Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আইনের ফাঁক-ফোঁকরেও নির্যাতন-নিষ্পেষণ থাকে: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ অক্টোবর, ২০২২, ৭:১৩ পিএম

জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, আইন অধ্যয়নের মাধ্যমে সমাজে মুক্তবুদ্ধির জায়গা নিশ্চিত হয়। নতুন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সমাজ আরও আধুনিক ও অগ্রসর হয়। সুতরাং যারা আইনের শিক্ষার্থী, তারা জীবনজুড়ে মূলত বিশ্বব্যবস্থাকে পাল্টে দেয়ার জন্য নিজেকে নিবেদিতপ্রাণ করে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর শিশুপুত্র রাসেলকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়, যাতে বঙ্গবন্ধু পরিবারের একটি সদস্যও যেন বেঁচে না থাকে। শুধু তাই নয়, হত্যা করে এই দেশে আইন করা হয়েছে ইনডেমনিটির। যে আইনে নিষ্ঠুর নিয়ম করে হত্যাকারীদের বিচার করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আবার দেশে যখন গণতন্ত্র ফিরেছে, তখন সেই কালো আইন বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচারের পথ নিশ্চিত করা হয়েছে। এর মানে আইনের ফাঁক-ফোঁকরেও নির্যাতন, নিষ্পেষণ থাকে। অপরের উপর খরগ হবার সমস্ত ব্যবস্থা থাকে। গত শনিবার রাজধানীর আইডিয়াল ল’ কলেজ আয়োজিত নবীন বরণ, কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এসব কথা বলেন।

প্রফেসর ড. মশিউর রহমান বলেন, আইনের শিক্ষার্থী হিসেবে পেশায় আপনি কতটা ভালো করলেন, না করলেন সেটির চেয়েও আপনি আইন শিখেছেন এটিই তো আপনাকে এক যৌক্তিক মানুষে পরিণত করবে। যেকিনা বুঝবে পৃথিবীতে থাকা আর না থাকার পার্থক্য কোথায়। বিচার কোথায় কোথায় রুদ্ধ হয়। এর মধ্য দিয়ে যখন আপনি সমাজে বিচরণ করবেন তখন আপনার মধ্যে একটি সুন্দর যৌক্তিক মানুষ বসবাস করবে। কেননা আপনি পরিচালিত হতে চেয়েছেন আইনের দ্বারা, যা পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি। যা দিয়ে মানুষ নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু তাঁরও একটি গোড়াপত্তন আছে। মায়ের চোখের যে চাহনি, সেই চাহনি আইন না। কিন্তু সেটি সবচেয়ে বড় শাসনের অস্ত্র। সমাজ আইনের বাইরেও কিছু বিষয়কে ধারণ করে। তার মধ্য দিয়েও আমরা নিজেরা নিয়ন্ত্রিত হই। সেটিও আমাদের জানা-বোঝার বিষয়। সেখান থেকেই মূলত আইনের উত্থান। প্রকৃতি, সমাজ এবং রাষ্ট্র আমাদের সংঘবদ্ধতার সকল স্তরে আমরা পরিশুদ্ধ হতে চাই। সে কারণেই আইনের মাধুর্য ভিন্নতর। আমরা সেরকম আইন শিক্ষার মাধ্যমে নিজেদের প্রস্ফুটিত করবো।’

 

তিনি বলেন, ‘আইন পড়া মানে এই নয় যে, তিনি আইনজীবী হতে চান। আপনি জীবনজুড়ে আইনের শিক্ষার্থী হতে পারেন। কেননা জীবনজুড়ে বিশ্বব্যবস্থার সঙ্গে আপনি সম্পৃক্ত থাকতে চান। বিশ্বব্যবস্থাকে যদি আপনি অধ্যয়ন করেন। এই পৃথিবী যতো বার যতো কিছুতে ডিজ-অর্ডারে এসেছে, যখনই বিশৃঙ্খলা এসেছে একটি চরম যুদ্ধাবস্থা এসেছে, প্রতিটাবার সমাজকে সঠিক ধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য বিজ্ঞানী আইনের জায়গাটা খুঁজেছেন। একজন ন্যাচারাল সাইন্টিস্ট তার মূল ইস্টারেস্ট হচ্ছে রুল অব ন্যাচার। একজন সোশ্যাল সাইন্টিস্ট তার মূল জায়গা হচ্ছে রুল অব সোসাইটি। বিশ্বব্যবস্থা যখন ডিজ-অর্ডারে আসে, তখন তাকে আবার ফিরিয়ে আনার জন্য ন্যাচারাল সাইন্টিস্ট, সোশ্যাল সাইন্টিস্ট সবাই মিলে এক জায়গায় হয় সেটিকে শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনার। আজকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের যদি সুরাহা করতে হয় সেখানে সবচেয়ে বড় জায়গা নেগোসিয়েশন। কে করবে এটি? বৃদ্ধিদীপ্ত, আইন পেশায় অভিজ্ঞ, বিশ্বব্যবস্থা জানে এমন মানুষদের এখানে প্রয়োজন।’

 

জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় ভিসি বলেন, ‘আপনারা বার্ট্রান্ড রাসেলের নাম শুনেছেন। একজন দার্শনিক। বিশ্ব যখন একটি নতুন যুদ্ধের দিকে যাচ্ছিল। একজন বার্ট্রান্ড রাসেল বিশ্ব নেতাদের পত্র দিয়ে, পত্রাঘাত করে দর্শন চর্চা করে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে, সেই বিশ্বযুদ্ধকে তিনি ঠেকিয়েছেন। এটিই একজন আলোকিত মানুষের কাজ। আমরা বঙ্গবন্ধুর কথা বারংবার কেন বলি। কারণ বঙ্গবন্ধু তাঁর শিশুপুত্রের নাম রেখেছিলেন সেই বার্ট্রান্ড রাসেলের নামে। বঙ্গবন্ধু যখন বার্ট্রান্ড রাসেলের বই পড়তেন। যে মানুষটি বছরের পর বছর কারাগারে কাটিয়েছেন, তিনি যখন ঘরে ফিরে বাসায় বই পড়েছেন, পাশে সহধর্মিনীকে নিয়ে সেই পড়া অনুবাদ করে শুনিয়েছেন। একসঙ্গে দুজনে মিলে ঠিক করেছেন শিশুপুত্র রাসেলের নাম। সেই রাসেলকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়, যাতে বঙ্গবন্ধু পরিবারের একটি সদস্যও যেন বেঁচে না থাকে।’

কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ড. এম. এ. হালিম পাটওয়ারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্যারিস্টার মো. সাজ্জাদ হোসেন, তেজগাঁও কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রশিদ, তেজগাঁও মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ