নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
প্রায় দুই দশক পর্তুগালের ভার বলতে গেলে একা টেনে নিয়েছেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো, এই মৌসুমে ক্লাবে প্রথম একাদশে জায়গা হারিয়েছেন ফিটনেস সমস্যায়। যেটা মূলত এবারের প্রাক মৌসুমে দল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে না থাকারই একটা কারণ। সেই প্রভাব পড়েছে পারফরম্যান্সেও। সিজন শুরুর পূর্বে প্রস্তুতির সময় অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে রোনালদো নিজে এবং ম্যানইউর কোচ এরিক টেন হাগ বারবার বলেছেন ব্যাপারটা ব্যক্তিগত। এসবের রেশ কাটতে না কাটতে নেশন্স লিগে স্পেনের বিপক্ষে ম্যাচে ৫ বারের ব্যালন ডি-অর জয়ীর বিবর্ণ পারফরম্যান্সের পর পর্তুগিজ তারকার দিকে ধেয়ে আসছে সমালোচনার তির। ইতালির সাবেক ফরোয়ার্ড আন্তোনিও কাসানো তো বলেই ফেললেন-অবসর নিয়ে নাও! ছাড়ছে না নিজ দেশের গণমাধ্যমও। এসবের মাঝে মিডিয়াতে এলো চরম এক সত্য যার সন্ধানে সকলে ছিল অনেক দিন। রোনালদো মানুষিক অবসাদে ভুগছেন। জর্ডান পিটারসন নামের কানাডিয়ান এক বিখ্যাত মনোবিদের চিকিৎসাও নিচ্ছেন এই ৩৮ ছুঁই ছুঁই মহাতারকা।
গত এপ্রিলের ১৮ তারিখ রোনালদোর জীবনসঙ্গী জর্জিনা যমজ সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু তাদের কন্যা সন্তানটি বেঁচে গেলেও, একই সময় ভ‚মিষ্ঠ হওয়া পুত্র সন্তানকে বাঁচাতে পারেননি চিকিৎসকরা। এরপর থেকেই চলতে থাকে পর্তুগিজ তারকার গোলক্ষরা। একসময় তা রূপ নেয় বাজে পারফরম্যান্সে। সন্তান হারানোর বেদনা একজন পিতার জন্য সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার। রোনালদোর ক্ষেত্রে সেই যন্ত্রণার প্রভাব পড়েছে মাঠের পারফরম্যান্স। আর এই ব্যক্তিগত ও মাঠের সমস্যা সরাসরি আঘাত করেছে পর্তুগালের ইউরোজয়ী কাপ্তানের মানুষিক ভারসাম্যে। সেখান থেকে পরিত্রাণের জন্যই তিন শরণাপন্ন হয়েছিলেন পিটারসনের। এই কানাডিয়ান মনোবিদের বই পড়েই তার প্রতি আগ্রহী হন রোনালদো। তারপর বাসায় আমন্ত্রণ জানান পিটারসনকে। দুই সপ্তাহ আগে পর্তুগিজ তারকা তার ইনস্টাগ্রামে পিটারসনের সঙ্গে নিজের একটা ছবিও পোস্ট করেন লিখেন, ‘তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ায় ভালো লাগল।’
স¤প্রতি পিয়ার্স মরগাননের শোতে এসে রোনালদোর সঙ্গে নিজের সাক্ষাৎকারের ব্যাপারটি নিশ্চিত করে পিটারসন জানান রোনালদো তার কাছ থেকে থেরাপি নিয়েছেন। এই ৬০ বছর বয়সী মনোবিদ আরও বলেন, ‘ কয়েক মাস ধরে সে নিজের জীবনে কিছু সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। তার আমন্ত্রণে আমি তার বাসায় যাই এবং ঘণ্টা দুয়েক কথা বলি। যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি সে হচ্ছে, সেসব নিয়ে এবং ভবিষ্যতে সে কী চায়, তা নিয়ে আমাদের কথাবার্তা হয়েছে।’
পিটারসনের এই সাক্ষাৎকারের পরে একটা ব্যাপার পরিষ্কার। এক বছর আগেও দূরহ সব গোল করা রোনালদো হঠাৎ করে খেলা ভুলে যাননি বা বয়সের যাতাকলেও পিষ্ঠ নন তিনি, তার সমস্যা মনের। ব্যক্তিগত বলে এই ঝামেলাকে আড়াল করে রাখতে চেয়েছিলেন গণমাধ্যম থেকে।
ব্রাহায় স্পেনের বিপক্ষে গোটা কয়েক গোলের সুযোগ নষ্ট করার পর বিশ্বের ও পর্তুগালের অন্যতম ক্রীড়া সংবাদমাধ্যম ‘আ বোয়া’ যেন বেমালুম ভুলে গেল পর্তুগিজ ফুটবলে রোনালদোর সকল অবদান। তারা সান্তোসকে উদ্দেশ্য করে লিখেছে, ‘রোনালদোকে যত কম খেলাবে, পর্তুগাল তত ভালো খেলবে।’ দেশটির সোনালী প্রজন্ম ২০০৬ সালে ভেঙ্গে যাবার পর, যে রোনালদো নিজের কাঁধে টেনেছেন জাতীয় দলকে, তার সমালোচোনা করেছেন কিছু সমর্থকও। যার উত্তরে রোনালদোর বোন কাতিয়া আভেরিয়া বলেন, ‘কিছু পর্তুগিজ দেখেছি, যারা যে পাতে খাই সেখানেই থুতু দেয়। যারা দেশের পাশে থাকে তাদের প্রশংসা করা উচিৎ। কিন্তু কিছু সমর্থক আছে যারা স্বার্থপর ও অকৃতজ্ঞ।’
এদিকে ইতালির সাবেক ফরোয়ার্ড কাসানো বলেছেন, ‘ক্রিস্টিয়ানোর যদি নিজের কাজটি আর দিতে না পারে, তাহলে অবশ্যই তাকে থামতে হবে। সব খেলাতেই এই নিয়ম। অবসর নাও, যথেষ্ট হয়েছে!’ এইটুকু পর্যন্ত ঠিক ছিল। সমালোচনা হবেই। কিন্তু এরপর এই ইতালিয়ান অপ্রাসঙ্গিকভাবে মেসির একটা ব্যাপার নিয়ে এসে বলেন, ‘মেসি হলো মারাদোনার মতো। আত্মত্যাগ নিয়ে কথা বললে আমাদের মনে রাখতে হবে, লিও মাত্র ১৪ বছর বয়সে আর্জেন্টিনা ছেড়েছিল, শারীরিক অনেক সমস্যা পেরিয়ে সে আজকের অবস্থানে এসেছে।’
এটা সবাই জানে যে ফুটবলের বর্তমান শ্রেষ্ঠত্বে সারা পৃথিবী বিভক্ত দুইভাবে। একদল বলবে রোনালদো সেরা আরেক দল মেসির পক্ষেই বাজি ধরবে। কিন্তু রোনালদোর কঠিন সময়ে এভাবে তাকে টিপ্পুনি কাটাতে বেশ সমালোচিত হচ্ছেন গোটা ক্যারিয়ারে ১৪৯ গোল করা ফরোয়ার্ড কাসানো। একজন গ্রেট ফুটবলার নিজেই সিধান্ত নিবেন কখন তিনি বুট তুলে রাখবেন। সেই সময় ঘটনমূলক সমালোচনা হতেই পারে, কিন্তু টিপ্পুনি কাটা এবং অতীত ভুলে যাওয়া কেবল অশ্রদ্ধার নিদর্শন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।