Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

চূড়ান্ত বিজয়ের অধীর আগ্রহ

ফিরে দেখা বিজয়ের মাস

| প্রকাশের সময় : ৯ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হোসেন মাহমুদ : একাত্তরের ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে গোটা দেশের মানুষ চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। দেশের অধিকাংশ স্থানে উড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা। বাংলা, উর্দু ও ইংরেজি অনুবাদ সম্বলিত প্রচারপত্রও ফেলা হয়। এক ভাষণে হানাদার বাহিনীর অফিসারদের ভারতীয়  সেনাপ্রধান জেনারেল মানেকশ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, হয় অস্ত্র সংবরণ কর নতুবা মর। তাদের উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, সময় থাকতে আত্মসমর্পণ করলে পাক বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধবন্দীর প্রচলিত বিধান অনুযায়ী ব্যবহার করা হবে।
জেনারেল মানেকশ’র এ আহবান হানাদারদের মনোবল আরো ভেঙে দেয়। দিনাজপুরের কান্তানগর এলাকায় ৬ ডিসেম্বর থেকে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যৌথ বাহিনীর শুরু হওয়া ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ৯ ডিসেম্বর রাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকার পর যৌথ বাহিনী এখানে শক্তি ক্ষয় না করে কান্তানগরকে পাশ কাটিয়ে দিনাজপুর শহরের দিকে অভিযান শুরু করে। হিলিতেও পাক হানাদারদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর রক্ষক্ষয়ী যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। কুষ্টিয়া ও খুলনা ছাড়া পশ্চিম সেক্টরের পুরোটাই শত্রুমুক্ত হয়। যৌথ বাহিনী কুমারখালিতে মধুমতি নদী অতিক্রম করার লক্ষ্যে বড় ধরনের রিভার ক্রসিং অভিযানের প্রস্ততি শুরু করে। যৌথ বাহিনীর অপর একটি দল ঝিনাইদহ থেকে সকাল বেলা অভিযান শুরু করে বিকেল নাগাদ কুষ্টিয়া শহরে পৌঁছে যায়। এখানে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে প্রচ- রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরুর পরদিন থেকে হানাদাররা কুষ্টিয়া ছেড়ে পালাতে শুরু করে। এদিন জামালপুর শহরকেও মুক্ত করার লড়াই অব্যাহত থাকে। যৌথবাহিনী ময়মনসিংহের দিকে অগ্রসর হয়ে ফুলপুরে পৌঁছে যায়। মৌলভীবাজার জেলা লাকসাম, চাঁদপুর, পীরগঞ্জ, পলাশবাড়ী শত্রুমুক্ত হয়। স্থলপথে ঢাকার দিকে এগিয়ে যাওয়া যৌথবাহিনীর দলটি রাতে মেঘনা নদীর পূর্ব পাড়ে লালপুর দখল করে সেখান দিয়ে নদী অতিক্রম শুরু করে।
নেত্রকোনা জেলা সংবাদদাতা জানান, আজ ৯ ডিসেম্বর নেত্রকোনা পাক হানাদার মুক্ত দিবস। এ দিন নেত্রকোনা শহরকে পাক হানাদার মুক্ত করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা শহরকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধাদের চর্তুমুখী আক্রমণের মুখে হানাদার বাহিনী শহর ছেড়ে পালিয়ে যাবার পথে মোক্তারপাড়া ব্রিজ সংলগ্ন কৃষি ফার্মের কোনায় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক হানাদারদের মরণপন লড়াই হয়। এ সম্মুখ সমরে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার (আবু খাঁ), মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ এবং মুক্তিযোদ্ধা আবু সিদ্দিক (সাত্তার) শহীদ হন।
দাউদকান্দি উপজেলা সংবাদদাতাঃ আজ ৯ ডিসেম্বর কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সনের ৮ ডিসেম্বর পরাজয় নিশ্চিত জেনে রাতের আধারে লঞ্চযোগে পালিয়ে যায় পাক হানাদার বাহিনী। দিনটি পালন উপলক্ষে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিরর উদ্যোগে আলোচনা সভা আয়োজন করেন। প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব:) সুবিদ আলী ভূঁইয়া এমপি ও স্থায়ী মুক্তিযোদ্ধারা ।  
ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানা পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিল। রক্ত ঝরা সেই উত্তাল দিনে দামাল ছেলেরা দেশকে শত্রুমুক্ত করার দীপ্ত শপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে। নিজ থানা শত্রুমুক্ত করতে একাত্তরের ১৬ অক্টোবর রাতে কাজী আলম, আলতাব ও হাবিবুল্লাহ খান ওই তিন কোম্পানির মুক্তিসেনারা ময়মনসিংহ, ভৈরব রেল লাইনে মাইজহাটি ব্রিজটি ডিনামাইট ছুড়ে বিধ্বস্তসহ টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন করার পর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের রামগোপালপুরের কটিয়াপুরি ব্রিজটি বিধ্বস্ত করতেই ভোর হয়ে যায়।
হাটহাজারী উপজেলা সংবাদদাতা জানান,  হাটহাজারী উপজেলার উত্তরে নাজিরহাট হানাদার মুক্ত দিবস আজ ৯ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে উত্তর চট্টগ্রামের অন্যতম রণাঙ্গন নাজিরহাট পাক হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। ওই দিন ভোরে মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় টিকতে না পেরে পাক হানাদার বাহিনী পিছু হঠে যায়। পাক বাহিনী চলে যাওয়ার পর শুরু হয় মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের আনন্দ উল্লাস।

ফুলবাড়ীয়া (ময়মনসিংহ) উপজেলা সংবাদদাতা  ঃ গতকাল বৃহস্পতিবার ফুলবাড়ীয়া মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি সৌধে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ফুলবাড়ীয়া উপজেলা কমান্ডের উদ্যোগে এতিহাসিক ৮ ডিসেম্বর ফুলবাড়িয়া মুক্ত দিবস পালন করেছেন। সকালে মুক্ত দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি র‌্যালি উপজেলার প্রধান সরক প্রদক্ষিণ শেষে ফুলবাড়িয়া মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সৌধে এসে শেষ হয় ।
 মুক্তদিবস আলোচনা  প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা এড. আলহাজ্ব আব্দুর রাজ্জাক এবং অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার  আবু বকর সিদ্দিক।
সরাইল উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড আয়োজিত নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। ১৯৭১ সালের এই দিনে সরাইল হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়।
সকালে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কার্যালয়ের সামনে মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও উপজেলা আ.লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল হালিম জাতীয় ও সাংগঠনিক পতাকা উত্তোলন করে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ