পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইসলাম আগমনের পূর্ব পর্যন্ত আরবে যেসব যুদ্ধ-বিগ্রহ ছিল, তম্মধ্যে ফুজ্জারের যুদ্ধই ছিল সর্বাপেক্ষা ভয়াবহ। যুদ্ধটি ঘটেছিল, কুরাইশ ও কায়েস গোত্রের মাঝে। কুরাইশদের সব গোত্রই এ যুদ্ধে শরীক হয়ে ছিল। প্রত্যেক গোত্রেই পৃথক পৃথক সেনাবাহিনী ছিল। বনু হাশেম গোত্রের পতাকাবাহী ছিলেন জোবায়ের বিন আবদুল মুত্তালিন। রাসূলে পাক (সা.)-ও এদের সাথে শরীক ছিলেন। যুদ্ধে প্রথম দিকে কায়েস গোত্র ও শেষ পর্যায়ে কুরাইশগণ জয় লাভ করেন। পরিশেষে, উভয়পক্ষে সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ যুদ্ধে কুরাইশ পক্ষে সেনাপতি ছিলেন আবু সুফিয়ানের পিতা ও মুআবিয়ার দাদা হরব বিন উমাইয়া। যেহেতু এ যুদ্ধে কুরাইশ দল ছিল ন্যায়পক্ষ, তদুপরি যুদ্ধে জয় ছিল বংশের মর্যাদার পরিচায়ক; সুতরাং এতে রাসূলে করীম (সা.)-ও যোগদান করেছেন। তবে ইবনে হেশামের বর্ণনায় জানা যায় যে, তিনি কারো ওপর হাত তোলেননি। ইমাম সুহাইলী লিখেছেন যে, তিনি প্রত্যক্ষভাবে যুদ্ধ করেননি। অর্থাৎ নিজ হাতে অস্ত্র চালনা করেননি। যদিও তখন তার বয়স যুদ্ধ করার উপযোগী ছিল। এর কারণ যুদ্ধটি শুরু হয়েছিল নিষিদ্ধ মাসে। তাছাড়া দুটো পক্ষই ছিল কাফির। মুসলামানকে যুদ্ধ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে শুধু আল্লাহর নাম বুলন্দ করার লক্ষ্যে। যুদ্ধটিকে হরবে ফুজ্জার বলার কারণ, এটা সেসব মাসে সংঘটিত হয়েছিল, যখন যুদ্ধ করা নিষিদ্ধ ছিল।
পরপর যুদ্ধের ফলে আরবের বহু পরিবারই ধ্বংসের উপক্রম হয়েছিল। এ চরম অবস্থা লক্ষ্য করে শান্তিপ্রিয় লোকদের মাঝে এ থেকে উদ্ধার লাভের আকাক্সক্ষা সৃষ্টি হলো; সুতরাং হরবে ফুজ্জার হতে প্রত্যাবর্তনের পর বংশীয় নেতা রাসূলে করীম (সা.)-এর চাচা জোবায়ের বিন আবদুল মুত্তালিব পরিকল্পনা করলেন যে, বনু হাশেম, বনু যোহরা এবং বনু তাইম গোত্রীয় আবদুল্লাহ বিন জাদআনের ঘরে একত্রিত হবে। অতঃপর সমবেত লোকগণ এই অঙ্গীকার করলেন যে, তারা দুস্থ মানবতার সেবা করে যাবে এবং কোনো অত্যাচারী জালিম মক্কায় থাকতে পারবে না। রাসূলে করীম (সা.)-এ চুক্তির সময় উপস্থিত ছিলেন। নবুয়ত আমলে তিনি প্রায়শ: বলতেন, এই অঙ্গীকারের বিনিময়ে কেউ আমাকে লাল রঙের উষ্ট্রও দিতে চাইত, তবু আমি অঙ্গীকার ভঙ্গ করতাম না। এখনো যদি কেউ আমাকে এ ধরনের অঙ্গীকার পালনে আহ্বান করে আমি তা আনন্দে গ্রহণ করব। এই অঙ্গীকার নামাকে হালফুল ফুজুল বলার কারণ হলো, এর সংঘটকদের অনেকের নামই ফজিলত শব্দের সাথে জড়িত ছিল। যেমন, ফুজায়েল বিন হারেছ, ফুজায়েল তায়াআ, মুফাজ্জল-এরা ছিল জুরহাম এবং কাত্তুরা গোত্রের লোক। পরে এই অঙ্গীকার বেকার এবং স্মৃতির বাইরে চলে গেলে কুরাইশ নেতাগণ তা পুনরায় সঞ্জীবিত করেন। তবে প্রথম পরিকল্পনাকারীর সতোদ্দেশ্যের কারণে তাদের নাম এখনো জাগরুক আছে। মসনদে বিন উসামায় একটি হাদীস বর্ণিত আছে। তার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, উক্ত নামকরণ এজন্য হয়েছিল যে, প্রতিজ্ঞাপত্রে লিখাছিল, ‘তাওয়াদ্দুল ফুজুলা আলা আহলেহা’।
কাবাগৃহের প্রাচীর একটি মানুষের উচ্চতার পরিমাণ উঁচু ছিল এবং আমাদের দেশের ঈদগাহের ন্যায় তার ওপর কোনো ছাদ ছিল না। গৃহটি নিম্নভূমিতে নির্মিত হওয়ায় বৃষ্টির মৌসুমে শহরের পানি কাবাগৃহে ও তা অঙ্গনে জমা হয়ে যেত। ফলে কাবাগৃহের দেওয়ালের যথেষ্ট ক্ষতি হতো। পরিশেষে, গৃহটি ভেঙে একটি মজবুত গৃহ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। ঘটনাক্রমে তখন জিদ্দা বন্দরে একটি জাহাজ তীরের ধাক্কা লেগে বিধ্বংস্ত হয়েছিল। কুরাইশগণ সংবাদ পেয়ে অলীদ ইবনে মুগীরাহর মাধ্যমে ওই জাহাজের যাবতীয় কাঠ ক্রয় করে আনেন। জাহাজটির বাকুম নামক মিস্ত্রিকে গৃহ নির্মাণের সহায়তা করার জন্য সাথে নিয়ে এল। কুরাইশদের প্রত্যেক শাখা গোত্র খানায়ে কা’বার এক একটি অংশ নির্মাণের দায়িত্ব নিল, যাতে কেউই কাজ থেকে বঞ্চিত না থাকে; কিন্তু গৃহনির্মাণের শেষ হাজরে আসওয়াদ সংস্থাপন নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হলো। প্রত্যেক গোত্রের প্রত্যেক নেতাই স্বহস্তে এ পাথর সংস্থাপনে ইচ্ছুক ছিল। এ ব্যাপারে বাদানুবাদে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটবার উপক্রম হলো। আরবে তখন রেওয়াজ ছিল, কেউ কোনো ব্যাপারে প্রাণোৎসর্গের অঙ্গীকার করলে একটি রক্ত ভর্তি পিয়ালায় আঙ্গুল ডুবিয়ে নিত। হাজারে আসওয়াদ স্থাপনের ব্যাপারেও কেউ কেউ এরূপ অঙ্গীকার করেছিল। চারদিন ধরে এ ঝগড়া চলল। পঞ্চমদিন সর্বাধিক বর্ষীয়ান ব্যক্তি উমাইয়া-বিন-মুগীরাহ ঘোষণা করলেন যে, আগামীকাল ভোরে সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি কা’বাগৃহে আগমন করবে, তাকেই আমাদের এই ব্যাপারে সালিস নিযুক্ত করা হবে। সবাই তা মেনে নিল। পরদিন সব গোত্রনেতা কা’বাগৃহে প্রবেশ করে দেখলেন যে, রাসূলে করীম (সা.) সবার আগে প্রবেশ করেছেন। তখন সবাই সানন্দে তাকে মধ্যস্থ নিযুক্ত করলেন। তিনি তখন ইচ্ছে করলে নিজেই কাজটি সম্পাদনের গৌরব অর্জন করতে পারতেন; কিন্তু তিনি তা পছন্দ না করে প্রত্যেক গোত্রের এক এক নেতাকে নির্বাচিত করে তাদের দ্বারা একটি চাদরের চার কোণ ধরালেন। অত:পর স্বহস্তে পাথরখানা চাদরের উপর রেখে তাদের বললেন, এবার এটিকে যথাস্থানে নিয়ে চলুন। তার সেটিকে প্রাচীরের কাছে নিয়ে গেলে, তিনি আবার নিজ হস্তে তা যথাস্থানে স্থাপন করলেন। এটি এ ইংগিত বহন করছে যে, দ্বীনে ইলাহীর পরিপূর্ণতা তার মাধ্যমেই সাধিত হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।