বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
কোরআন ও সুন্নাহ অধ্যয়নের একটি স্বাভাবিক পন্থা আছে। সেই পন্থা এই নয় যে, একজন মানুষ হঠাৎ করে কোরআন মাজীদের কিছু তরজমা সংগ্রহ করল, হাদীসের কিছু কিতাবের তরজমা সংগ্রহ করল এবং পড়া শুরু করে দিলো। যা বুঝে আসল একেই কোরআন-সুন্নাহর শিক্ষা মনে করল। জগতের কোনো বিষয়ের অধ্যয়নেরই এটা স্বাভাবিক পন্থা নয়। যে কোনো বিষয়েরই অধ্যয়নের স্বাভাবিক পন্থা হলো, যারা ওই বিষয়ের বিজ্ঞ-পারদর্শী তাদের কাছ থেকে বিষয়টি সম্পর্কে মৌলিক ধারণা অর্জন করা। ওই শাস্ত্রের সাথে চিন্তা ও রুচির আত্মীয়তা সৃষ্টি করা।
এরপর বিজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শ অনুসারে অধ্যয়ন করা এবং ধাপে ধাপে অগ্রসর হওয়া। এ কারণে কোরআন-সুন্নাহর ধারক-বাহকদের নিকট থেকেই কোরআন-সুন্নাহর শিক্ষাগুলো আগে গ্রহণ করতে হবে। কোরআনের মৌলিক শিক্ষা কী, রুচি ও চেতনা কী, দৃষ্টিভঙ্গি কী- এই বিষয়গুলো সহজ-সরলভাবে তাঁদের নিকট থেকে গ্রহণ করতে হবে। যখন হৃদয় প্রস্তত হবে, দৃষ্টি ও দৃষ্টিভঙ্গি গঠিত হবে তখন সরাসরি কোরআন ও সুন্নাহ অধ্যয়ন করতে পারবেন এবং আল্লাহ চাহে তো সঠিক অর্থ ও মর্ম উপলব্ধি করবেন। তখন ঈমানের স্বাদ অনুভব করবেন।
জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে উঠবেন। এই বোধ ও উপলব্ধি যেমন আপনার অন্তরকে শীতল করে দিবে তেমনি আপনার চোখ থেকে অশ্রু ঝরাবে; এ অশ্রু আনন্দের। এ অশ্রু প্রাপ্তির। কিন্তু এখন তো অবস্থা হচ্ছে আমাদের মস্তিষ্কে পশ্চিমা চিন্তা-ধারা, আমাদের দৃষ্টিতে পশ্চিমের চশমা, আমাদের হৃদয়ে শিকড় গেড়ে বসে আছে ভোগবাদ ও বস্তুবাদ। আমাদের স্বভাব-চরিত্রে অহং ও ঔদ্ধত্য।
এইসব আগাছায় আকীর্ণ চিন্তা ও হৃদয়, স্বভাব ও চরিত্র নিয়ে যখন কেউ কোরআন-সুন্নাহর তরজমা পড়ছি, কোরআনের বাণী ও বিধান পাঠ করছি, আল্লাহর রাসূল (সা.) এর সীরাত ও সুন্নাহ পাঠ করছি তখন এর সঠিক অর্থ ও মর্ম উপলব্ধি করতে সক্ষম হচ্ছি না। আমরা শব্দ পড়ছি কোরআনের, কিন্তু অর্থ গ্রহণ করছি ঐটা, যেটা আমার চিন্তা ও দর্শনের অনুকূল। বস্তুবাদ ও ভোগবাদের অনুকূল। পশ্চিমা দর্শনের আলোকে আমরা কোরআন-সুন্নাহর ব্যখ্যা পেতে চাইছি। কোরআন-সুন্নাহর দ্বারা ওই সকল দর্শনের অসারতা উপলব্ধি করতে পারছি না। কাজেই প্রথম প্রয়োজন, চিন্তা ও হৃদয়কে আগাছামুক্ত করা। তাহলেই মুক্তমনে উন্মুক্ত হৃদয়ে কোরআন-সুন্নাহর বাণী শ্রবণ করা সম্ভব হবে।
এটা হবে ওই শ্রবণ, যা চিন্তাকে আলোকিত করে এবং হৃদয়কে আন্দোলিত করে। ওই শ্রবণ, যা ফিক্হ ও প্রজ্ঞা দান করে এবং জীবনে বিপ্লব সাধন করে। তো কোরআন-সুন্নাহ থেকে আলো গ্রহণের স্বাভাবিক পন্থা হলো, কোরআন-সুন্নাহর ধারক-বাহকদের সাহচর্য অবলম্বন করা। তাদের সাহচর্যের দ্বারা নিজের চিন্তা ও মস্তিষ্ককে প্রস্তুত করা। চিন্তা ও মস্তিষ্ক থেকে বাইরের উপাদানগুলো বের করা।
এরপর যখন কোরআন পড়ব, সুন্নাহ পড়ব তখন কোরআন-সুন্নাহর সঠিক অর্থ ও মর্ম উপলব্ধি করতে সক্ষম হব। তখন আল্লাহ চাহে তো আমাদের ক্ষেত্রেও সত্য হবে। হ্যাঁ, তাদের হয়েছিল তাদের শান অনুসারে, আমাদের হবে আমাদের অবস্থা অনুসারে। কিন্তু হবে যে- এতে কোনো সন্দেহ নেই। যাই হোক, এটি একটি প্রাসঙ্গিক কথা ছিল, যে কথাটি বলতে চাচ্ছি তা হলো, আল্লাহ তাআলা কিতাব পাঠিয়েছেন। শুধু কিতাব পাঠাননি কিতাবের সাথে সেই কিতাবের আমলী নমুনাও পাঠিয়েছেন। সেই আমলী নমুনা হচ্ছেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।