Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

রহস্য ঘেরা হ্রদে নামলেই পাথর!

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিশ্বে রহস্যে ঘেরা অনেক জলাশয় ও হ্রদ রয়েছে। তেমনই একটি হ্রদ, যেখানে পাখি নামলেই ‘পাথর’ হয়ে যায়! এমন কথা অবাস্তব মনে হলেও বাস্তবে আছে। ভয়ঙ্কর এই হ্রদটির নাম নেট্রন। হ্রদটি দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ার উত্তর প্রান্তে রয়েছে। এটি একটি লবণাক্ত হ্রদ এবং এর আশপাশে কোনও জনবসতি নেই।
লম্বায় ৫৭ কিলোমিটার এবং পাশে ২২ কিলোমিটার নেট্রন হ্রদে এওয়াসো নায়গ্রো নদীর পানি এসে পড়ে। আশপাশের বেশ কয়েকটি উষ্ণ প্রস্রবণের পানিও এই হ্রদে পড়ে। ফলে বিভিন্ন খনিজে সমৃদ্ধ এই হ্রদের পানি। আগে এই হ্রদ নিয়ে বহু কথা শোনা গেলেও কোনো দিনই প্রামাণ্য তথ্য কিছু মেলেনি। ২০১১ সালে নিক ব্রান্ডট নামে এক বন্যপ্রাণ চিত্রগ্রাহক নেট্রন হ্রদের সামনে গিয়ে চমকে গিয়েছিলেন।

হ্রদের পাড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছিল অসংখ্য পশুপাখির দেহ। ব্রান্ডট জানান, সেগুলো দেখে মনে হচ্ছিল যেন কোনও পাথরের মূর্তি সাজিয়ে রাখা! এর নেপথ্যের রহস্য জানতে শুরু হয় গবেষণা। কী ভাবে মৃত্যু হয়েছিল পাখিগুলোর? কেনই বা ‘পাথরে’ পরিণত হয়েছিল?

পরে জানা যায়, এই হ্রদের পানিতে সোডিয়াম কার্বোনেট এবং সোডার পরিমাণ অত্যধিক বেশি। প্রচুর সোডিয়াম ও কার্বোনেটযুক্ত ট্র্যাকাইট লাভা দিয়ে প্রায় ২৬ লাখ বছর আগে প্লিসটোসিন যুগে তৈরি হয়েছে নেট্রন হ্রদের তলদেশ। পরীক্ষায় জানা গেছে, হ্রদের পানি অস্বাভাবিক ক্ষারধর্মী (পিএইচ ১০.৫)। ত্বককে পুড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। যা পশুপাখির পক্ষে অসহনীয়।

বছরের বেশির ভাগ সময় হ্রদের পানির তাপমাত্রা থাকে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি। ফলে পানি দ্রুত বাষ্পীভূত হয়ে যায়। আর তলদেশে পড়ে থাকে পানির মতো তরল লাভা। সোডিয়াম ও কার্বোনেটের জন্য হ্রদে জন্ম নেয় সায়োনোব্যাকটিরিয়া নামে অণুজীব। এই অণুজীবের শরীরে লাল রঞ্জক থাকে। ফলে হ্রদের পানি লাল রঙের হয়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই রঙেই আকৃষ্ট হয়ে পশুপাখি হ্রদে নামে। কিন্তু পানির অতিরিক্ত ক্ষারধর্মীর জন্য সেগুলোর মৃত্যু হয়। নেট্রন হ্রদের পানি ক্ষারধর্মী হলেও এই হ্রদই পূর্ব আফ্রিকার লেসার ফ্লেমিঙ্গোদের সবচেয়ে বড় প্রজনন ক্ষেত্র। প্রায় ২৫ লাখ লেসার ফ্লেমিঙ্গো এই হ্রদে দেখতে পাওয়া যায়। কারণ এই হ্রদের অগভীর পানি পাওয়া যায় প্রচুর নীলাভ-সবুজ শৈবাল। এই শৈবাল খেয়েই তারা বেঁচে থাকে এবং বংশবৃদ্ধি করে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, হ্রদের এই ক্ষারধর্মীর সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে এই ফ্লেমিঙ্গোরা। ফলে নেট্রন হ্রদের পানিতে ফ্লেমিঙ্গোদের জমাট দেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। সূত্র : এনবিসি নিউজ, দ্য বার্ডলাইফ ডটকম।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ