Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মানুষের সাথে আল্লাহর যোগাযোগ

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সা.) সৃষ্টির সেরা অস্তিত্ব। তাঁর সুমহান ব্যক্তিত্ব মানবজাতির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তাঁর জীবন, শিক্ষা, নৈতিকতা ও আদর্শ মহান আল্লাহর বাণী দ্বারা সমর্থিত ও সর্বোচ্চ প্রশংসিত। বস্তুত তাঁর নবুওয়াত মানব সৃষ্টির প্রধান লক্ষ্যের অন্যতম মাইলফলক। পবিত্র কোরআন এ ঘোষণা দিয়েছে যে, সৃষ্টিজগতের কেন্দ্রীয় চরিত্র মানবজাতিকে যখন জান্নাত থেকে দুনিয়ায় প্রেরণ করা হয় তখন আল্লাহ তাআলা বলে দিয়েছিলেন : ঊর্ধ্বজগতের এই নিবাস থেকে তোমরা সবাই নেমে যাও। আর সময় সময় যখন আমার নিকট থেকে তোমাদের কাছে পথনির্দেশ আসবে তখন যে আমার পথনির্দেশ মেনে চলবে তার কোনো ভয় নেই, কোনো দুশ্চিন্তা নেই। (সূরা বাকারা : ৩৮)।

এরই ধারাবাহিকতায় আমরা দেখতে পাই যে, মানবিক বিশ্বে প্রথম মানুষ ব্যক্তিটিই আল্লাহর একজন নবী। অর্থাৎ যার মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর বান্দাগণকে নিজ জ্ঞান ও পরিচয়ের শিক্ষা দিয়ে থাকেন। মোটামুটিভাবে যা হচ্ছে নবী-রাসূলগণের মিশন।

কিতাবে আছে, মানুষের ইহজাগতিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রথম মানব ও নবী হযরত আদম (আ.) থেকে হযরত নূহ (আ.) পর্যন্ত নবীদের দাওয়াতের প্রধান চরিত্র ছিল। কারণ হিসেবে বলা হয়, প্রথম মানব সৃষ্টির যে ধর্মীয় প্রেরণা ছিল তা প্রকৃতি ও স্বভাবগত উপায়েই মানুষকে অবিমিশ্র তাওহীদ, রিসালত ও আখেরাতের বিশ্বাসের ওপর ধরে রেখেছিল। যে জন্য ইহজীবনযাপনের পার্থিব রীতি-শৃঙ্খলা শিক্ষা দেওয়াই ছিল নবীগণের কাজ। পরে যখন মানুষ তার পার্থিব স্পর্শে প্রভাবিত নফস বা প্রবৃত্তি এবং মানুষের চির শত্রু শয়তানের প্ররোচনায় নিজের কাজ ও চেতনায় ভুল-বিভ্রান্তির শিকার হতে শুরু করে তখন থেকে সূচনা হয় বিধিবদ্ধ রিসালতের।

নবীগণের মিশন মূলত তখন থেকেই প্রকটিত হয়। যাকে আমরা শরীয়তগত পথনির্দেশ বলে জানি। এখানে একটি কথা বলে রাখা খুবই সমীচীন মনে করি যে, দুনিয়ার সকল নবীর ধর্ম একটিই। যার মূল প্রেরণা হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর সামনে নিজের আনুগত্যের মস্তক অবনত রাখা। এ হিসেবে প্রথম শরীয়তধারী নবী হচ্ছেন হযরত নূহ (আ.)।

পবিত্র কোরআন বর্ণিত এই মহান পয়গম্বরের দাওয়াতের কার্যকালই সাড়ে নয়শ’ বছর। এরপর স্বজাতির হেদায়েতের সম্ভাবনা দেখতে না পেয়ে তিনি দুনিয়াতে প্রথম বড় আকারের আসমানী গজব কামনা করেন। তার দুআর ফলেই সামান্য কিছু ঈমানদার ছাড়া তৎকালীন পৃথিবীর সব মানুষ মহাপ্লাবনে ধ্বংস হয়ে যায়। প্লাবন শেষ হওয়ার পর এই পরিচ্ছন্ন তাওহীদ, রেসালত ও আখেরাতের দাওয়াত নিয়ে হযরত নূহ (আ.)-এর সন্তান ও কিছু অনুসারী বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে মূলত পৃথিবীকে আবাদ করেন।

এরপর মানবেতিহাসের একটি বড় রোড ক্রসের সামনে এসে নবুওয়াত ও রিসালাতের মিশন নতুন মোড় নেয়। আল্লাহকে ভুলে যাওয়া অথবা তাঁর সাথে শরিক নির্ধারণ করা মানবগোষ্ঠীকে পুনরায় আল্লাহর একত্ব, সার্বভৌমত্ব ও বড়ত্বের সাথে পরিচিত করার জন্য আল্লাহ তাঁর আরেক মহান পয়গম্বর হযরত ইবরাহীম (আ.)-কে নবী হিসাবে প্রেরণ করেন। আমরা এখান থেকে বিশ্ববাসী মানবজাতির সাথে আল্লাহর নবুওয়াত ও রিসালাতের মাধ্যমে স্থাপিত সম্পর্কের ধারাটি স্পষ্ট করে খুঁজে পাই। দুনিয়াতে প্রথম নামিয়ে দেওয়ার সময় তিনি আদম সন্তানের প্রতি যে বাণী দিয়েছিলেন তারই বাস্তবায়ন হচ্ছে নবী আদম থেকে ইবরাহীম (আ.) পর্যন্ত বর্ণিত এই প্রতিফলন। যে ধারাটিরই প্রধান দু’টি কেন্দ্র হচ্ছে বাইতুল্লাহ ও বাইতুল মুকাদ্দাস।

হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর মাধ্যমে খোদাদ্রোহের মোকাবেলায় আল্লাহর সার্বভৌমত্ব এবং শিরকের মোকাবেলায় তাওহীদের বিজয় নিশ্চিত করা হয়। বিশ্বাসী মানবগোষ্ঠীকে তখন আত্মসমর্পণকারী মুসলিম নামে ভূষিত করা হয় এবং এই তাওহীদি মানবগোষ্ঠীর জনক আখ্যায়িত করা হয় বহু পত্র-পল্লব, শাখাসম্বলিত নবীবৃক্ষ হযরত ইবরাহীম (আ.)-কে। যার সন্তানদের মধ্য থেকেই মধ্যপ্রাচ্য ও আশপাশের অঞ্চলভিত্তিক নবী-রাসূলগণকে প্রেরণ করা হয়। হযরত ইসহাক (আ.), ইয়াকুব (আ.), ইউসুফ (আ.), লূত (আ.), শোয়াইব (আ.), মূসা (আ.) প্রমুখ পয়গম্বর হয়ে হযরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত এমনকি কোরআন বর্ণিত সব নবী-রাসূলের ধারালতিকা এই তাওহীদের ইমাম ও আত্মসমর্পণকারী বিশ্ব মানবগোষ্ঠীর পিতা হযরত ইবরাহীম (আ.)-কে ঘিরেই প্রবর্তিত। আমরা এখানে হযরত হুদ (আ.), সালেহ (আ.), যাকারিয়া (আ.), ইয়াহইয়া (আ.) প্রমুখ নবীগণের কর্মধারাও উল্লেখ করতে পারি। বর্তমান সময়ে নিজেদের ইহুদি ও খ্রিষ্টান বলে পরিচয়দানকারী মানব সম্প্রদায়ের পূর্বসূরি সব নবী-রাসূলই ইবরাহীমি তাওহীদের ধারক-বাহক।



 

Show all comments
  • Golam Kibria ১১ অক্টোবর, ২০২২, ৮:০৬ এএম says : 0
    আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে কিয়ামতের মাধ্যমে ইহজগত হ’তে পরজগতে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কিয়ামতের ময়দানে সমস্ত মানুষের কর্মের হিসাব হবে। পরকালে আল্লাহর সাথে বান্দার সাক্ষাৎ হবে। তিনি মানব জাতিকে তাঁর সাক্ষাতের কথা জানিয়েছেন। হতভাগ্য মানুষের একটি বড় দল আল্লাহর এ সাক্ষাতের সুসংবাদকে অবিশ্বাস করে। কিন্তু তাঁর বিশ্বস্ত বান্দারা এ মহাসংবাদকে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে তাঁর সাক্ষাতের প্রতীক্ষায় থাকে।
    Total Reply(0) Reply
  • মাওঃসাইফুল ইসলাম পারভেজ ১১ অক্টোবর, ২০২২, ৮:০৬ এএম says : 0
    মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তবে সব মানুষ সমান নয়, তিনি মানুষকে পরীক্ষা করেন। কেননা মানুষকে অবশ্যই চিন্তা ও বিবেচনা করতে হবে, কে তাদেরকে সুখ-শান্তি ও মান-সম্মান দিয়ে পৃথিবীর বড় আসনে বসিয়েছেন এবং অন্যদেরকে দরিদ্রতা ও দুঃখের মধ্য দিয়ে জীবন যাপনে অভ্যস্ত করেছেন। যিনি এসব সৃষ্টি করেছেন, তিনি আমাদের প্রতি কি ধরনের বিধি-বিধান জারি করেছেন তা ভেবে দেখতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Rabbul Islam Khan ১১ অক্টোবর, ২০২২, ৮:০৫ এএম says : 0
    মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহর ইবাদত করার জন্যে। এ বিষয়ে তিনি মানুষকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বহু আদেশ, উপদেশ ও জ্ঞান দান করেছেন এবং সেগুলি মেনে চলার কঠোর আদেশ দিয়েছেন। কোন কারণবশতঃ মানুষ ভুল করে ফেললে, তওবার মাধ্যমে নিজেকে সংশোধন করে সঠিক পথে ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে। এরপরেও কেউ আল্লাহর আদেশ অমান্য করলে সে শাস্তিযোগ্য অপরাধী হিসাবে গণ্য হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান ১১ অক্টোবর, ২০২২, ৮:০৪ এএম says : 0
    বান্দা যখন নামাজ আদায় করে, তখন তার সাথে আল্লাহর একান্ত আলাপন হয়।এই নিভৃত আলাপন বা যোগাযোগ উপলব্ধির জন্য গভীর মনোযোগের সাথে নামাজ আদায় করা গুরুত্বপূর্ণ।
    Total Reply(0) Reply
  • মাওঃসাইফুল ইসলাম পারভেজ ১১ অক্টোবর, ২০২২, ৮:০৬ এএম says : 0
    মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তবে সব মানুষ সমান নয়, তিনি মানুষকে পরীক্ষা করেন। কেননা মানুষকে অবশ্যই চিন্তা ও বিবেচনা করতে হবে, কে তাদেরকে সুখ-শান্তি ও মান-সম্মান দিয়ে পৃথিবীর বড় আসনে বসিয়েছেন এবং অন্যদেরকে দরিদ্রতা ও দুঃখের মধ্য দিয়ে জীবন যাপনে অভ্যস্ত করেছেন। যিনি এসব সৃষ্টি করেছেন, তিনি আমাদের প্রতি কি ধরনের বিধি-বিধান জারি করেছেন তা ভেবে দেখতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • কাজল হায়দার ১১ অক্টোবর, ২০২২, ৮:০৭ এএম says : 0
    আল্লাহর সাথে যেহেতু সাক্ষাৎ হবে এবং পার্থিব জীবনের কর্মের হিসাব দিতে হবে, সেহেতু প্রত্যেক বিশ্বাসী-মুমিন বান্দাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে সৎকাজ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে সেই তাওফীক দান করুন- আমীন!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন