কেবল একবারই টি-টোয়েন্টিতে দুই দলের দেখা হয়েছিল। মাঝে বয়ে গিয়েছে এক যুগ। দুই দলের খেলোয়াড়রা মুখে বলছে, খেলাটা অন্য দু-তিনটা ম্যাচের মতই হবে। কিন্তু আয়ারল্যান্ড যখন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মুখোমুখি হয়, স্বাভাবিকভাবেই গোটা যুক্তরাজ্যেরই উত্তেজনার পারদ পৌঁছায় ভিন্ন মাত্রায়। কারণ দুই দেশের এই লড়াই ঐতিহাসিক এবং অবশ্যই রাজনৈতিক। খেলার মাঠ রাজনীতি মুক্ত রাখার যতই প্রয়াস থাকুক না কেন, শেষ পর্যন্ত এটা অসম্ভব। মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রাথমিক পর্ব থেকে সুপার টুয়েলভের ১ নম্বার গ্রæপে পড়ার পর, আইরিশ অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বলবার্নি প্রথমেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের স‚চি দেখেছেন! আফগানিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের যাত্রা শুরু করেছে ইংল্যান্ড। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার কাছে ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরে কিছুটা পিছিয়ে আয়ারল্যান্ড।

ইংল্যান্ডের পেসার মার্ক উড বলেন, ‘অ্যায়ারল্যান্ড যে কোনো খেলায় ইংল্যান্ডকে হারাতে চায়, তাই এটি একটি বড় খেলা হবে।’ থ্রি লায়ন্স শিবিরের অলরাউন্ডার ক্রিস ওকস জানান, ‘উভয় দলের জন্য এটি বিড় ম্যাচ।’ তবে মাঠের বাইরের মুখরোচক কথায় একদমই মন নেই ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জস বাটলারের। তার ভাষায়, ‘ইংল্যান্ড যখন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে তখন বাইরে থেকে অনেক গল্প শোনা যায়। মনে রাখবেন এটি বিশ্বকাপ। যেকোনো দল তাদের সেরা ক্রিকেটটাই খেলবে। আমরাও তা-ই ভাবছি। আমরা প্রতিটি প্রতিপক্ষের বিপক্ষে নিজেদের সেরা খেলা খেলতে চাই। আমরা আয়ারল্যান্ডকে মোটেও হালকাভাবে নিচ্ছি না। আমরা দল হিসেবে সব প্রতিপক্ষকে সম্মান করি। এটা সত্য যে, এই ম্যাচের জন্য ওরা (অ্যায়ারল্যান্ড) উজ্জীবিত থাকবে। তারা যেমন আমাদের হারাতে চায়, ঠিক আমরাও তাদের হারাতে চাই।’
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দুই দলের মুখোমুখি লড়াই দেখা গেছে মাত্র একবার, সেটিও ওয়েস্ট ইন্ডিজে হওয়া ২০১০ সালের বিশ্বকাপে। বৃষ্টির কারণে অমিমাংসীত ছিল ম্যাচটি। তবে ২০১১ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে কেভিন ও’ব্রায়েনের রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয় পেয়েছিল আয়ারল্যান্ড। একই সাথে ২০২০ সালের আগস্টে দুই দলের সবশেষ ওয়ানডেতে ৩২৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করে ইংল্যান্ডকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে আইরিশরা। তাই সর্বশেষ ম্যাচ ম্যাচের সবকটি জেতা ইংল্যান্ড এগিয়ে থাকলেও, কাগজ-কলমের সেই হিসেব এই ম্যাচে খাটবে না। আয়ারল্যান্ডের কোচ হাইনরিখ মালানের কথায় উত্তাপের কিছুটা আঁচ মিলছে, ‘দেখুন, আমাদের জন্য এটা দারুণ চ্যালেঞ্জ এবং আমরা সত্যিই রোমাঞ্চিত। আমরা জানি, তাদের দক্ষ অনেক ক্রিকেটার আছে। তবে আমরাও অনেক সময় ধরে খেলছি। আমাদের কিছু ক্রিকেটার আছে যারা মাত্রই জ্বলে উঠা শুরু করেছে। আশা করি আগামীকাল (আজ) রাতে আগুনে পারফরম্যান্স উপহার দিতে পারব।’
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিমধ্যেই অনেক নাটকীয়তা দেখে ফেলেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম‚ল পর্বে আসতে ব্যর্থ হওয়া, চমকে দিয়ে নামিবিয়ার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার হার বা এমসিজিতে ভারতের অবিশ্বাস্য জয়। এই মাঠেই পরিসংখ্যানে বহু এগিয়ে থাকা ইংল্যান্ডের পরীক্ষা নিবে আয়ারল্যান্ড। মালানও অস্বীকার করেননি যে, তাদের ভাবনায় দ্বৈরথের বিষয়টি কাজ করছে, ‘হ্যাঁ, দলের মধ্যে কিছু কথা হয় দুই জাতির দারুণ দ্বৈরথ নিয়ে। আমি জানি, এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য ছেলেরা মুখিয়ে আছে।’ কিছুটা ব্যতিক্রম এক মন্তব্য করলেন আইরিশ ক্রিকেটার মার্ক অ্যাডায়ার, ‘ইংল্যান্ডেরের বিপক্ষে ম্যাচটা বড় তবে সেটা কখনই ভারত বা পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার চাইতে বড় ঘটনা না!’