Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মেলবর্নে টি-টোয়েন্টির মহাকাব্য

বিতর্কিত’ শেষ ওভারে হারল পাকিস্তান

নাভিদ হাসান | প্রকাশের সময় : ২৪ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

রোমাঞ্চের নানা অলিগলি পেরিয়ে ম্যাচ গড়াল শেষ ওভারে। সেখানে নাটকীয়তায় ভরপুর ছিল প্রতি মুহূর্ত। অবশ্য ৩১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা রোহিত শর্মার দল যে শেষ ওভারের এ রোমাঞ্চে পদাপর্ণ করবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল না ঘোর ভারত সমর্থকরাও। মেলবর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে উপস্থিত ৩০ হাজার ২৯৩ জন দর্শকদের সঙ্গে, টিভি সেটের সামনে বসে থাকা সারা পৃথিবীর কোটি কোটি সমর্থকদের মাঝেও তখন রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা বিরাজমান। মোহাম্মদ নাওয়াজের করা শেষ ওভারের তৃতীয় বলটি ছক্কা হাকালেন বিরাট কোহলি, একইসঙ্গে আম্পায়ার উচ্চতার কারণে ডাকলেন ‘নো’ বল, যা ছিল চরম প্রশ্ন জাগানিয়া। শেষ বলে যখন ১ রান দরকার তখন লং-অফে উড়িয়ে মারলেন রবীচন্দ্র অশ্বিন। ফিল্ডার পেয়ে থাকায়, সহজেই পেয়ে গেলেন রানটি। উল্লাসে মাতলো গোটা ভারত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের ম্যাচে, প্রথমে ব্যাট করে নানা চড়াই-উৎরাই পার করে পাকিস্তান সংগ্রহ করতে পেরেছিল ৮ উইকেটের বিনিময়ে ১৫৯ রান। ভারত জিতল ৪ উইকেট হাতে রেখে। টি-টয়েন্টিতে এটি ভারতীয়দের চতুর্থ শেষ বলে জয়।

রান তাড়া করতে নেমে শেষ ওভারে ভারতের দরকার ছিল ১৬ রান। নেওয়াজের প্রথম বলেই বল মিডে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিস টাইমিংয়ে কাভারে দাঁড়িয়ে থাকা বাবর আজমের ক্যাচে পরিণত হন হার্দিক পান্ডিয়া। পরের বলে দিনেশ কার্তিক সিঙ্গেল নিলে লক্ষ্যটা হয়ে যায় ৪ বলে ১৫ রান। কিন্তু বিরাট ছিলেন অবিচল। তৃতীয় বলটি লং অনে পাঠিয়ে নিলেন ২ রান। পরের বলটিতে নেওয়াজ দিলেন কোমরের কাছাকাছি উচ্চতার বলে ছয় হাঁকান তিনি। লেগ আম্পায়ার মরিচ এরেসমাস প্রথমে ‘নো’ না ডাকলেও বিরাটের আবেদনে সাড়া দিলেন। তবে রিপ্লেতে দেখে গিয়েছে বলটি ঠিক কোমরের উপরে ছিল না। ফলে লক্ষ্য নেমে আসে ৩ বলে ৭ রানে। নাওয়াজ এরপর ওয়াইড দিলেন। পরের বলে ইউর্কারে উপরে ফেললেন বিরাটের স্টাম্প, বল চলে গেল গালির দিকে। ‘ফ্রি হিট’ থাকায় দৌড়ে তিন রান নিল ভারত। তাতে জয় চলে আসে মুঠোয়।

তবে ম্যাচের নাটকীয়তার বাকি ছিল তখনো। পঞ্চম বলে কার্তিক স্টাম্পিং হয়ে গেলে ম্যাচ গড়ায় শেষ বলে। স্ট্রাইকে নতুন ব্যাটসম্যান অশ্বিন। তবে স্নায়ুচাপে হেরে আবারও ওয়াইড দিয়ে বসেন নেওয়াজ। সমীকরণ নেমে আসে ১ বলে ১ রানে। ঠাণ্ডা মাথায় মিড অফ পার করে যা সহজেই তুলে নেন অশ্বিন। ১৬০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ভারতের দুই ওপেনার লোকেশ রাহুল ও রোহিত ফেরেন সমান ৪ রান করে। সূর্যকুমার যাদবও ১৫ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি। নাসিম শাহর বলে লোকেশ বোল্ড হবার পর রোহিত ও সূর্যকুমারকে ফেরান হারিস রাউফ। সেখান থেকে ভারতকে ম্যাচে টিকিয়ে রাখেন বিরাট ও হার্দিক। হার্দিক ৩৭ বলে ৪০ করেন। তবে দীর্ঘদিন ফর্মের বাইরে থাকা বিরাট এদিন দেখা দেন পুরোনো রূপে। শেষ ১৮ বলে যখন ৪৮ রান দরকার তখন ১৮ ও ১৯তম ওভারে যথাক্রমে ১৭ ও ১৫ রান বের করার পেছনে দারুণ ভূমিকা রাখে ভারতের এই সাবেক অধিনায়ক। ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৫৩ বলে ৮২ রানের হার না মানা এক অসাধারণ ইনিংস খেলেন বিরাট।

ম্যাচ শেষে রোহিত বলেন, ‘যেভাবে জিতেছি, যেভাবে আমরা ফিরে এসেছি, তা আমাদের জন্য আরও আনন্দদায়ক। বিরাটকে টুপি খোলা অভিনন্দন। এটি তার সেরা নয়, তবে ভারতের হয়ে খেলা সেরা ইনিংসের একটি।’ ম্যাচ সেরা বিরাট বলেন, ‘হার্দিক আমাকে বারবার ‘আপনি পারবেন’ বলে অনুপ্রাণিত করছিল।’

টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা স্মরণকালের সবচেয়ে বাজে করেছিল পাকিস্তানের। বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান একসাথে জুটি বাধার পর থেকে তাদের দু’জনের ব্যাটে সর্বনিম্ন সম্মেলিত রান ছিল ৫, আর গত কাল এলো ৪! আর এই ভয়ংকর জুটিকে ফেরানোর কঠিন কাজটি করলেন আর্শদ্বীপ সিং। ২৩ বছর বয়সি এই পেসার বাবরকে নিজের প্রথম বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলার পর, দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে রিজওয়ানকে সাজঘরে ফেরান। ধবংসস্তূপ থেকে ঘুড়ে দাঁড়ানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন শান মাসুদ ও ইফতেখার আহমেদ। পাকিস্তানের দলীয় অর্ধশত আসে নবম ওভার শেষে। নিজের খেলা প্রথম ১৭ বলে মাত্র ১৩ রান করা ইফতেখার, ১০ থেকে ১২তম ওভারে মেলবর্নে তুললেন ঝড়। শামির ইনসুইংয়ে কাটা পড়ার আগে ৩৪ বলে ২ চার ও ৪ ছক্কায় খেলে যান ৫১ রানের এক ঝলমলে ইনিংস। এরপর আর কোনো প্রতিষ্ঠিত পাক ব্যাটার দুই অংকের দেখা পায়নি। ভারতীয় বোলাররা স্কয়ার সাইডের বাউন্ডারির বিশালতার কথা মাথায় রেখে লেংথ বোলিং করে গেলেন সমানে, আর পাক ব্যাটাররাও সেই ফাঁদে পড়ে তুলে মারতে গিয়ে আউট হলেন। ইফতেখার ও মাসুদ ছাড়া পাকিস্তানের কোনো প্রতিষ্ঠিত ব্যাটার দুই অংকের দেখা পাননি। শাহীন ৮ বলে ১৬ করে আউট হলেও, ৪২ বলে হার না মানা ৫২ রানের ইনিংস খেলেন মাসুদ। আর্শদ্বীপ ও হার্দিকও শিকার করেন ৩টি করে উইকেট।

আজকের খেলা
বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডস সকাল : ১০টা
দক্ষিণ আফ্রিকা-জিম্বাবুয়ে দুপুর : ২টা



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ