গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি। প্রতিদিন অগণিত মানুষের আনাগোনা বাড়ি ঘিরে। ওই বাড়ি সবসময় মাতিয়ে রাখত এক দেবশিশু। নাম তার শেখ রাসেল। কাঁচা বয়সই ছিল তার। দুই চোখে ছিল অপার বিস্ময়। সবার দৃষ্টি কাড়ত মায়াভরা মুখ।
ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ আদম তমিজী হক এক নিবন্ধে এসব কথা লিখেন। তার নিবন্ধটি তুলে ধরা হল:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের কনিষ্ঠ সন্তান। ঢাকার ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শেখ রাসেল। নিয়মিত ক্লাসে পাওয়া যেত তাকে। স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে গৃহশিক্ষক—সবারই পছন্দের শিশুটিকে আর কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেট ছিনিয়ে নিয়েছে তার দেহজ্যোতি। ওই দানব ঘাতকেরা শোনেনি মায়ের কাছে যাওয়ার আকুতি।
শেখ রাসেল বেঁচে থাকলে আজকের বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বহন করে আজকের বাংলাদেশে কিছু না কিছু ভূমিকা রাখার সুযোগ হয়ত তৈরি হতো তার জন্য। কিন্তু ফুল ফোটার আগেই তো হত্যা করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী, তখন জাপানি চিত্রপরিচালক নাগিসা ওশিমা বাংলাদেশে এসেছিলেন তাঁর ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করতে। একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন শিশু রাসেলের কথা। নাগিসা ওশিমা দেখতেন শিশুটি সব সময় তার বাবার পাশে পাশে থাকে। এটিই ছিল তাঁর প্রশ্ন—শিশুটি কেন কাছে কাছে থাকে? বঙ্গবন্ধু ঠাট্টা করেই জবাব দিয়েছিলেন, ‘ওর মনে বোধ হয় এমন ভয় আছে, কখন সে তার বাবাকে হারিয়ে ফেলে। ’ বাবাকে হারিয়েছে শেখ রাসেল। মা, ভাই, ভাবিদের হারিয়েছে। নিজেও হারিয়ে গেছে কোন দূরলোকে! সেই অনন্ত লোক থেকে কেউ কোনো দিন ফেরে না।
হয়ত এখানো ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে গেলে শেখ হাসিনা কিংবা শেখ রেহানার চোখে ভাসে সেই মায়াভরা মুখ, সেই দুষ্টুমিভরা চাহনি। কিন্তু বোনের বাড়িয়ে দেওয়া হাতে ধরা দেয় না ছোট ভাইটি আর। তাকে আর বুকে তুলে নেওয়া হয় না। শুধু বুকের ভেতরে থাকা কষ্টগুলো ঝরে পড়ে দুই চোখ বেয়ে অশ্রু হয়ে।
এই বাংলাদেশের জন্য শেখ রাসেল কী হতে পারত সে সব উত্তর আমাদের জানা নেই। আমরা জানি এক কালরাতের কাহিনী। বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসের এক কলঙ্কময় দিনকে আমরা জানি, যেদিন পুব আকাশে উঠেছিল রক্তমাখা সূর্য। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। চারদিকে তখন কেবলই গুলির শব্দ। ঘাতকের গুলিতে প্রাণ দিয়েছেন বাড়ির সব সদস্য। শিশু রাসেল যেতে চেয়েছিল তার মমতাময়ী মায়ের কাছে। তাকে হত্যা করা হবে না—এই অভয় চেয়েছিল সে। ঘাতকের বুলেট শোনেনি শেখ রাসেলের আকুতি।
আজ শেখ রাসেলের জন্মদিন। আজকের সব ফুল ফুটেছে শুধু তার জন্য। আজ পুব আকাশ কি রাসেলের রক্তের রঙে লাল! দুই বোনের জন্য আজকের দিনটি অন্য রকম। একজন ঢাকায়, অন্যজন লন্ডনে বসে কি অবগাহন করবেন রাসেলের স্মৃতির সরোবরে। সবার অলক্ষ্যে রাসেল এসে কি ঝাঁপিয়ে পড়বে বোনদের কোলে? কপালে চুমুর রেখা এঁকে দুই বোনই হয়ত বলবেন, ‘হ্যাপি বার্থ ডে রাসেল!’
আজ রাসেল বেঁচে থাকলে হতে পারতেন বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি, বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার হাতকে করতে পারতেন আরও শক্তিশালী। শেখ রাসেল আজ বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের কাছে একটি ভালোবাসার নাম। শেখ রাসেল তোমার মৃত্যু নেই, তুমি বেঁচে থাকো কোটি শিশুর অন্তরে। ব্যক্তিগতভাবে তোমার মুখ স্মরণে করতে যেয়ে আমার চোখ ভেজায়। তোমার অকাল প্রস্থান মানা যায় না, যাবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।