গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
বিদেশী বিনিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠান রাকিন ডেভেলপমেন্টে সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট এবং প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুইজারল্যান্ডের নাগরিক ফাদি বিতার ও উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমাইয়া তাসনীনকে চার ঘন্টা জিম্মি করে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত এবং জোরপূর্বক অফিস বেদখল করে নিয়েছে দুর্নীতির দায়ে বহিস্কৃত সাবেক এমডির নেতৃত্বে একটি সন্ত্রাসী চক্র। আজ বুধবার, ৫ অক্টোবর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমনই অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তারা।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুইজারল্যান্ডের নাগরিক ফাদি বিতার সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগে (এফডিআই) বাংলাদেশের আবাসন খাতে ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করে রাকিন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (বিডি) লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটিতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ করা হয়েছে, যেখানে প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। কোম্পানিটি ইতিমধ্যেই রাজধানীর মিরপুরে ‘রাকিন বিজয় সিটি’ নামে একটি মেগা আবাসন প্রকল্প সম্পন্ন করেছে, যেখানে দুই হাজার ফ্ল্যাট, কমার্শিয়াল ভবন, কমিউনিটি ক্লাব, হাসপাতাল, স্কুল ও মসজিদ রয়েছে। এছাড়াও কাঁচপুরে ‘রাকিন ট্রাঙ্কুল টাউন’ নামে আরও একটি মেগা আবাসন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে, যেখানে ৫ হাজার ২শ ফ্ল্যাট থাকবে।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কোম্পানি ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন এস এ কে একরামুজ্জামান নামে একজন বাংলাদেশী পরিচালক। কোম্পানি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দেয়ার পর পরবর্তী বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) সেটার অনুমোদন নিতে হয়, কিন্ত ২০০৮ থেকে ২০২২ সালে তাকে অব্যাহতির পূর্ব পর্যন্ত এ ধরনের কোন অনুমোদন নেওয়া হয়নি, তাই আইনের ধারা অনুযায়ী তার এই পদ অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়েছে। ফলে দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছরধরে অবৈধভাবে তিনি এই পদে বহাল ছিলেন।
ফাদি বিতার বলেন, কোম্পানির পরিচালনা পরিষদের অনুমতি ছাড়াই এস এ কে একরামুজ্জামান কোম্পানির সম্পত্তি বন্ধক রেখে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। তাছাড়াও তিনি কোম্পানির নামে কয়েকটি অনুমোদনহীন ব্যাংক হিসাব খুলে সেগুলোতে সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। এছাড়াও কোম্পানির পরিচালনা পরিষদের অনুমতি ছাড়া কোনধরনের নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ‘স্টার পোরসেলিন’ নামে একটি কোম্পানির নামে ৭৩ কোটি ৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন একরামুজ্জামান, যিনি একই কোম্পানির ব্যাবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। এই টাকা ৭ দিনের মধ্যে পরিশোধের জন্য চলতি বছরের ৩ আগস্ট তারিখে তাকে একটি আইনী নোটিশ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি এই নোটিশের কোন জবাব দেননি। একরামুজ্জামানের ১৪ বছরধরে এমডি’র দায়িত্ব পালনকালে এই সময়ে কোম্পানির কোন লাভ দেখানো হয়নি, বরং প্রায় ৪৫ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে।
বার্ষিক সাধারণ সভার অনুমোদন না থাকা, কোম্পানির কার্যক্রমে সন্দেহজনক অর্থ লেনদেন, কোম্পানিতে নানারকম অনিয়ম-দুর্নীতি এবং তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলার কারণে বিগত ২৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত কোম্পানির ৮১তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্তক্রমে একরামুজ্জামানকে সরিয়ে তাকে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে ফিদার জানান।
ফিদার জানান, এমডির দায়িত্ব নিয়ে দেখতে পাই পূর্ববর্তী ব্যবস্থাপনা পরিচালক একরামুজ্জামান কোম্পানীর প্রচুর পরিমান অর্থ নিয়ম বহির্ভূতভাবে খরচ করেছেন। কোম্পানীকে সুশৃঙ্খল ও জবাবদিহিতায় আনতে এবং এখানে গ্রাহকদের অর্থ বিনিয়োগকে নিরাপদ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করি। এতে একরামুজ্জামান নাখোশ ও ক্ষিপ্ত হন। তার অনিয়মগুলো প্রকাশ্যে আসার পর আমাকে সঠিকভাবে দায়িত্বপালনে বিভিন্ন উপায়ে বাধা প্রদান শুরু হয়।
এই পরিস্থিতিতে, গত ২৪ সেপ্টেম্বর, শনিবার, সকাল ১১ টায় প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এস এ কে একরামুজ্জামানের নেতৃত্বে রাশেদুল আলম, আরিফুর রহমান তপন, আবদুল্লাহ কায়সার ও সোহাগ-সহ অজ্ঞাতনামা আরো ২০/৩০ জনের বহিরাগত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রাকিন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (বিডি) লিমিটেড-এর রাজধানীর মিরপুরস্থ কার্যালয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে এর বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্ইুজারল্যান্ডের নাগরিক ফাদি বিতার এবং উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমাইয়া তাসনীনকে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করে, তাদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৪ ঘন্টা ধরে আটকে রেখে মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট ও তছনছ করে এবং জোরপূর্বক অফিস বেদখল করে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, রাশেদুল আলম ও আরিফুর রহমান তপন, ফাদি বিতার ও সুমাইয়া তাসনীনকে ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং শারীরিকভাবে আঘাত করে পদত্যাগ সংক্রান্ত একটি বে-আইনী চিঠিতে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। তারা ফাদি বিতার ও সুমাইয়া তাসনীনের কক্ষে প্রবেশ করার পূর্বে অফিসের সকল সিসি টিভি ক্যামেরা বন্ধ করে দেয়। তারা বলেন, “দেশে যদি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কোন নিরাপত্তা না থাকে তাহলে বিদেশী বিনিয়োগ আরও হুমকির মুখে পড়বে। আমরা সরকারের মন্ত্রী পর্যায় থেকে যথেষ্ট সহযোগিতা পাওয়া সত্ত্বেও ঠিকভাবে কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছিনা। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ থাকার পরও সহায়তা করতে গড়িমশি করছে স্থানীয় প্রশাসন।
উল্লেখ্য, অবৈধভাবে ১৮৪ কোটি টাকা দুবাইয়ে পাচারের অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৩ মে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে একরামুজ্জামান ও তার ভাই কোম্পানির পরিচালক সৈয়দ এ কে আনোয়ারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামীরা ২০১০ সালে দুবাইয়ে আল মদিনা ইন্টারন্যাশনাল এবং থ্রি স্টার নামে দুটি অফশোর কোম্পানি খোলেন। পরে বাংলাদেশে ‘দুর্নীতির মাধ্যমে’ অর্জিত ১৮৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা দুবাইয়ে পাচার করেন। দুবাইয়ে ওই অর্থ উর্পাজনের কোনো উৎস তারা দেখাতে পারেননি। ওই অর্থ কীভাবে উপার্জন করা হয়েছে তার কোনো তথ্য-প্রমাণ তাদের কাছে নেই। দুবাইয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করার কথা তারা বাংলাদেশ ব্যাংককে কখনও জানাননি বা কোনো ধরনের অনুমতি নেননি। এই ঘটনার সাথে দেশের ভাবমূর্তি, বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশিদের নিরাপত্তার মতো বিষয় জড়িত বিধায়, এ বিষয়ে দ্রুততার ভিত্তিতে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, যথাযথ বিচার, আইনী সুরক্ষাও জীবনের নিরাপত্তা দাবি করেন। পাশাপাশি তাদের বেদখলকৃত অফিস পূনরুদ্ধারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেন।
রাকিন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (বিডি) লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমাইয়া তাসনীন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রাকিন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (বিডি) লিমিটেড-এর প্রধান কার্যালয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্ইুজারল্যান্ডের নাগরিক ফাদি বিতার এবং আমাকে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করে, আমাদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ৪ ঘন্টা ধরে আটকে রেখে মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট ও তছনছ করে এবং জোরপূর্বক অফিস বেদখল করে। তিনি বলেন, এই ঘটনার সাথে নারীদের নিরাপত্তা, দেশের ভাবমূর্তি, বিদেশি বিনিয়োগ ও বিদেশিদের নিরাপত্তার মতো স্পর্শকাতর বিষয় জড়িত বিধায়, এ বিষয়ে দ্রুত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।