Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে দিগুণ দামে বিক্রি করতো চক্রটি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশের সময় : ২০ অক্টোবর, ২০২২, ৬:৩৯ পিএম

দেশব্যাপী টিকিট কালোবাজারি চক্রের মূলহোতা সেলিমসহ মোট পাঁচজন সক্রিয় সদস্যদেরকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব৷

র‍্যাব জানায়, চক্রটির মূলহোতা সেলিম এবং অন্যান্য সদস্যরা মিলে রেলস্টেশনে লাইনে দাড়িয়ে এক একটি এনআইডি দিয়ে ৪ টি করে টিকিট সংগ্রহ করে। অনেক সময় তারা রিক্সাওয়ালা, কুলি, দিনমজুর এদেরকে অল্প টাকার বিনিময়ে লাইনে দাড় করিয়ে তাদের মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করে। এছাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও ব্যবহার করেও টিকিট সংগ্রহ করে থাকে। রেলস্টেশনে এসে টিকিট না পাওয়া যাত্রীদের কাছে ট্রেন ছাড়ার ঘন্টা দুয়েক আগে তখন দিগুন দামে টিকিট বিক্রি করে থাকে। সুযোগ এবং সময় বুঝে অনেক ক্ষেত্রে তারা টিকিটের দাম আরও বাড়িয়ে দেয়।


বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুটি পৃথক অভিযানে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৩। গ্রেপ্তাররা হলেন- চক্রের মূলহোতা মো. সেলিম (৪৮) ও বাকিরা হলেন- মো. শাহ আলম (৩৪), মো. লিটন (৩৫), মো. আ. রশিদ ফকির (৩০), খোকন মিয়াকে (৫৮)।

গ্রেপ্তার আসামীদের কাছ থেকে ট্রেনের ৮৮ টি টিকিট, মোবাইল ফোন ৪টি এবং নগদ ১৮ হাজার ৪৪৭ টাকা উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর টিকাটুলিতে র‍্যাব-৩ এর অফিসে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানান, রাজধানীর কমলাপুর এবং বিমানবন্দর রেলস্টেশনসহ সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন রেলস্টেশনে অধিক মুনাফার আশায় ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির মাধ্যমে একটি সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে তাদের তৎপরতা চালিয়ে আসছে। কমলাপুর রেলস্টেশনে এই কালোবাজারি চক্রটির মূলহোতা সেলিম এবং অন্যান্য সদস্যরা মিলে রেলস্টেশনে লাইনে দাড়িয়ে এক একটি এনআইডি দিয়ে ৪টি করে টিকিট সংগ্রহ করে।

এছাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও মুঠোফোন নাম্বার ব্যবহার করেও টিকিট সংগ্রহ করে থাকে। এরপর সেলিমের নেতৃত্বে এক একটি ট্রেন ছাড়ার দুই ঘন্টা আগে থেকে তারা বেশি মূল্যে টিকিট বিক্রির তৎপরতা শুরু করে। ট্রেন ছাড়ার সময় যত ঘনাতে থাকে তাদের মজুদ করা কালোবাজারি টিকিটের দাম তত বাড়তে থাকে। তারা সাধারনত দিগুন মূল্যে টিকিট বিক্রি করে থাকে। সুযোগ এবং সময় বুঝে অনেক ক্ষেত্রে তারা টিকিটের দাম আরও বাড়িয়ে দেয়।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, চক্রটি মূলত তিস্তা এক্সপ্রেস, এগারো সিন্দুর প্রভাতী, মহানগর প্রভাতী, চট্টলা এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস এবং পারাবত এক্সপ্রেস এই সব ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে থাকে। এই চক্রটির আরও সদস্য ইউনিট রয়েছে। প্রতিটি ইউনিটে ৫-৭ জন করে সক্রিয় সদস্য রয়েছে যারা তাদের টার্গেট করা ট্রেনগুলোর টিকিট কালোবাজারি করে সাধারন যাত্রীদের কাছে চড়াদামে বিক্রি করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করে।

গ্রেপ্তার আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাব জানায়, এই সংঘবদ্ধ চক্রটি গত ৭ বছর ধরে চক্রের মূলহোতা সেলিম এর নেতৃত্বে কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় বিভিন্ন ট্রেনের টিকিট কালোবাজারির মাধ্যমে সাধারন যাত্রীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়। তারা কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বিভিন্ন জেলার রেলস্টেশন গুলোতেও তাদের এজেন্টদের সাথে যোগসাজসের মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারির কার্যক্রম চালিয়ে থাকে।

র‍্যাব-৩ এর সিও বলেন, রেলস্টেশনে যে পরিমান টিকিট বরাদ্দ থাকে তার মধ্যে ৫০ শতাংশ বিক্রি হয় অনলাইনে। যার ফলে কাউন্টারে এসে অনেকে টিকিট না পেয়ে ফিরে যান। আর এই সুযোগটিই গ্রহণ করে টিকিট কালোবাজারি চক্রের সদস্যরা। কমলাপুর রেলস্টেশনে এই কালোবাজারি চক্রটির মূলহোতা সেলিম এবং অন্যান্য সদস্যরা মিলে রেলস্টেশনে লাইনে দাড়িয়ে এক একটি এনআইডি দিয়ে ৪ টি করে টিকিট সংগ্রহ করে। এমনকি অনেক সময় তারা রিক্সাওয়ালা, কুলি, দিনমজুর এদেরকে অল্প টাকার বিনিময়ে লাইনে দাড় করিয়ে তাদের মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করে।

র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক আরও জানান, এছাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও ব্যবহার করেও টিকিট সংগ্রহ করে থাকে। সংগ্রকৃত টিকিট নিয়ে এরা রেলস্টেশনের ভিতরে ছড়িয়ে পড়ে। এরা রেলস্টেশনে এসে টিকিট না পাওয়া যাত্রীদের কাছে তাদের কালোবাজারি টিকিট বিক্রির জন্য ঘুরতে থাকে। ট্রেন ছাড়ার ঘন্টা দুয়েক আগে যাত্রী সমাগম শুরু হলে তাদের দৌরাত্ম বেড়ে যায়। তারা তখন দিগুন দামে টিকিট বিক্রি করে থাকে। সুযোগ এবং সময় বুঝে অনেক ক্ষেত্রে তারা টিকিটের দাম আরও বাড়িয়ে দেয়। এটা তাদের স্বাভাবিক সময়ের কার্যক্রম।
ঈদসহ বিভিন্ন ছুটি এবং উৎসবকে কেন্দ্র করে তারা এক একটি টিকিট ৩-৪ গুন বেশি দামে বিক্রি করে থাকে।

মুলহোতা সেলিম জানায়, তারা গত কোরবানীর ঈদের সময় ৫০০ টাকার টিকিট সর্বচ্চ ২০০০ টাকায়ও বিক্রি করেছে। তারা প্রত্যেকে ৭-৮ বছর ধরে এই পেশার মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ এবং যাবতীয় খরচ চালায় বলে জানায়।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার মূলহোতা সেলিমের নামে টিকিট কালোবাজারির দায়ে ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মোট ৭ টি মামলা রয়েছে এবং বিভিন্ন সময় এর আগে জেলও খেটেছে। অপর আসামী শাহআলমের নামে আগেও টিকিট কালোবাজারির ৩ টি মামলা রয়েছে এবং সে র‌্যাব-৩ কর্তৃক গত ঈদুল আযহার আগে গ্রেপ্তার হয়ে ৩৫ দিন জেল খেটে জামিনে মুক্তি পায়। এর আগে আরেকটি মামলায় কারভোগ করে চলতি মাসেই জামিনে মুক্তি পেয়ে সে আবারও টিকিট কালোবাজারির কাজে লিপ্ত হয়।

গ্রেপ্তার রশিদের বিরুদ্ধে টিকিট কালোবাজারির ১টি মামলা রয়েছে। খোকন এর নামে ৪ টি মামলা এবং লিটনের নামেও ৪ টি করে টিকিট কালোবাজারির মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তারা প্রত্যেকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল খেটে জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও একই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলেও জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ