ? না আসছে না। আল্লাহপাক সূরা মোহাম্মদের ১৮ নং আয়াতে বলেছেন তাহলে তারা কি সেই চরম মুহুর্তের জন্য অপেক্ষা করছে যা তাদের ওপরে আকস্মাৎ আবির্ভূত হবে? তাই যদি হয় তাহলে তার লক্ষণ তো সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তা দেখেও চেতন না হলে যখন তাদের ওপরে সেই মহা বিপদ আসবে, তখন আর কি করার থাকবে? সূরা ইউনুসের ১০২ আয়াতে আল্লাহ আরো বলেছেন এরাও কি সেই চরম দুর্দিনের জন্য অপেক্ষা করছে যা তাদেও পূর্ববর্তীদের ওপর আপতিত হয়েছিল।
বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কতগুলো আলামতের কথা উল্লেখ করে বলেছেন মালার সূতা ছিড়ে গেলে যেমন ক্রমাগত একটির পর একটি দানা ঝরে পড়তে থাকে এসব আলামত দেখা দিলে তখন একের পর এক বিপদ আসতে থাকবে। হাদীসটির অনুবাদ হলো যখন রাষ্ট্রীয় তথা সরকারি দায়িত্ব অনুপযুক্ত লোকের ওপর অর্পিত হবে, যখন জাতীয় সম্পদ ব্যক্তিগত সম্পদ রূপে ব্যবহৃত হবে, আমানতের (গচ্ছিত) মালকে গনিমতের মাল মনে করা হয়, যাকাত দেয়াকে জরিমানা দেয়ার মত মনে করা হবে, ইলমেদ্বীনকে দ্বীনদারীর উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য উদ্দেশ্যে হাসিল করা হবে, পুরুষ তার স্ত্রীর আনুগত্য করবে এবং মা-এর নাফরমানী করবে, বন্ধু বন্ধুকে নিকটে স্থান দিবে কিন্তু পিতাকে বহুদূরে সরিয়ে রাখবে, মসজিদে হট্টগোল করা হবে, ফাসেক ব্যক্তি জনগণের সরদার সাজবে, জাতির নিকৃষ্টতম ব্যক্তি নেতা হবে, তাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার ভয়ে ঐসব নেতাকে সম্মান করবে, গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্রাদির ব্যাপক বিস্তার ঘটবে, মদ্যপান বেড়ে যাবে, উম্মতের পরবর্তী লোকেরা পূর্ববর্তী লোকদের গালিগালাজ করবে, অভিসম্পাদ দিবে, সে সময়ে তোমরা অপেক্ষা করো রক্তিম বর্ণের ঝড় তুফানের, ভূমিকম্পের, ভূমি ধ্বসের, রূপ চেহারা বিকৃতির।
বর্তমানে ঐসব অপরাধ ও অপকর্ম যেমন সর্বত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে তেমনি একেরপর এক বিপর্যয় ও গজব আমরা দেখতে পাচ্ছি। তাই আমাদের হুঁশিয়ার হতে হবে, সাবধান হতে হবে। খালেস তাওবা পড়ে আল্লাহর পথে ফিরে আসতে হবে। নইলে নিস্তার নেই। আল্লাহপাক আমাদের সাবধান হওয়ার ও তাঁর পথে ফিরে আসার তৌফিক দান করুন। আমিন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতীব মুফতি রুহুল আমিন আজ জুমার বয়ানে বলেন, পাপাচার এবং আল্লাহর নাফরমানির কারণে দুর্ভিক্ষ আসতে পারে। দুর্ভিক্ষ থেকে রেহাই পেতে জাতীয়ভাবে চোখের পানি ফেলে বেশি বেশি তাওবাহ ইস্তিগফার করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। গোলাপ ফুল চাষের পরিবর্তে খাদ্যশস্যের চাষাবাদ এবং উৎপাদন প্রক্রিয়া বাড়াতে হবে। খাদ্য সংরক্ষণ এবং ভোক্তাদের মাঝে সুসম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে। খতিব বলেন, প্রতিবেশি না খেয়ে থাকলে তাদের খাদ্য সহায়তা দিতে হবে। কেউ অসুস্থ হলে তাদের সেবা শুশ্রƒষা দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে। এগুলো নেকির কাজ। যা’ আল্লাহ’র কাছে অতিপছন্দনীয় কাজ। তিনি বলেন, অন্যের উপকারের নেকির দরুণ কিয়ামতের দিন নেকির পাল্লা ভারি হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর মাখলুককে উপকার করলে কিয়ামতের দিন যথাযথ প্রতিদান পাওয়া যাবে। মনে রাখতে হবে একটি পিপাসিত পশু-পাখিকে পানি পান করালেও তা’ নেকির কাজ। খতিব বলেন, আধিপত্য বিস্তারের জন্য যুদ্ধ ভালো কাজ নয়। বিশ্ববাসী যুদ্ধ চায় না। মানুষ হত্যা করা সবচেয়ে ঘৃণিত কাজ। খতিব আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানান।



 

Show all comments
  • Rabbul Islam Khan ২৮ অক্টোবর, ২০২২, ৭:০০ পিএম says : 0
    তিনি মানবজাতি সৃষ্টি করে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে ভূষিত করেছেন। আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব যদি তার আসল মালিককে ভুলে যায় এবং তাঁর আদেশ-নিষেধ অমান্য করে, তাহলে তার মালিক তার প্রতি শুধু অসন্তুষ্টই হন না, বরং তাকে শাস্তি দিতে বাধ্য হন। তবে আল্লাহ তাআলা যেহেতু অতিশয় মেহেরবান ও দয়াময়, তাই তিনি তাত্ক্ষণিক শাস্তি প্রয়োগ করেন না। তিনি অবকাশ দেন, বারবার সুযোগ দেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Parves Hossain ২৮ অক্টোবর, ২০২২, ৭:০১ পিএম says : 0
    মানুষ পাপ করতে করতে যখন পাপের সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখনই আল্লাহর শাস্তি নাজিল হয়। পাপিষ্ঠ ফেরাউনকে আল্লাহ তাআলা তখনই ধরেছেন, যখন সে নিজেকে আল্লাহ বলে দাবি করেছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : ‘হে মুসা! তুমি ফেরাউনের কাছে যাও, সে অত্যন্ত উদ্ধত হয়ে গেছে। ’ (সুরা ত্বাহা : ২৪)
    Total Reply(0) Reply
  • কাজল হায়দার ২৮ অক্টোবর, ২০২২, ৭:০১ পিএম says : 0
    নমরুদকে আল্লাহ তাআলা তখনই শাস্তি দিয়েছেন, যখন সে নিজেকে প্রভু বলে দাবি করেছে। অনুরূপভাবে আদ, সামুদ প্রভৃতি জাতিকে তাদের সীমাহীন পাপাচারের কারণে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • তানবীর হাসান তনু ২৮ অক্টোবর, ২০২২, ৭:০১ পিএম says : 0
    বনি ইসরাইলরা আল্লাহর কিতাব তাওরাতকে অস্বীকার, উত্তম জিনিস তথা মান্না ও সালওয়ার পরিবর্তে খারাপ জিনিস তথা ভূমির উৎপন্ন জিনিস চাওয়া, আমালেকা সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আল্লাহর অগণিত নিয়ামত ভোগ করেও অকৃতজ্ঞ হওয়ার কারণে চির লাঞ্ছনা ও আল্লাহর ক্রোধে পতিত হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • জামাল কামাল ২৮ অক্টোবর, ২০২২, ৭:০১ পিএম says : 0
    আগের নবীদের এসব কাহিনী পবিত্র কোরআনে আলোচনা করে আল্লাহ তাআলা এটিই বোঝাতে চেয়েছেন যে যদি উম্মতে মুহাম্মদী (সা.)ও তাদের মতো পাপাচারে লিপ্ত হয়, তবে তাদের পরিণতিও অনুরূপ হবে এবং একই ভাগ্য বরণ করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Sabbir Ahmmed ২৮ অক্টোবর, ২০২২, ৭:০০ পিএম says : 0
    এ পৃথিবী এমনিতেই সৃষ্টি হয়নি। এর একজন স্রষ্টা আছেন। তিনি হলেন করুণার আধার, দয়ার নিধান আল্লাহ তাআলা। তাঁর ইঙ্গিতেই পৃথিবীর সব কিছু পরিচালিত হচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ