পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কথা শুনছে না মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। মাঠ প্রশাসনের সাথে ইসির বিরোধ ক্রমেই বাড়ছে। এর ফলে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়ে জনমনে সন্দেহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইসির প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা আরও বাড়ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন মাঠ প্রশাসনের সাথে নির্বাচন কমিশনের এমন বিরোধ বা দ্বন্দ্ব সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায়। সারা দেশে মাঠ প্রশাসনই নির্বাচন সুষ্ঠু ও সফল করার প্রধান শক্তি। তারা যদি নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা না করে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন একেবারেই অসম্ভব। যার প্রতিফলন বিগত দুইটি জাতীয় নির্বাচনে প্রতিফলিত হয়েছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর, শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি, রাজনৈতিকদল ও কূটনৈতিকমহলসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় করেছে। সেখানে গত দুই জাতীয় নির্বাচনের অভিজ্ঞতার আলোকে সবারই বক্তব্য ছিল আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার বড় চ্যালেঞ্জ হবে মাঠ প্রশাসনের ওপর ইসির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা। কিন্তু বর্তমান ইসি তা করতে পারেনি। বরং মাঠ প্রশাসনের সাথে তাদের বিরোধ বা দ্বন্দ্বের বিষয়টি আরও উন্মোচিত হচ্ছে।
মাঠ প্রশাসনের কাছে ইসি যে অসহায় এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে গত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময়। স্থানীয় সংসদ সদস্য এলাকায় থেকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানোর অভিযোগের প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে ইসি তখন মাঠ প্রশাসনকে চিঠি দিয়ে ছিল। কিন্তু ইসির সে নির্দেশ মাঠ প্রশাসন তখন পালন করেনি বা করতে পারেনি। এ বিষয়টি তখন ব্যাপক অলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে। এমনকি মাঠ প্রশাসন ওই নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ারও তখন অভিযোগ ওঠে। তবে ইসি তখন এসব অভিযোগ নানাভাবে এড়িয়ে গিয়ে মাঠ প্রশাসরে পক্ষে অবস্থান নিলেও এখন তারা নিজেরাই সে অভিযোগ উত্থাপন করছে।
নির্বাচন ভবনে গত ৮ অক্টোবর সারা দেশের ডিসি-এসপিদের সাথে ইসির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান আসন্ন জেলা পরিষদ ও গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে বিধিভঙ্গ প্রসঙ্গে ডিসি-এসপিদের নপুংসক ও নখদন্তহীন আখ্যা দেন। একই সঙ্গে ইসি থেকে প্রাপ্ত সুবিধা ডিসি-এসপিদের অধীন ব্যক্তিরা ঠিকভাবে পান না বলেও অভিযোগ করেন। আনিছুর রহমান বলেন, ‘আপনাদের বক্তব্য শুনলাম। বেশির ভাগই নির্বাচনে আপনাদের সুযোগ-সুবিধাসংক্রান্ত। কিন্তু সামনে জেলা পরিষদ ও উপনির্বাচন আছে। সেই নির্বাচনে এমপিরা আচরণবিধি ভঙ্গ করে প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার কথা বলছেন। ইসির বিরুদ্ধে কথা বলছেন। কই আপনারা তো আইনানুযায়ী কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না? আপনারা কি নপুংসক-নখদন্তহীন হয়ে গেছেন?’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আমাদের সংলাপে ডিসি-এসপিদের নিরপেক্ষতা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো প্রশ্ন তুলেছে। এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে, নির্বাচন কমিশন থেকে আপনাদের যে পরিমাণ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তা ঠিকভাবে অন্যদের দেওয়া হয় না। সম্মানীভাতা ও ফুয়েল কিনতে টাকা দেওয়া হলেও আপনারা তা দেন না।’ তার এ বক্তব্য শুনে ‘ঠিক না, ঠিক না’ বলে একযোগে প্রতিবাদ করেন ডিসি-এসপিরা। এই পরিস্থিতিতে আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমার কাছে যথেষ্ট প্রমাণ আছে।’ এতে প্রতিবাদ আরো বাড়ে। অডিটরিয়ামে সিইসির সামনেই ডিসি-এসপিরা প্রতিবাদে এমন হৈচৈ শুরু করলে বক্তব্য বন্ধ রেখে আনিছুর রহমান নিজের আসনে চলে যেতে বাধ্য হন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমানের বলেন, ‘যা বলেছি এর বাইরে আমার আর বলার কিছু নাই।’
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, ইসি আনিছুর রহমানের কথার প্রক্ষেপণটা ওনাদের (ডিসি-এসপিদের) ভালো লাগে নাই, তবে কথাগুলো সত্য এবং অমূলক নয়। হইচই করাটা তাদের ঠিক হয় নাই, এটা সত্য কথা। এ পরিবেশ তৈরি হওয়াটা কোনোভাবেই ঠিক হয় নাই। সাময়িকভাবে বলব, মনে একটু খারাপ লাগছে। বিব্রত তো বটেই, কারণ ওরকম একটা ঘটনা কে চায়? মাথার মধ্যেই তো আনতে পারি নাই। ওরকম একটা পরিস্থিতি তৈরি হবে।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষে অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। সে হিসাবে নির্বাচনের আর মাত্র এক বছর দুই-তিন মাস সময় বাকি আছে। তাই আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার বার্তা দিতে মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে বসেছিল ইসি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে ইসির দায়িত্ব নেওয়ার পর মাঠ প্রশাসনের সাথে এটি ছিল তাদের প্রথম বৈঠক। তবে প্রথম বৈঠকেই তাদের মধ্যে বিরোধের বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসে। বর্তমানে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে জনমনে সৃষ্ট আস্থাহীনতার জন্য ডিসি-এসপিদের দায়ি করেন আনিছুর রহমান। তবে ডিসি-এসপিদের সম্মিলিত তীব্র প্রতিবাদের মুখে বক্তব্য শেষ না করেই নিজ আসনে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। মাঠ প্রশাসনের এই আচরণে অনেকটা স্তম্ভিত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে ইসি। যদিও সভা শেষে দেওয়া বক্তব্যে সিইসি ডিসি-এসপিদের দলীয় কর্মী-সমর্থক না ভাবার পরামর্শ দিয়েছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। এসপিরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকেন। যদিও ইসি ঘোষিত রোডম্যাপে বলা হয়েছে, রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা যতদূর সম্ভব ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে আপত্তি জানিয়েছে। তারা বলেছেন বিএনপির সময় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করে সুষ্ঠু নির্বাচন করা যাবে না। তাই নির্বাচন আয়োজনে ইসিকে ডিসি-এসপিসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের উপরই নির্ভরশীল হতে হবে। এ অবস্থায় ডিসি-এসপিদের সাথে তাদের যে বিরোধ বা অস্থাহীনতা তাতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান আদৌ সম্ভব হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন না।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা কোন নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন আয়োজনের জন্য অবশ্যই মাঠ প্রশাসনের উপর নির্ভর করতে হয়। দলীয় সরকার থাকলে মাঠ প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের কথা একবারে পাত্তাই দেয় না। অতীতের বিভিন্ন নির্বাচনে এটা স্পষ্ট প্রমানীত হয়েছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন তবুও ডিসি-এসপিদের অনিয়মের বিষয় কিছুটা বলেছেন। আসলে প্রশাসন বিগত নির্বাচনে যে ভয়াবহ অনিয়ম করেছে সেটিতো বলাই হয়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রশাসন সরাসরি যে অনিয়ম করেছে তাতেতো আইনানুযায়ী তাদের ৭ বছর সাজা হওয়ার কথা। কিন্তু ইসি সে বিষয়ে কিছুই বলছে না বা বলতে পারছে না। তাই দলীয় সরকার থাকলে মাঠ প্রশাসন কখনই ইসির কথা শুনবে না, সরকারের কথা মতই তারা চলবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ইনকিলাবকে বলেন, যে নির্বাচন কমিশন ডিসি-এসপিদের প্রতিবাদের মুখে বক্তব্য শেষ না করেই আসনে ফিরে যান, তিনি কিভাবে তাকে আদেশ বা নির্দেশ দিবেন। তার আদেশ বা নির্দেশতো ডিসি এসপি শুনবে না। যদি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় তাহলে নির্বাচন কমিশনকে টুটুজগন্নাথের ভূমিকাতেই থাকতে হবে। বর্তমান কতৃত্বাবাদী এই ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে অবাধ, বিশ্বাসযোগ্য, নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোন সুযোগ নেই। দলীয় সরকারের সময় ডিসি এসপিদেরকে যোগ্যতার চেয়ে আনুগত্যের বিচারে পাশ করাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ধরনের প্রশাসন ও দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অসম্ভব। একমাত্র নির্দলীয় তদারকি সরকারই অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।