নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বক্সিংয়ের বুকে লেগেছে হাওয়া। আজ থেকে বছর পাঁচেক আগেও পেশাদার বক্সার ছিল দুই-একজন। সেখানে আজকাল দেখা মিলছে অসংখ্য পেশাদার বক্সারের। সম্প্রতি নারীদের অংশগ্রহণ পেশাদার বস্কিংকে দেখাচ্ছে আশার আলো। এছাড়াও বাংলাদেশ বক্সিং ফাউন্ডেশনের (বিবিএফ) উদ্যোগে বছরব্যাপী চলছে নানা ধরনের প্রতিযোগিতার আসর। নিয়মিত টুর্নামেন্ট হওয়াতে বাড়ছে বক্সারদের আত্মবিশ্বাস ও লম্বা ফাইট করার অভ্যাস। এই কথা কারও অজানা নয় যে, সারা বিশ্বে বস্কিং একটি অসম্ভব জনপ্রিয় খেলা। এমনকি এক সময়ের টানাটানির সংসারে বেড়ে ওঠা কিশোর মোহাম্মদ আলী ও মাইক টাইসন বস্কিংয়ের মাধ্যমেই হয়েছিলেন মিলিনিয়ার। অথচ বাংলাদেশের বক্সাররা এই পেশাটিকে এতদিন বেছে নিতেন, শুধু একটি চাকরির আশায়। দীর্ঘ একটা সময় পর্যন্ত এই খেলাটার সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষজন বিশ্বাসই করতে পারতেন না যে, বক্সিংতাই একটা বিশাল ব্র্যান্ড। বলা হয় যে, যখন কিছু প্রায় ধ্বংসপ্রায়, তখন সেই ছাই থেকেই জন্ম নেয় নতুন কিছু। ঠিক তেমনই নতুন এক শুরুর আশা দেখিয়ে যাচ্ছে বিবিএফ। দেশের প্রায় ৩০ জন অপেশাদার বক্সার বিবিএফের মাধ্যমে পেশাদার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি আদনান হারুন একজন তরুণ উদ্যোক্তা। যার চোখভরা স্বপ্ন বাংলাদেশের বক্সিং নিয়ে। তারুণ্যের প্রচেষ্টায় বদলায় জীর্ণকায় সবকিছু। আদনান ঠিকÑ কি কারণে বাংলাদেশের খেলাধুলায় পিছিয়ে থাকা বক্সিংয়ে অমিত সম্ভাবনা দেখেছিলেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ দেশের ছেলেমেয়েরা বক্সিং বেছে নেয় শুধু সার্ভিসেস সংস্থাতে সৈনিকের চাকরির আশায়। দেশের প্রতিনিধিত্ব করলে হয়তো পদকও জেতে মাঝেমধ্যে। কিন্তু বক্সিংতো-এর চেয়েও অনেক বর ব্যাপার। সারা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাগুলোর একটি পেশাদার বক্সিং। আমি দেখলাম আমাদের ছেলেমেয়েদের ভালো সম্ভাবনা আছে এখানে।’ বিবিএফ গত মে মাসে একটি ত্রি-দেশীয় পেশাদার বক্সিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করে সারা দেশে সারা ফেলে দিয়েছিল। তারপরে দেশের শীর্ষ স্থানীয় বক্সারদের অংশগ্রহণে ‘রাম্বল ইন গুলিস্তান’ ব্যানারে যথাক্রমে ২৯ জুলাই ও ১৪ অক্টোবর, দুটি স্থানীয় প্রো বক্সিং শো আয়োজন করে বিবিএফ ও এক্সেল স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট। সর্বশেষ প্রতিযোগিতাতে নামমাত্র একতা দর্শনীর মাধ্যমে খেলা দেখতে হয়েছিল। তবুও কানায় কানায় পূর্ণ ছিল গুলিস্তানের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়াম। তবে শামীমা আক্তার ও সুমাইয়া সুলতানা খুকুমণির বাউটটি এই প্রতিযোগিতাকে ভিন্নমাত্রা দিয়েছিল। এই দুই নারীই এ ফাইটের মাধ্যমে পেশাদার বক্সিংয়ে নাম লিখিয়েছেন। বিবিএফ বাংলাদেশের একমাত্র সংস্থা যা বিশ্ব বক্সিং কাউন্সিল দ্বারা স্বীকৃত এবং অনুমোদিত। আর বিশ্ব বক্সিং কাউন্সিল সারা পৃথিবীর চারটি প্রধান সংস্থার মধ্যে একটি, যেটি পেশাদার বক্সিং প্রতিযোগিতার অনুমোদন দিয়ে থাকে। তারা দেশের শীর্ষস্থানীয় বক্সারদের সাথে একসঙ্গে কাজ করতে সক্ষম হয়েছে। একই সঙ্গে সফলভাবে বছরব্যাপী প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছে। সুরা কৃষ্ণ, আল আমিন এবং শামিমা আক্তারের মতো পেশাদার বক্সারদের যথাযথভাবে প্রমোত করছে বিবিএফ। বলে রাখা ভালোÑ সুরা কৃষ্ণা এবং আল আমিনের আন্তর্জাতিক সফলতা বয়ে নিয়ে এসেছে। বিবিএফ সভাপতি আদনান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ‘দেখুন এই মুহূর্তে আমরা স্পন্সর আনার চেষ্টা করছি। যদি দেশের কর্পোরেটগুলো বা বিভিন্ন স্পন্সররা এগিয়ে আসে, তাহলেই আমাদের সাফল্য হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আমাদের লক্ষ্য হলো বক্সারদের বিকাশ করা, তাদের সত্যিকারের পেশাদার করা এবং তাদের আন্তর্জাতিক মানে গড়ে তুলতে সাহায্য করা।’ পেশাদার বক্সিংয়ের এক এক রাউন্ড হয় ৪ মিনিট করে। যা ৪টি রাউন্ড দিয়ে শুরু হয় এবং সর্বোচ্চ ১২ রাউন্ড পর্যন্তও গড়ায়। এই মানের খেলোয়াড় কি বাংলাদেশে আছে? জানতে চাওয়া হলে আদনান বলেন, ‘আপনি জানলে খুশি হবেন যে, এরই মধ্যে আমাদের কয়েকজন পেশাদার বক্সার ৬ রাউন্ড পর্যন্ত খেলার যোগ্যতা রাখে।’ আর এই মানের খেলোয়াড় তৈরি করতে গেলে অনেক অনুসঙ্গের পাশাপাশি সেই বক্সারের আর্থিক স্বচ্ছলতাও গুরুত্বপূর্ণ। একজন আন্তর্জাতিক মানের বক্সারের প্রয়োজন হয়Ñ নিরবচ্ছিন্ন অনুশীলন, ট্রেনার, পুষ্টিকর খাদ্য ও অনুশীলনের স্থান। তাই এ লড়াইয়ে সফল হতে হলে আদনানের মতো বক্সিং পাগল মানুষদের প্রয়োজন পৃষ্ঠপোষকতা। বিবিএফের এ বছরেই আয়োজন করার কথা আরো বক্সিং শো এবং সেটা বড় আকারে আসতে যাচ্ছে। সঙ্গে দেখা মিলতে পারে র্যাপটর স্পোর্টস ম্যানেজমেন্টের মতো প্রমোটারদের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।