Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ২২ হাজার রোহিঙ্গা জাতিসংঘ

| প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের চলমান ‘জাতিগত নির্মূল প্রক্রিয়া’র কারণে অন্তত ২২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ এই তথ্য দিয়েছে।
সংস্থাটির হিসেবে রাখাইনে ৯ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন অভিযানে অন্তত ৮৬ জন নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের হিসেবে রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের দমন অভিযানের কারণে ঘর হারিয়েছেন ৩০ হাজার মানুষ। সহিংসতা থেকে বাঁচতে তারা বাংলাদেশ সীমান্তে ছুটে আসছেন। সর্বশেষ তথ্যে জাতিসংঘ জানিয়েছে, ১ নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ৬ সপ্তাহেরও কম সময়ে ২২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
শুক্রবার জাতিসংঘের মুখপাত্র পিয়েরে পিরন এক বিবৃতিতে এসব কথা জানান। তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ এ সহিংসতার সূত্রপাতের আগে সেখানকার ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ ত্রাণ সাহায্যের আওতায় ছিলেন। সরবরাহ ব্যবস্থা সীমিত করে দেয়ায় ৯ অক্টোবরের পর থেকে সেখানকার মাত্র ২০ হাজার মানুষের কাছেই ত্রাণ সাহায্য পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে। আর বাকি ১ লাখ ৩০ হাজার ব্যক্তির কাছে সাহায্য পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। এর আগে ৫ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) কক্সবাজার অফিসের প্রধান সংযুক্তা সাহানি জানিয়েছেন, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে সহিংসতার ঘটনায় নতুন করে ২১ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে।
তিনি বলেন, গত সপ্তাহে জাতিসংঘ ১০ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়ার কথা বললেও মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই সংখ্যা ২১ হাজারে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ রোহিঙ্গা টেকনাফ নয়াপাড়া, লেদা শরণার্থী ক্যাম্প এবং উখিয়া কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যরা জেলার বিভিন্ন স্থানে পরিচিতজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। সংযুক্তা সাহানি আরও বলেন, শুধু আইওএম নয়, কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের নিয়ে জাতিসংঘের ইউএনএইচসিআর, ডাব্লিউএফপি, ইউনিসেফের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থা ছাড়াও বিভিন্ন এনজিও কাজ করছে। সব সংস্থার হিসাবে বর্তমানে নতুন করে ২১ হাজার রোহিঙ্গা শুধুমাত্র কক্সবাজারে আশ্রয় নিয়েছে বলে আমরা একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছি।
তিনি বলেন, এখনও সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা আশ্রয়ের সন্ধানে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী সপ্তাহে এই সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। এদিকে, রোহিঙ্গাদের কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর সুযোগ করে দিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ১৪টি দেশ। শুক্রবার মিয়ানমারে অবস্থিত ওই দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতরা এক যৌথ বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান। কূটনীতিকরা অভিযোগ করেন, সামরিক কর্মকর্তারা প্রায়ই সেখানে সাহায্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত বাতিল করছেন অথবা বিলম্বিত করছেন।
টেকনাফের ৫ পয়েন্ট থেকে রোহিঙ্গাদের ১১ নৌকা ফেরত
টেকনাফ উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীর ৫ পয়েন্ট থেকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বোঝাই ১১টি নৌকা ফেরত পাঠিয়েছে বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি)। শনিবার ভোরে নাফ নদী পার হয়ে পাঁচটি পয়েন্ট দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টাকালে রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকাগুলো ফেরত পাঠায়।
টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুজার আল জাহিদ জানান, শনিবার ভোরে নাফ নদী পার হয়ে সীমান্তের পাঁচটি পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা বোঝাই ১১টি নৌকা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল। এ সময় বিজিবির টহল দলের সদস্যরা তাদের বাধা দেয় এবং মিয়ানমারে ফেরত পাঠায়।
তিনি আরও জানান, গত ১ নভেম্বর থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত টেকনাফের সীমান্তের ১৫টি পয়েন্ট দিয়ে ২৫১টি নৌকায় করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ২ হাজার ৪৫০ জন রোহিঙ্গাকে প্রতিহত করা হয়েছে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্ত বিজিবির টহল জোরদার রয়েছে বলেও দাবি করেন বিজিবির এই কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর বর্বরতা থেকে বাঁচতে নাফ নদী পার হয়ে সীমান্ত দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গারা আশ্রয়ের প্রত্যাশায় বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবৈধভাবে ঢুকেও পড়েছে। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী এই রোহিঙ্গাদের দাবি, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সে দেশের সেনাবাহিনীর বর্বরতা অব্যাহত রয়েছে। সেখানে সেনাবাহিনী নির্বিচারে রোহিঙ্গাদের জবাই ও গুলি করে হত্যা, ধর্ষণ অব্যাহত রেখেছে বলেও দাবি করেছেন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা।
বগুড়ার শেরপুরে জাসাস’র মানববন্ধন
বগুড়া অফিস জানায়, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা-এর উদ্যোগে বগুড়ার শেরপুরে মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা এবং অমানুষিক নির্যাতনের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের ওপরে বাসস্ট্যান্ডে ঘন্টাব্যাপী চলা ওই কর্মসূচিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ অংশ নেন। জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা শেরপুর উপজেলা কমিটির সভাপতি সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম শফিকের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব আলীর সঞ্চালনায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন, বগুড়া-৫ শেরপুর-ধুনট আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব হাবিবর রহমান, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা জানে আলম খোকা, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা মীর্জা সেলিম রেজা, সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সভাপতি সৈয়দ ফজলে রাব্বী ডলার, সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রশিদ সাইন, দৈনিক ইনকিলাবের বগুড়া ব্যুরো প্রধান মহসিন আলী রাজু, সাপ্তাহিক আজকের শেরপুর পত্রিকার সম্পাদক মুনসী আলহাজ্ব সাইফুল বারী ডাবলু, শেরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি নিমাই ঘোষ।
রাজবাড়ী কওমী মাদরাসা উলামা পরিষদ
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) উপজেলা সংবাদদাতা ঃ গতকাল শনিবার সকালে রাজবাড়ী জেলা শহরের আজাদী ময়দানে মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর বর্বরতম গণহত্যা, শিশু হত্যা, ও নির্যাতন বন্ধের দাবীতে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রতিবাদ সভায় বক্তৃতা করেন জেলা কওমী মাদরাসা উলামা পরিষদের সিনিয়ার সহ সভাপতি মাওলানা আমিনুল ইসলাম, মাওলানা রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ, এ্যাডভোকেট এম এ খালেক, মাওলানা ওলিউর রহমান, মাওলানা ইয়াছিন্ সুলতান, মাওলানা শহিদ মোল্লা, হাফেজ ইলিয়াজ, মাওলানা আলাউদ্দিন আল আজাদ, কারী আবু ইউসুফ, মাওলানা আয়ুব আনসারী, মাওলানা আব্দুল্লাহ মুসা, মাওলানা আব্দুল বাতেন প্রমুখ বক্তৃতা করেন। বক্তারা এ সময় মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর বর্বরতম গণহত্যা, শিশু হত্যা, ও নির্যাতন বন্ধের দাবী জানান এবং সরকারের প্রতি বাংলাদেশের সীমানা খুলে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ