Inqilab Logo

রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

জামাতুল শারক্বীয়া’র ৫ সদস্য গ্রেপ্তার

এক বছরে ৮০ জন যুবককে এই সংগঠনের সদস্য করেছে

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশের সময় : ২৭ অক্টোবর, ২০২২, ৩:৩৬ পিএম

উগ্রবাদী নব্য জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সক্রিয় ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সিটি ইনভেস্টিগেশন বিভাগ ।
বুধবার রাজধানীর ডেমরা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ বলছে, দেশব্যাপী ২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৭০/৮০ জন যুবককে এই সংগঠনের সদস্য করেছে।

গ্রেপ্তাতদের নাম-মো. আব্দুল্লাহ (২২), মো. তাজুল ইসলাম (৩৩), মো. জিয়াউদ্দিন (৩৭), মো. হাবিবুবুল্লাহ (১৯) ও মো. মাহামুদুল হাসান (১৮)।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ৩টি মোবাইল ফোন ও ফতোয়া সংক্রান্ত ১২ পাতা কাগজ উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, সম্প্রতি কুমিল্লা জেলা থেকে ৭ জন তরুণ নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হলে ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) ছায়া তদন্ত শুরু করে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কুমিল্লা থেকে হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হওয়া আবরারুল হককে সনাক্ত পূর্বক রাজধানীর মগবাজার এলাকা থেকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ গ্রেপ্তার করা হয়। আবরারুল হকের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সারা দেশব্যাপী নিখোঁজের চাঞ্চল্যকর ঘটনার সাথে জড়িত সংগঠনের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় জঙ্গি ডাক্তার শাকির বিন ওয়ালীর বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। পরবর্তীতে রামপুরার হাজীপাড়া এলাকা থেকে ডাক্তার শাকির বিন ওয়ালীকে গ্রেপ্তাত করা হয়।

গ্রেপ্তার ডাক্তার শাকির বিন ওয়ালী জানায়, সে সংগঠনের ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামে জঙ্গি সংগঠনের দাওয়া বিভাগের প্রধান। সে সংগঠনের দাওয়াতি বিভাগে কাজ করতো এবং পাহাড়ে সামরিক প্রশিক্ষণের সময় কোনো জঙ্গি সদস্য অসুস্থ হলে তার চিকিৎসা করতো। কোনো সদস্য হামলার শিকার হলে প্রাথমিক চিকিৎসা কিভাবে করতে হবে সে বিষয়েও প্রশিক্ষণ দিতো। সমতলে থাকাকালে জঙ্গি সদস্য প্রশিক্ষণ গ্রহণকালীন সময়ে অসুস্থ হলে তাকে গোপনীয় চ্যাটে আলাপ করে চিকিৎসা দিতো। ডাক্তার শাকির বিন ওয়ালী পাহাড়ি ক্যাম্পে এক মাসের বেশি অবস্থান করেছে।

মাসে একবার সে পাহাড়ি ক্যাম্প পরিদর্শন করতো। ক্যাম্পে তিনভাগে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। প্রথম ভাগে পাহাড়ের ক্যাম্পে শারীরিক প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। দ্বিতীয়ভাগে যুদ্ধ কৌশল যেখানে হতো। যেখানে ডামি অস্ত্র দিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। তৃতীয় ধাপে পেট্রোলিং শেখানো হতো। ট্রেনিং ক্যাম্পে শামিন মাহফুজ এর পাশাপাশি তমাল, রনবীর, রাকিব ও ডাক্তার শাকির বিন ওয়ালী যাতায়াত করতো এবং সার্বিক বিষয় তদারকি করতো।
প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে কেউ ফিরে যেতে চাইলে তারা বিদ্রোহীদের হাত, পা, চোখ বেঁধে বন্দি করে রাখতো।

সিটিটিসি প্রধান আরো বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায়, তারা সবাইই নব্য উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ এর সক্রিয় সদস্য। গ্রেপ্তার হাবিবুবুল্লাহ ও মাহামুদুল হাসান উল্লিখিত সংগঠনের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে কথিত জিহাদের প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য হিজরতের উদ্দেশ্যে নিজ নিজ বাসা ত্যাগ করে।

আটক আবদুল্লাহ, তাজুল ইসলাম ও জিয়াউদ্দিন সংগঠনের সদস্য হিসেবে কথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে গৃহ ত্যাগ করা নতুন সদস্যদের সাময়িক বাসস্থান ব্যবস্থা করা ও প্রাথমিক ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতো। ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে হিজরত করা তরুণদের রিসিভ করে উক্ত আসামিরা আব্দুল্লাহর বাসায় নিয়ে যেতো এবং তাদেরকে উগ্রবাদী ধারণায় উদ্বুদ্ধ করতো। পরবর্তী সময়ে তাদেরকে ট্রেনিংয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করতো।

তিনি বলেন, এই সংগঠনের উদ্দেশ্য মূলত জঙ্গিবাদের জন্য সদস্য রিক্রুটমেন্ট, অর্থ সংগ্রহ, সশস্ত্র সামরিক ট্রেনিং ও আধুনিক অস্ত্র ক্রয়সহ বিশাল জঙ্গি বাহিনী গঠন করা। তাদের উদ্দেশ্যে পূরণ করার জন্য তারা দেশব্যাপী ২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৭০/৮০ জন যুবককে এই সংগঠনের সদস্য করেছে।

সংগঠনের উদ্দেশ্যে ছিলো পাহাড়ে তাদের শক্ত অবস্থান তৈরি, নিরাপদ সামরিক ট্রেনিং, সংগঠনের উগ্রবাদী উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে দেশে নাশকতা সৃষ্টির মাধ্যমে উগ্রবাদী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে পুনরায় নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে যাওয়া।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ