Inqilab Logo

বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

পটুয়াখালীতে ২৪ ঘন্টায় ২৫৩ মি.মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড, ৫০ হাজার সহস্রাধিক লোক আশ্রয়কেন্দ্র আশ্রয় গ্রহন

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং

পটুয়াখালী জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০২২, ৬:১৩ পিএম | আপডেট : ৬:৪৭ পিএম, ২৪ অক্টোবর, ২০২২

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং‘র প্রভাবে পটুয়াখালীতে ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। দমকা ও ঝড়ো বাতাসের কারনে কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর বেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে। জেলার সকল নদ-নদীর পানির উচ্চতা ২ থেকে ৩ ফুট বৃদ্ধি পেলেও দিনের জোয়ারে বিপদসীমা অতিক্রম করেনি,তবে অমবস্যার জোয়ের প্রভাবে রাতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।
পটুয়াখালীর খেপুপাড়া রাডার স্টেশনের উচ্চপর্যবেক্ষক ফিরোজ কিবরিয়া জানান,গতকাল ২৩ অক্টোবর বিকেল ৩ টা থেকে আজ ২৪ অক্টোবর বিকেল ৩ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ২৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকডর্ করা হয়েছে এর মধ্যে গত মধ্যরাত ১২ টা থেকে আজ বিকেল ৩ টা পর্যন্ত ১৫ ঘন্টায়ই২৪৫ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এ ছাড়া পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে,গতকাল ২৩ অক্টোবর বিকেল ৩ টা থেকে আজ ২৪ অক্টোবর বিকেল ৩ টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকডর্ করা হয়েছে, এর মধ্যে গত মধ্যরাত ১২ টা থেকে আজ বিকেল ৩ টা পর্যন্ত ১৫ ঘন্টায়ই ১৯৫.৫ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
পটুয়াখালীর খেপুপাড়া রাডার স্টেশনের উচ্চপর্যবেক্ষক ফিরোজ কিবরিয়া জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আজ (সোমবার) দুপূর ২টা দিকে পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিলো। আজ সকাল ৯ টা পর্যন্ত বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৩২ কিলোমিটার। তাই এটি উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানার শঙ্কায় পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে একটানা প্রবল বর্ষনে পটুয়াখালী জেলার সর্বত্র জনজীবন অচল হয়ে পড়েছে। পটুয়াখালী পৌর এলাকার অধিকাংশ রাস্তা ঘাট তলিয়ে রয়েছে। শহরের বাহিরেরউপজেলা সহ চরাঞ্চলের জনজবীনে নেমে এসছে চরম দূর্যোগ । একদিকে প্রবল বর্ষন পাশাপশি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বেড়ীবাধহীন এলাকাগুলি দিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে যে ভাবে বাড়িঘড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে পাশাপাশি ফসলী জমি তলিয়ে গেছে।
জেলার কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া, ধানখালী ও চম্পাপুর ইউনিয়নের দীর্ঘ এলাকায় বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত। এখন জলোচ্ছ্বাস হানা দিলে রাবনাবাদ পাড়ের মানুষের জীবন ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। এমনিতেই সোমবার দুপুরের অস্বাভাবিক জোয়ারে এক দফা প্লাবিত হয়েছে এসব জনপদ। রবিবার রাত থেকে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নে বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাস করা অন্তত পাঁচ হাজার পরিবারের বসবাস। এসব পরিবারের মানুষ তাদের ঘরবাড়ি নিয়ে জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটায় চরম ক্ষতির শঙ্কায় পড়েছেন। দরিদ্র ও অতিদরিদ্র এসব পরিবারের সদস্যদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কুয়াকাটায় জিরো পয়েন্টের দুই দিকে বাঁধের বাইরের ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করা দুই শতাধিক পরিবারে বিরাজ করছে এক ধরনের অজানা ক্ষতির শঙ্কা। মোট কথা, সাগরপাড়ের জনপদ কলাপাড়ায় সিত্রাং আতঙ্কে কাটছে লাখো মানুষের প্রতিটি মূহুর্ত।

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় ৪ থেকে ৫ ফুট পানি বেড়েছে। এতে নিম্নাঞ্চল ও অরক্ষিত বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও বেড়িবাধের বাইরে থাকা কয়েক হাজার বাড়ি-ঘর পানিতে ডুবে গেছে। এদিকে পানিবন্ধী লোকদের উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

প্লাবিত গ্রাম গুলো হচ্ছে- রাঙ্গাবালী সদর ইউনিয়নের চরকাশেম, মাঝের চর, ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া, কাউখালি, ফুলখালি,চরনজির, চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরআন্ডা, নয়াচর চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের বিবির হাওলা, গরভাঙ্গা, মধ্য চালিতাবুনিয়া, উত্তর চালিতাবুনিয়া ও লতার চর।
এছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নে বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাস করা অন্তত পাঁচ হাজার পরিবারের বসবাস। এসব পরিবারের মানুষ তাদের ঘরবাড়ি নিয়ে জলোচ্ছ্বাসের ঝাপটায় চরম ক্ষতির শঙ্কায় পড়েছেন। দরিদ্র ও অতিদরিদ্র এসব পরিবারের সদস্যদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। কুয়াকাটায় জিরো পয়েন্টের দুই দিকে বাঁধের বাইরের ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করা দুই শতাধিক পরিবারে বিরাজ করছে এক ধরনের অজানা ক্ষতির শঙ্কা। মোট কথা, সাগরপাড়ের জনপদ কলাপাড়ায় সিত্রাং আতঙ্কে কাটছে লাখো মানুষের প্রতিটি মূহুর্ত।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবেলায় জেলায় ৭০৩টি সাইক্লোন সেল্টার, ২৬টি মুজিব কিল্লা, ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, ওষুধ ও মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া জেলায় উদ্ধারকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে জানিয়ে জেলা ত্রাণ পূনর্বাসন কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, জেলার ৮ উপজেলায় নগদ ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা, ২৫ মে.টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলা ও জেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। এদিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সন্ধ্যা ৬ টায় জেলার ৮টি উপজেলায় সাইক্লোন সেল্টার গুলোতে ৫০ হাজার ৮২২ জন আশ্রয় গ্রহন করেছেন বলে জেলা ত্রাণ পূনর্বাসন কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দেবনাথ নিশ্চিত করেছেন।

পটুয়াখালীতে আজ সকাল থেকে ঢাকাসহ সব রুটে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নেচলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালী নদী বন্দরের পরিদর্শক দিনেশ কুমার সাহা।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির এসিসেটেন্ট প্রোগ্রাম অফিসার মো: আল-আমীন তারেক জানান, ঘূর্নিঝড় সিত্রাং এর ৪ নম্বর সিগনেল দেয়া পরই আমাদের ভলান্টিয়াররা মাইকিং সহ সতকর্তা মূলক অন্য কাজগুলি শুরু করে দিয়েছেন ,জেলায় আমাদের ৬ শতাধিক ভলান্টিয়ার রয়েছেন ,আজ সকালেই আমাদের ভলান্টিয়াররা বয়স্ক,অসুস্থ লোকজনদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার কাজ শুরু করেছেন।
কলাপাড়া ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান জানান,জেলায় আমাদের ৮৭০০ ভলান্টিয়ার রয়েছেন এর মধ্যে কলাপাড়া উপজেলায়ই রয়েচে ৩১৬০ জন ভলান্টিয়ার । উপজেলার ১৭৫ টি সাইক্লোন সেল্টারেই দেড়লাখ লোকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ইতোমধ্যে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ৫ সহ¯্রাধিক লোক আশ্রয় নিয়েছেন বলে তিনি জানান।

পর্যাপ্ত পানি বিশুদ্ধকরন ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় ঔষধ নিয়ে প্রতিটি ইউনিয়নে অন্তত একটি করে মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে বলে সভায় নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন ডাঃ এস.এম. কবির হাসান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন জানান, সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় পটুয়াখালী ও কলাপাড়া সার্কেলের আওতায় লোকবলসহ ১০ হাজার জিও ব্যাগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, জেলার ৭০৩ টি সাইক্লোন শেল্টার ও ব্যাবহারযোগ্য ২৬ টি মুজিব কিল্লা বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানি সহ প্রস্তুত রাখা, প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে মেডিকেল টিম গঠন, দরকারি ঔষধের ব্যাবস্থা রাখা, পর্যাপ্ত শুকনো খাবার সংগ্রহ, অরক্ষিত ও দুর্বল বেড়িবাঁধ জরুরি মেরামত, সকল মানুষের কাছে সতর্ক বার্তা পৌঁছে দিয়ে তাদেরকে সতর্ক করা, উদ্ধারকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবদের পস্তুত রাখা, জরুরী সড়ক মেরামত, প্রতিটি উপজেলা ও জেলায় নিয়ন্ত্রন কক্ষ খোলা রাখার জন্য বিভিন্ন দপ্তর প্রধানকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ বিভাগকে পর্যাপ্ত লোকবল সহ ক্ষয় ক্ষতি মোকাবেলায় প্রস্তুুত থাকার জন্য অনুরোধ জানান তিনি। যাতে কোন কারনে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে সংযোগ পুনঃস্থাপন করা যায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ