Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তক্ষক-পিলার-ম্যাগনেটিক কয়েনে সর্বস্বান্ত

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাজারো মানুষ

খুলনা ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৭ অক্টোবর, ২০২২, ১২:১৪ এএম

রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন অনেকেই। মাত্র কয়েক লাখ টাকা খরচ করলেই যদি সে স্বপ্ন পূরণ হয়, তাহলে যে কেউ চোখ বন্ধ করে তার সর্বস্ব বিক্রি করে দিতে পারেন। তক্ষক, ম্যাগনেট পিলার ও ব্রিটিশ আমলের ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কয়েন বিক্রি করে কোটিপতি হওয়ার আশায় এমনটি করে পথে বসেছেন সমগ্র দক্ষিণ -পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার বিভিন্ন পেশার মানুষ।

অন্যদিকে, এভাবে প্রতারণা করে কয়েকটি সিন্ডিকেট হাজার কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছে। এখনও তারা সক্রিয় রয়েছে। কৌশলগত নানা কারণে এ প্রতারণার জন্য সিন্ডিকেটগুলো দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলকে বেছে নিয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, তক্ষক একটি অতি নিরীহ প্রাণী। সরীসৃপ জাতীয় এ প্রাণীটিকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন প্রতারিত হয়েছেন শত শত মানুষ। তক্ষক এর রক্ত থেকে বিদেশে বহু মূল্যবান ওষুধ তৈরি হয়, এমনটি প্রচার করে চলেছে প্রতারণা। একটি তক্ষক আকারে ১৮ ইঞ্চি বা তার চেয়ে বেশি বড় হলে এবং ওজন ৩০০ গ্রামের বেশি হলে তার দাম কয়েক শ’ কোটি টাকা। তক্ষকের পা হাঁসের পায়ের মত হলে তার দাম ৮শ’ থেকে এক হাজার কোটি টাকা। গত ১০ বছরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে কমপক্ষে ৫০ টি তক্ষক পাচারের সময় ধরা পড়ে। খুলনায় সবচেয়ে বেশি তক্ষক ধরা পড়েছিল এমন একটি থানা পাইকগাছা।

পাইকগাছা থানার সাবেক ওসি এজাজ শফি জানান, প্রতারক চক্র প্রথমে টার্গেট করে বড় বড় ব্যবসায়ী বা সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের। প্রতারকরা সখ্যতা গড়ে তোলে এক পর্যায়ে তক্ষক কেনা বেচায় তাদের প্রলুব্ধ করে। প্রথমেই তাদের এক বা একাধিক তক্ষক দেখানো হয়। এরপর অংশীদার হিসেবে একটি ভুয়া এগ্রিমেন্টে সই নেয়া হয়। এরপর তথাকথিত কেমিষ্ট সিংগাপুর, থাইল্যান্ড বা রাশিয়ার মত দেশ থেকে বাংলাদেশে এসে তক্ষক পরীক্ষা করবেন বলে কয়েক লাখ টাকা নেয়া হয়। কিছুদিন পর আর প্রতারক চক্রকে খুঁজে পাওয়া যায় না।
তক্ষকের পাশাপাশি বৃটিশ আমলের সীমানা পিলারের নামেও হাতিয়ে নেয়া হয় শত শত কোটি টাকা। পিলারের মধ্যে মূল্যবান ধাতব ও ক্যামিকেল রয়েছে যা পারমানবিক অস্ত্র ও রাডার তৈরিতে ব্যবহার হয়-এমন কথা বলে প্রতারকরা ঠিক একইভাবে টাকা হাতিয়ে নেয়।

সবচেয়ে বেশি প্রতারণা করা হয় ইষ্ট ইন্ডিয়া আমলের কয়েনের নামে। প্রতারকচক্র ও তাদের সহযোগিরা প্রচার করে ১৬১৬, ১৭১৭ ও ১৮১৮ সালের কয়েনের বিশেষ গুন রয়েছে, যার দাম হাজার কোটি টাকা। তৎকালীন বৃটিশ রাণীর মাথা, করোলা লতার ছবি যুক্ত কয়েন বিক্রি করতে পারলে কমপক্ষে ৫শ’ কোটি টাকা পাওয়া যায়। ধাতব মুদ্রা হলেও এ কয়েনগুলো পানিতে ভাসে এবং চৌম্বকত্ব রয়েছে এটি প্রমাণের জন্য সুনিপুনভাবে কয়েনের মাঝখানে বায়ুশুন্যতা সৃষ্টির পর চুম্বক স্টিক দেয়া হয়। বাগেরহাটের মোংলা এলাকায় এমন বেশ কিছু ঘটনা ইতিপূর্বে ধরা পড়েছে। মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, খুবই দক্ষতার সাথে এ ধরণের কয়েন তৈরি করা হয়। সাধারণ মানুষ সরল বিশ্বাসে তাদের ফাঁদে পা দেন ও সর্বস্বান্ত হন।

প্রতারিত হয়েছেন এমন কয়েকজনের সাথে কথা বলা হলে তারা জানান, এসকল বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে গিয়ে কোনো লাভ হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে খুলনা নগরীর টুটপাড়া এলাকার একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, তক্ষক বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা পাওয়া যাবে -এমন প্রলোভনে পড়ে তিনি চাকুরি জীবনের শেষে পাওয়া সব টাকা খুঁইয়েছেন। এখন কোনো রকমে পরিবার পরিজন নিয়ে একটি দুই কক্ষের ভাড়া বাসায় থাকেন। মামলা করেছিলেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাননি।

নগরীর খালিশপুর এলাকায় পৈত্রিক ভিটেবাড়ি বিক্রি করে কয়েন ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন প্রায় ৫০ লাখ টাকা। প্রতারিত ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম এ টাকা আর ফেরত পাননি, প্রতারক চক্রের সাথে আর কোনদিন তার দেখাও হয়নি।

সাতক্ষীরার দেবহাটার প্রতারিত কলেজ শিক্ষক আসাদুজ্জামান জানান, ২ বছর আগে শ্বশুর বাড়ি থেকে নগদ ৫ লাখ টাকা নিয়ে তা তুলে দিয়েছিলেন সীমানা পিলার ব্যবসায়ীদের হাতে। প্রতারিত হওয়ার পর থানায় অভিযোগ করেছিলেন। টাকা ফেরত পাননি, প্রতারক চক্রও ধরা পড়েনি।

গত বছর ৬ অক্টোবর তক্ষকসহ খুলনার দাকোপ উপজেলায় কোস্টগার্ডের হাতে আটক প্রতারক মনোজ বৈষ্য পুলিশকে জানিয়েছিলেন, সিন্ডিকেট যারা নিয়ন্ত্রণ করেন, তারা অতি ক্ষমতাশালী। সারাদেশে তাদের নেটওয়ার্ক। বড় বড় রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাও রয়েছেন এ চক্রে। তাই ধরা পড়ে চুনোপুঁটিরা। মূলহোতারা ধরা ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে যায়।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তক্ষক

২৬ এপ্রিল, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ