Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আমেরিকা ইতিহাসের ব্যর্থতম রাষ্ট্র

ফাইনান্সিয়াল টাইম্স | প্রকাশের সময় : ১১ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রাচীন রোম সাম্রাজ্যের মতো সাবেক সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেনও এক সময় উত্থানের পর পতনের স্বাদ গ্রহণ করেছে। সাম্রাজ্যবাদের এ মাপকাঠিতে আমেরিকাও তার শিখরের কাছাকাছি অবস্থান করছে। ইউরাপের ইউরো বা চীনের ইউয়ান মুদ্রার রাজা মার্কিন ডলারের জন্য এখনও কোনো হুমকি হয়ে উঠতে পারেনি। এর সাথে পাল্লা দিতে বিটকয়েনরও বহু সময় লেগে যাবে। তবুও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলছে যে, ১৮৫০-এর দশকে মার্কিন গৃহযুদ্ধের প্রাক্কালের যে কোনো সময়ের থেকে আমেরিকার ক্ষমতার উৎসে এখন অনেক বেশি বিভক্তি দেখা দিয়েছে, যা এটিকে ইতিহাসের ব্যর্থতম রাষ্ট্রে পরিণত করছে।

আমেরিকাকে সবার পরে যে দেশটির তুলনা করা হতে পারে, তা হ’ল বেলজিয়াম, যাকে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র’ বলা হয়ে থাকে। কিন্তু দিন গড়ানোর সাথে সাথে মার্কিন রাজনীতি বেলজিয়ামের মতোই হয়ে উঠছে। আমেরিকার বিপরীতে, বেলজিয়াম ফরাসি এবং ফ্লেমিশ-ভাষী জোটে বিভক্ত। এদের পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারণে বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত স্থানীয়ভাবে নেওয়া হয়। মাস, এমনকি বছর ব্যাপি বেলজিয়ামে জীবন চলে সরকার ছাড়াই। তবে, নীল বনাম লাল জোটে আমেরিকার বিভাজনটি বেলজিয়ামের ভাষাগত দ্বন্দের মতোই শক্তিশালী। এটি এক সময় বর্তমান শীর্ষ শক্তিটির পতনের কারণ হয়ে উঠবে। দ্বিখণ্ডিত আমেরিকার ঘরোয়া ক্ষমতার বিভাজন দেশটির শক্তিকে দুর্বলতায় পরিণত করেছে। এর একটি শাখা মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট এখন দেশটির দ্বিতীয় আইনসভায় পরিণত হয়েছে। এটি এমনসব আইন তৈরি করছে, যেগুলোর মাধ্যমে অন্যত্র এর নির্বাচিত পরিষদগুলিকে সংরক্ষণ করা হবে। ফলে, মার্কিন আদালত আগামী কয়েক দশক ধরে লাল আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মেয়াদ আজীবন এবং তারা তাদের আইন প্রণয়ণকে ন্যায্যতা দেয়ার জন্য এর মৃত প্রতিষ্ঠাতাদের উছিলা দেন। এর সংখ্যাগরিষ্ঠ রক্ষণশীলরা সম্ভবত ১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর উদারপস্থী সুপ্রিম কোর্টের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছেন, যেটি ‘বেঞ্চ থেকে আইন প্রণয়নের’ পথপ্রদর্শক।

আমেরিকার আইন এখন আর রাজনীতির ঊর্ধ্বে নয়। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মত মার্কিন আদালতের জনপ্রিয়তাও এখন জনমত জরিপগুলোর সর্বনিম্নে অবস্থান করছে। নভেম্বরের মধ্যবর্তী মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ হারালে বিশ্ব আগামী দুই বছরের জন্য আমেরিকার দুর্বলতার আরেকটি প্রদর্শনী দেখতে পাবে। তবে, এটি লাল আমেরিকার ক্ষমতার নয়, পক্ষাঘাতগ্রস্ততার নিদর্শন হবে। জাতীয় এবং প্রকৃতপক্ষে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি একটি পরাশক্তির নিজেকে এই বলে বোকা বানানো উচিত নয় যে, আলবানি বা অস্টিন, লিটল রক বা স্প্রিংফিল্ড বিরোধীদের মোকাবেলা করার উপযুক্ত জায়গা। দূষণমুক্ত জ¦ালানী ও গাঁজা সম্পর্কিত বিল সহ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত জো বাইডেনের বেশিরভাগ বিশাল সাফল্য তার পরবর্তী রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের মাধ্যমে উল্টে যাবে, তার নাম ডোনাল্ড ট্রাম্প হোক বা অন্য যাই হোক না কেন।

লাল ও নীল দুই আমেরিকার মধ্যে বৈরিতা মার্কিন সংবিধানের জন্যও একটি জটিলতা তৈরি করেছে। ফলে, আমেরিকাকে তার সংবিধান সংশোধন করার চেয়ে একটি ফরাসি-ভাষী দেশে রূপান্তর করা বেশি সহজ। ব্রিটেনের কনজারভেটিভ এবং লেবার ভোটারদের তুলনায় আমেরিকার শিবিরগুলির পরস্পর দোষারোপের আচরণ অনেক বেশি বেলজিয়ামের ভাষা গোষ্ঠীর মতো। তারপরেও, একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট যত খারাপ কাজই করুক না কেন, তার ভোটের ভাগটি খুব বেশি কমে না। ২০২০ সালে নির্বাচণে ট্রাম্প ৪৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু ব্রিটেনে মাত্র গত কয়েক সপ্তাহেই দেশটির ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভদের উপর লেবারদের নেতৃত্ব ৩০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। আজকের যুক্তরাষ্ট্রে এমন পরিস্থিতি অকল্পনীয়।

যদিও আগামী বছরগুলিতে চীনের অর্থনীতি আমেরিকাকে ছাড়িয়ে যাবে, কিন্তু চীনও একসময় অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জে ঘেরা একটি বার্ধক্যে জর্জরিত দেশে পরিণত হবে। সেই তুলনায় আমেরিকার অবস্থা ভাল। তবে, তা ক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে নয়। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মাধ্যমে পুতিন পশ্চিমাদের নিজের এবং নেতা হিসেবে আমেরিকার ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। যদিও আমেরিকার শক্তি এখনও শীর্ষারোহী, কিন্তু ঝুঁকি হল যে, দ্বিখণ্ডিত আমেরিকা তার সাম্রাজ্যবাদের লড়াইয়ে মুখ থুবড়ে পড়বে, যা এটিকে ভুল পথে পরিচালিত করবে। কারণ এটি বিদেশী আধিপত্যের প্রতি ক্রমবর্ধমানভাবে সংবেদনশীল। আমেরিকা এখনও বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, কিন্তু তার শক্তির মূল ধমনীটি আশঙ্কাজনকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন।



 

Show all comments
  • Imamul Hossain ৯ অক্টোবর, ২০২২, ৬:২৪ এএম says : 0
    সুপার পাওয়ার হওয়ার জন্য যা যা দরকার তার কোনোটাই নাই রাশিয়া অথবা চীনের।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ashraful Alam ৯ অক্টোবর, ২০২২, ১০:৩৩ পিএম says : 0
    সব জায়গায় বাইবেলের বিজ্ঞাপন। প্রথম আলোতেও ইনকিলাবেও
    Total Reply(0) Reply
  • Harunur Rashid ৯ অক্টোবর, ২০২২, ১:৪৪ এএম says : 0
    All theses anti American are nuts, they have to wait thousand years more for their prophecy come to past. No one knows what will happen tomorrow, they are busy predicting what is going to happen in thousand year. Good luck.
    Total Reply(0) Reply
  • Habib Ullah ৯ অক্টোবর, ২০২২, ৬:২৬ এএম says : 0
    রাশিয়া পারবে না কারন তার অর্থনীতি দুর্বল৷৷
    Total Reply(0) Reply
  • Arifur Rahman ৯ অক্টোবর, ২০২২, ৬:২৬ এএম says : 0
    · একটা ভারসাম্যময় বিশ্ব জরুরী হয়ে পড়েছিলো। স্নায়ু-যুদ্ধত্তোর বিশ্বে একেশ্বর হয়ে ওঠা ইঙ্গ-মার্কিন ব্যাবসা-যুদ্ধ জোটের নজর না ছিলো মানবিক উন্নয়নে, না ছিলো প্রকৃতি সংরক্ষণে। একচ্ছত্র ক্ষমতা কোনদিনও বিশ্বের জন্য কল্যাণকর ছিলো না। আশা করছি রাশা যেভাবে বিশ্ব-বুলী (bully) এর বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে, দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছে, সেভাবে সমমনা রাষ্ট্র, যেমন চীন, জাপান ইত্যাদি প্রাগ্রসর রাষ্ট্র জনকল্যাণে জোটবদ্ধ হবে, এবং মার্কিন যুদ্ধ-অপরাধগুলি জনসমক্ষে আনবে।
    Total Reply(0) Reply
  • S M Ali Asgar ৯ অক্টোবর, ২০২২, ৬:২৭ এএম says : 0
    আমেরিকা যে দেশের বন্ধু তার কোন শত্রুর প্রয়োজন নেই এই বিষয়টা পরিষ্কার।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ